ফোন পেয়ে বের হয়েছিলেন যুবক, লাশ মিলল খালে
Published: 4th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরে খাল থেকে আবদুর রহিম (৩২) নামের এক নির্মাণশ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজারের রুমঘাটা এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত আবদুর রহিমের বাড়ি ভোলার চরভোতা এলাকায়। চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ান বাজার এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুরে মর্গের সামনে কথা হয় নিহত আবদুর রহিমের বাবা উবাইদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর ছেলের কাছে একটি ফোন আসে। এরপর কাজে যোগ না দিয়ে সে অন্য কোথাও চলে যায়। বেলা ২টার পর থেকে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরে গতকাল লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।
উবাইদুল্লাহ বলেন, আবদুর রহিম সপ্তাহখানেক আগে জানিয়েছিলেন মুঠোফোনে গেমস খেলে একটি আইফোনসহ চার লাখ টাকা জিতেছেন। যাঁরা এই পুরস্কার দেবেন, তাঁরা ৪০ হাজার টাকা চেয়েছেন। তিনি নিজে ছেলেকে ১৭ হাজার টাকা দেন। ছেলে যেখানে কাজ করে, সেখান থেকেও কিছু ঋণ নিয়েছেন। বিদেশ থেকে আসা লোকজনের কাছ থেকে ওই টাকা ও মুঠোফোন বুঝে নেওয়ার কথা বলে ছেলেকে এর মধ্যে একবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকায় ডেকে নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন ছেলেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।
উবাইদুল্লাহর ধারণা টাকা-মুঠোফোন জেতার বিষয়টির সঙ্গে জড়িত জুয়াড়ি কোনো চক্র তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। জুয়ার চক্রটিই হয়তো তাঁকে হত্যা করেছে।’
আজ সকালে হাসপাতালের মর্গের সামনে উপস্থিত হন আবদুর রহিম যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন এর কর্মকর্তা মো.
লাশের সুরতহাল তৈরি করেন কোতোয়ালি থানার এসআই বাহার মিয়া। হাসপাতালের মর্গের সামনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সুরতহালে শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবার এসে লাশ শনাক্ত করেছে‘। কেন, কী কারণে তাঁকে খুন করা হয়েছে; নাকি মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনোকিছু রয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। যাঁরা মুঠোফোনে আবদুর রহিমের কাছ থেকে পুরস্কারের কথা বলে টাকা নিয়েছেন, তাঁদেরও বের করার চেষ্টা চলছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
অবৈধভাবে খাল দখল: এক কিলোমিটারেই ১১ ভবন, ৭০ দোকান
লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে খাল দখলের যেন মহোৎসব চলছে। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খাল ইতিমধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রতিদিনই খালের দুই পাড় ভরাট করে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
জেলার কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজার এলাকায় জারিরদোনা খালের এক কিলোমিটার জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১১টি বহুতল ভবন ও ৭০টির মতো দোকানপাট। নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি বক্স কালভার্ট। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নাকের ডগায় খাল দখল করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এতে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং দখল করেই যাচ্ছে।
এদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ৮০ জন দখলবাজের তালিকা তৈরি করে তাদের দখলে থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব, আক্তার হোসেন ও এলাকাবাসী আজাদ উদ্দিন ও আব্দুর রহমান জানান, উপজেলার চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজে এই খালের পানি ব্যবহার করা হয়। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানির সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমেও পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের দুই পাড়ে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রতিদিনই অবৈধভাবে গড়ে উঠছে কোনো না কোনো স্থাপনা। পাউবোর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলে এসব অবৈধ দখল। কয়েক দিন পরপর দখলদারদের হাত থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় প্রশাসন। কিন্তু উচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও দখল হয়ে যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাজিরহাট বাজারের উত্তর অংশের ১০০ মিটারের মধ্যে ‘হাজী মোতাহের হোসেন সুপারমার্কেট, আল মোস্তফা মঞ্জিল নামে চারতলাসহ অন্তত ১১টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় প্রায় ৭০টি টিনশেড দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য মতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে।
কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হুসাইন বলেন, “এরই মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদেরকে নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন সাড়া দেয়নি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তালিকাভূক্ত ৮০ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানসহ শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে রহমতখালী খালের লক্ষ্মীপুর পৌরসভা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা পানি, আবর্জনা আর সংকীর্ণতায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে খালটি। দুই পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান ও বাড়িঘরসহ অবৈধ স্থাপনা। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা চলছে বহাল তবিয়তে। এতে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ জমে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি। এর ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে আর দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের। একই অবস্থা ডাকাতিয়া নদীতেও।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমতখালী খাল ও ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খালই এখন মৃতপ্রায়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব খাল ও নদীর অস্তিত্ব ছিল।
লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী মাহীর আসহাব বলেন, “রহমতখালী খাল প্রায় ২০০ ফুট চওড়া ছিল। দখলের কারণে তা এখন মাত্র ৩০-৪০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভার বেশির ভাগ বর্জ্যই এখন এই খালে যাচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।”
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুল জামাল বলেন, “খাল দখলে কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। এরপর উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।”
ঢাকা/লিটন/এস