Samakal:
2025-11-03@07:37:39 GMT

শিশুরা কোথায় নিরাপদ?

Published: 4th, May 2025 GMT

শিশুরা কোথায় নিরাপদ?

নারী ও শিশু ধর্ষণ একটি নৈতিক অবক্ষয়জনিত সামাজিক অপরাধ। এরূপ বেদনাদায়ক সংবাদ গণমাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় প্রচারিত হচ্ছে। মাগুরার আছিয়া নামে ৮ বছরের কন্যাশিশুকে বাঁচানো গেল না। দেশের সব গণমাধ্যম নির্মম এই সংবাদটি প্রচার করেছে। আছিয়া বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। বোনের স্বামীর সহায়তায় শ্বশুর হিটু শেখ আছিয়াকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি সেই পাষণ্ড। ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার চেষ্টা করে। অচেতন অবস্থায় মাগুরা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যায়ক্রমে ফরিদপুর মেডিকেল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ সংকটাপন্ন অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ৮ বছরের কন্যাশিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জীবন ও জগৎ দেখার আগেই নিষ্পাপ একটি শিশুটির জীবনাবসান হয়।

শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নারী নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসন্ধানক্রমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ধর্ষণ সম্পর্কিত ভয়ানক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদনে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে ৬ হাজার ৩০৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জন ১৮ বছরের কম বয়সী। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার ১০৭ জন, যার মধ্যে ৬৬ জন শিশু।

দেশের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষণ একটি চিহ্নিত সামাজিক অপরাধ। ধর্ষণ ও ধর্ষণের শাস্তির বিধানাবলি উল্লেখ আছে ১৮৬০ সালের ‘দণ্ডবিধি’র ৩৭৫ নম্বর ধারায়। তা ছাড়া বাংলাদেশে যৌন নিপীড়নমূলক আইন হচ্ছে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০৩ সালে সংশোধিত)’। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ নম্বর ধারায় ধর্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে– ‘যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।’

ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনে শাস্তির বিধান অত্যন্ত কঠিন। আইনের বিধানমতে– কেউ ধর্ষণের শিকার, ভিকটিম মারা গেলে, দলগত ধর্ষণের শিকার ও ধর্ষণের চেষ্টার জন্য পৃথক শাস্তির বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান হচ্ছে– মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০-৫ বছর সাজা ইত্যাদি। দেশে ধর্ষণের অভিযোগে অনেক মামলা হয়। কিন্তু দায়েরকৃত মামলা যথাসময়ে সম্পন্ন হয় না। সাক্ষীর অনুপস্থিতি, বিলম্বে প্রতিবেদন পেশ, বাদীর সময় প্রার্থনাসহ বিবিধ কারণে বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। ফলে ধর্ষণের শাস্তির গতি খুবই মন্থর।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ অন্যতম সামাজিক ব্যাধি। ধর্ষণের শিকার শুধু কন্যাশিশু নয়, ছেলে শিশুরাও। শিশুদের প্রতি বর্বর যৌনাচরণ বর্তমান সমাজের একটি নগ্ন রূপ। আতঙ্কের বিষয়, বেশির ভাগ শিশু যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে পরিচিতজনের হাতেই। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক নিবন্ধ অনুযায়ী, প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনকারী শিশুর পরিচিত ও নিকটাত্মীয়। শিশুদের প্রতি পুরুষদের যৌন ইচ্ছা অনুভূত হচ্ছে কেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এরূপ পুরুষরা ‘পিডোফাইল’ হিসেবে অভিহিত। পিডোফাইলদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে শিশুদের সুরক্ষায় অধিকতর সতর্ক হতে হবে।

ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য মানবাচরণ। দেশে যৌনবাদের উত্থানে বিব্রত গোটা সমাজ ব্যবস্থা। কুরুচিপূর্ণ মানুষ প্রবৃত্তির তাড়নায় অশ্লীল পথ অবলম্বন করছে। আজ নারী, কিশোরী, কন্যাশিশু এমনকি ছেলেশিশুও যৌন নিপীড়কদের শিকার হচ্ছে। ধর্ষকরা সমাজের বর্ণচোরা। এসব হীনচরিত্রের ব্যক্তি সমাজ এবং সভ্যতার প্রতি আনুগত্যশীল নয়। তারা সমাজের অগ্রযাত্রা ব্যাহত ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে। তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। পরিবার, বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা জোরদার করতে হবে। যে কোনো নারীর শ্লীলতাহানি ও নিষ্পাপ শিশুর প্রতি বর্বরতায় গোটা সমাজ লজ্জিত হয়। এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ব্যক্তিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। সমাজে বসবাসকারী সবার প্রতি শোভন আচরণ এবং পারস্পরিক আস্থা জোরদার হোক।

মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ: অধ্যক্ষ, জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি, ঢাকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ