ঢাকায় এয়ার পিউরিফায়ারের মতো স্বপ্নবিলাসী প্রকল্প কেন
Published: 5th, May 2025 GMT
ঢাকার বায়ুদূষণের কথা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পরিবেশ উপদেষ্টা বায়ুদূষণের ৩০ শতাংশ দায় পাশের দেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হ্যাঁ! বিভিন্ন গবেষণায় এ দাবির সত্যতা এসেছে। কিন্তু তাই বলে কি আমরা বাকি ৭০ শতাংশ নিয়ে কাজ করব না?
সেই কাজ করতে গিয়েই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়ে এসেছে এক কুইক ফিক্স প্রজেক্ট। তারা ঢাকা শহরে ৫০টি এয়ারপিউরিফায়ার (যাকে বলে স্মগ টাওয়ার) বসিয়ে বাতাস ঠিক করবে।
বলা হচ্ছে, একেকটি পিউরিফায়ার ১০০টি গাছের সমান বাতাস পরিষ্কার করতে পারে। তা–ই যদি হয়, তাহলে এই বিশাল যজ্ঞ না করে পাঁচ হাজার গাছ ঢাকা শহরে লাগানো কি খুব কষ্টের কাজ?
ঢাকার দূষণ কোনো পৃষ্ঠের ধুলো নয়, বরং গভীর কাঠামোগত সমস্যা। পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ৫৮ শতাংশ পিএম ২.
এখন হিসাব করে দেখি পিউরিফায়ার আমাদের কী কাজে লাগবে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পিউরিফায়ার ঘণ্টায় ৩০ হাজার ঘনমিটার বাতাস পরিষ্কার করতে পারে, যা ২৪ ঘণ্টায় করে ৭ দশমিক ২ লাখ ঘনমিটার। ১ বর্গকিলোমিটার এলাকার বাতাসের আয়তন (১০ মিটার উচ্চতা ধরে) হচ্ছে ১ কোটি ঘনমিটার।
তাহলে ১ বর্গকিলোমিটার এলাকার বাতাস পরিষ্কার করতে সময় লাগবে ১৪ দিন। ঢাকার আয়তন ৩০৬ বর্গকিলোমিটার হলে প্রতিদিন এই শহরের বাতাস পরিষ্কার করতে প্রয়োজন≈৪ হাজার ২৫০টি পিউরিফায়ার।
৪ হাজার ২৫০টি এয়ার পিউরিফায়ার দিয়ে যে পরিমাণ বাতাস পরিষ্কার করা যাবে, মাত্র ৪ লাখ ২৫ হাজার দেশীয় ফলের গাছ (ফুল বা বিদেশি গাছ নয়) লাগিয়েই সেটা করা সম্ভব। বাতাস বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বছরে যে খরচ, তা দিয়েই ঢাকায় এই পরিমাণ গাছ লাগানো সম্ভব। ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করে, সেগুলো পুনঃখনন করে চারপাশে প্রচুর গাছ লাগানো যায়। এর জন্য দরকার একটা সমন্বিত পরিকল্পনা।প্রতিটি পিউরিফায়ারের আনুমানিক দাম এক লাখ মার্কিন ডলার। তাহলে ঢাকার বাতাস পরিষ্কার করতে পিউরিফায়ার কিনতে খরচ হবে ৪২৫ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, সরকার মাত্র ৫০টি পিউরিফায়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মোট চাহিদার ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
একটি পিউরিফায়ার ২৪ ঘণ্টা চালানোর জন্য দরকার ১৫০ থেকে ২৫০ ওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ। সেই হিসাবে বার্ষিক খরচ হবে ১ হাজার ৩১৪ থেকে ২ হাজার ১৯০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। এ হিসাবে ৪ হাজার ২৫০টি পিউরিফায়ারের জন্য বছরে খরচ হবে ৫ দশমিক ৫৮ থেকে ৯ দশমিক ৩১ মিলিয়ন কিলোওয়াট/ঘণ্টা। একটি বাংলাদেশি পরিবার বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এই প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে ২০ থেকে ৩০ হাজার পরিবারের সমান বিদ্যুৎ খরচ হবে এর পেছনে।
পিউরিফায়ারের রক্ষণাবেক্ষণকাজও অত্যন্ত সংবেদনশীল। ধুলোয় ফিল্টার দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়, বর্ষা ও বন্যায় ক্ষতি হয়, বিদ্যুৎ–বিভ্রাট সমস্যা করে, নিয়মিত পরিষেবা ও কারিগরি সাপোর্ট প্রয়োজন। এ ছাড়া ঢাকায় যেখানে ম্যানহোলের ঢাকনা, বৈদ্যুতিক তার পর্যন্ত চুরি হয়; সেখানে একটি পিউরিফায়ারে থাকে দামি ধাতু ও ইলেকট্রনিক অংশ, সহজে বিক্রয়যোগ্য ফিল্টার ও খোলা তার। চীনে প্রতি ২ মিলিয়ন ডলারের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ধরা হয় প্রতিবছর ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশে এর খরচ আরও বেশি হবে বলেই ধারণা করা যায়। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যে কোম্পানি পাবে, তাদের লাভের অঙ্কটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে।
আরও একটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। বাতাসের প্রবাহ সর্বদা চলমান। মাত্র ২ মিটার/সেকেন্ড গতির বাতাস কয়েক মিনিটে দূষিত বাতাস ছড়িয়ে দিতে পারে। দিল্লির ২০১৯ সালের পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) বলেছে, এ ধরনের পিউরিফায়ারের প্রভাব ‘অতি সামান্য থেকে নেই বললেই চলে’। দিল্লির স্মগ টাওয়ার প্রকল্পে ২০ কোটি রুপি (২.৪ মিলিয়ন ডলার) খরচ হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি ছিল, ১ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে দূষণ ৫০ শতাংশ কমাবে। কিন্তু এক বছরের মধ্যে সিপিসিবি রিপোর্ট করে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি নেই। দূষণ কমানোর প্রভাব কয়েক শ মিটারের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। উপরন্তু করতে হয় ফিল্টার ব্লক। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিদ্যুৎ ও রক্ষণাবেক্ষণের বিশাল খরচ।
বিশ্বে বেইজিং হচ্ছে বায়ুদূষণ রোধের জীবন্ত উদাহরণ। তারা কয়লাভিত্তিক শিল্প স্থানান্তর করেছে, জীবাশ্ম জ্বালানিকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর করেছে, গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নত করেছে এবং কঠোরভাবে নির্গমন মানদণ্ড প্রয়োগ করেছে। ৫ বছরে তারা পিএম ২.৫ হ্রাস করেছে ৩৫ শতাংশ। (ইউএনইপি, ২০২১)। এ জন্য বেইজিংকে কোনো পিউরিফায়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়নি।
আমাদের দরকার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, বৈদ্যুতিক ও গণপরিপরিবহন বাড়ানো, বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ, নির্মাণ প্রকল্পের ধুলো নিয়ন্ত্রণ, গাছ লাগানো ও সবুজ এলাকা সম্প্রসারণ, স্কুল ও হাসপাতালে এইচইপিএ ফিল্টার বসানো, শিল্প ও আবাসিক এলাকা আলাদা করা, জনসচেতনতা ও বায়ু পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
৪ হাজার ২৫০টি এয়ার পিউরিফায়ার দিয়ে যে পরিমাণ বাতাস পরিষ্কার করা যাবে, মাত্র ৪ লাখ ২৫ হাজার দেশীয় ফলের গাছ (ফুল বা বিদেশি গাছ নয়) লাগিয়েই সেটা করা সম্ভব। বাতাস বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বছরে যে খরচ, তা দিয়েই ঢাকায় এই পরিমাণ গাছ লাগানো সম্ভব। ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করে, সেগুলো পুনঃখনন করে চারপাশে প্রচুর গাছ লাগানো যায়। এর জন্য দরকার একটা সমন্বিত পরিকল্পনা।
বিগত সরকারের আমলে সিটি করপোরেশন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সৌরবিদ্যুৎ–চালিত ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি, ফুটওভার ব্রিজে এস্কেলেটর বসানোর মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিয়েছিল। সব জিনিস এখন নষ্ট হয়ে বেকার পড়ে আছে। আর আমরা ঋণের সুদ ঠিকই শোধ করে যাচ্ছি। ঢাকার জন্য দরকার একটা মানবিক নীতি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সেটা আশা করছিলাম। কিন্তু পপুলিস্ট প্রকল্প নিয়ে তারা নিজেদের যোগ্যতাকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।
সুবাইল বিন আলম, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট
মার্জিয়া মিথিলা, সাস্টেইনেবিলিটি প্রফেশনাল (সাউথ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব ত স পর ষ ক র করত প রকল প পর ম ণ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় এয়ার পিউরিফায়ারের মতো স্বপ্নবিলাসী প্রকল্প কেন
ঢাকার বায়ুদূষণের কথা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পরিবেশ উপদেষ্টা বায়ুদূষণের ৩০ শতাংশ দায় পাশের দেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হ্যাঁ! বিভিন্ন গবেষণায় এ দাবির সত্যতা এসেছে। কিন্তু তাই বলে কি আমরা বাকি ৭০ শতাংশ নিয়ে কাজ করব না?
সেই কাজ করতে গিয়েই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়ে এসেছে এক কুইক ফিক্স প্রজেক্ট। তারা ঢাকা শহরে ৫০টি এয়ারপিউরিফায়ার (যাকে বলে স্মগ টাওয়ার) বসিয়ে বাতাস ঠিক করবে।
বলা হচ্ছে, একেকটি পিউরিফায়ার ১০০টি গাছের সমান বাতাস পরিষ্কার করতে পারে। তা–ই যদি হয়, তাহলে এই বিশাল যজ্ঞ না করে পাঁচ হাজার গাছ ঢাকা শহরে লাগানো কি খুব কষ্টের কাজ?
ঢাকার দূষণ কোনো পৃষ্ঠের ধুলো নয়, বরং গভীর কাঠামোগত সমস্যা। পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ৫৮ শতাংশ পিএম ২.৫ (অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান) আসে ইটভাটা থেকে, ১৮ শতাংশ আসে যানবাহন থেকে, ১০ শতাংশ আসে নির্মাণকাজের ধুলো থেকে এবং ১৪ শতাংশ আসে বর্জ্য পোড়ানো, জৈব জ্বালানি ও শিল্প থেকে। এই দূষণ সার্বক্ষণিক তৈরি হচ্ছে।
এখন হিসাব করে দেখি পিউরিফায়ার আমাদের কী কাজে লাগবে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পিউরিফায়ার ঘণ্টায় ৩০ হাজার ঘনমিটার বাতাস পরিষ্কার করতে পারে, যা ২৪ ঘণ্টায় করে ৭ দশমিক ২ লাখ ঘনমিটার। ১ বর্গকিলোমিটার এলাকার বাতাসের আয়তন (১০ মিটার উচ্চতা ধরে) হচ্ছে ১ কোটি ঘনমিটার।
তাহলে ১ বর্গকিলোমিটার এলাকার বাতাস পরিষ্কার করতে সময় লাগবে ১৪ দিন। ঢাকার আয়তন ৩০৬ বর্গকিলোমিটার হলে প্রতিদিন এই শহরের বাতাস পরিষ্কার করতে প্রয়োজন≈৪ হাজার ২৫০টি পিউরিফায়ার।
৪ হাজার ২৫০টি এয়ার পিউরিফায়ার দিয়ে যে পরিমাণ বাতাস পরিষ্কার করা যাবে, মাত্র ৪ লাখ ২৫ হাজার দেশীয় ফলের গাছ (ফুল বা বিদেশি গাছ নয়) লাগিয়েই সেটা করা সম্ভব। বাতাস বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বছরে যে খরচ, তা দিয়েই ঢাকায় এই পরিমাণ গাছ লাগানো সম্ভব। ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করে, সেগুলো পুনঃখনন করে চারপাশে প্রচুর গাছ লাগানো যায়। এর জন্য দরকার একটা সমন্বিত পরিকল্পনা।প্রতিটি পিউরিফায়ারের আনুমানিক দাম এক লাখ মার্কিন ডলার। তাহলে ঢাকার বাতাস পরিষ্কার করতে পিউরিফায়ার কিনতে খরচ হবে ৪২৫ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, সরকার মাত্র ৫০টি পিউরিফায়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মোট চাহিদার ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
একটি পিউরিফায়ার ২৪ ঘণ্টা চালানোর জন্য দরকার ১৫০ থেকে ২৫০ ওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ। সেই হিসাবে বার্ষিক খরচ হবে ১ হাজার ৩১৪ থেকে ২ হাজার ১৯০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। এ হিসাবে ৪ হাজার ২৫০টি পিউরিফায়ারের জন্য বছরে খরচ হবে ৫ দশমিক ৫৮ থেকে ৯ দশমিক ৩১ মিলিয়ন কিলোওয়াট/ঘণ্টা। একটি বাংলাদেশি পরিবার বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এই প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে ২০ থেকে ৩০ হাজার পরিবারের সমান বিদ্যুৎ খরচ হবে এর পেছনে।
পিউরিফায়ারের রক্ষণাবেক্ষণকাজও অত্যন্ত সংবেদনশীল। ধুলোয় ফিল্টার দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়, বর্ষা ও বন্যায় ক্ষতি হয়, বিদ্যুৎ–বিভ্রাট সমস্যা করে, নিয়মিত পরিষেবা ও কারিগরি সাপোর্ট প্রয়োজন। এ ছাড়া ঢাকায় যেখানে ম্যানহোলের ঢাকনা, বৈদ্যুতিক তার পর্যন্ত চুরি হয়; সেখানে একটি পিউরিফায়ারে থাকে দামি ধাতু ও ইলেকট্রনিক অংশ, সহজে বিক্রয়যোগ্য ফিল্টার ও খোলা তার। চীনে প্রতি ২ মিলিয়ন ডলারের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ধরা হয় প্রতিবছর ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশে এর খরচ আরও বেশি হবে বলেই ধারণা করা যায়। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যে কোম্পানি পাবে, তাদের লাভের অঙ্কটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে।
আরও একটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। বাতাসের প্রবাহ সর্বদা চলমান। মাত্র ২ মিটার/সেকেন্ড গতির বাতাস কয়েক মিনিটে দূষিত বাতাস ছড়িয়ে দিতে পারে। দিল্লির ২০১৯ সালের পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) বলেছে, এ ধরনের পিউরিফায়ারের প্রভাব ‘অতি সামান্য থেকে নেই বললেই চলে’। দিল্লির স্মগ টাওয়ার প্রকল্পে ২০ কোটি রুপি (২.৪ মিলিয়ন ডলার) খরচ হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি ছিল, ১ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে দূষণ ৫০ শতাংশ কমাবে। কিন্তু এক বছরের মধ্যে সিপিসিবি রিপোর্ট করে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি নেই। দূষণ কমানোর প্রভাব কয়েক শ মিটারের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। উপরন্তু করতে হয় ফিল্টার ব্লক। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিদ্যুৎ ও রক্ষণাবেক্ষণের বিশাল খরচ।
বিশ্বে বেইজিং হচ্ছে বায়ুদূষণ রোধের জীবন্ত উদাহরণ। তারা কয়লাভিত্তিক শিল্প স্থানান্তর করেছে, জীবাশ্ম জ্বালানিকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর করেছে, গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নত করেছে এবং কঠোরভাবে নির্গমন মানদণ্ড প্রয়োগ করেছে। ৫ বছরে তারা পিএম ২.৫ হ্রাস করেছে ৩৫ শতাংশ। (ইউএনইপি, ২০২১)। এ জন্য বেইজিংকে কোনো পিউরিফায়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়নি।
আমাদের দরকার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, বৈদ্যুতিক ও গণপরিপরিবহন বাড়ানো, বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ, নির্মাণ প্রকল্পের ধুলো নিয়ন্ত্রণ, গাছ লাগানো ও সবুজ এলাকা সম্প্রসারণ, স্কুল ও হাসপাতালে এইচইপিএ ফিল্টার বসানো, শিল্প ও আবাসিক এলাকা আলাদা করা, জনসচেতনতা ও বায়ু পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
৪ হাজার ২৫০টি এয়ার পিউরিফায়ার দিয়ে যে পরিমাণ বাতাস পরিষ্কার করা যাবে, মাত্র ৪ লাখ ২৫ হাজার দেশীয় ফলের গাছ (ফুল বা বিদেশি গাছ নয়) লাগিয়েই সেটা করা সম্ভব। বাতাস বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বছরে যে খরচ, তা দিয়েই ঢাকায় এই পরিমাণ গাছ লাগানো সম্ভব। ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করে, সেগুলো পুনঃখনন করে চারপাশে প্রচুর গাছ লাগানো যায়। এর জন্য দরকার একটা সমন্বিত পরিকল্পনা।
বিগত সরকারের আমলে সিটি করপোরেশন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সৌরবিদ্যুৎ–চালিত ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি, ফুটওভার ব্রিজে এস্কেলেটর বসানোর মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিয়েছিল। সব জিনিস এখন নষ্ট হয়ে বেকার পড়ে আছে। আর আমরা ঋণের সুদ ঠিকই শোধ করে যাচ্ছি। ঢাকার জন্য দরকার একটা মানবিক নীতি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সেটা আশা করছিলাম। কিন্তু পপুলিস্ট প্রকল্প নিয়ে তারা নিজেদের যোগ্যতাকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।
সুবাইল বিন আলম, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট
মার্জিয়া মিথিলা, সাস্টেইনেবিলিটি প্রফেশনাল (সাউথ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র)