মাঠ প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। ভাতা দেওয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এ মন্ত্রণালয়ের (বিধি অধিশাখা) যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেলকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়, মাঠ প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য চার সদস্য হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার যুগ্ম সচিব, সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অধিশাখা ৩–এর যুগ্ম সচিব, বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিশাখার যুগ্ম সচিব এবং প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব। গত ২৯ এপ্রিল এ কমিটি গঠন করা হয়। ১৪ মে কমিটি তাদের প্রথম বৈঠক করবে।

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া তিন দিনের সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাতা দেওয়ার প্রস্তাবটি দেন গোপালগঞ্জের ডিসি মুহম্মদ কামরুজ্জামান। তাঁর প্রস্তাবের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ কমিটি করে দেয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মাঠ প্রশাসনে বর্তমানে মোবাইল ভাতা পেয়ে থাকেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি), ট্রেজারি অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সরকারি টেলিফোন ও ইন্টারনেট নীতিমালা ২০১৮–এর আলোকে উল্লিখিত কর্মকর্তারা মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান।

মাঠ প্রশাসনের আর কোন কোন কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন, জানতে চাইলে গোপালগঞ্জের ডিসি মুহম্মদ কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় যাঁরা এ ভাতা পান, তাঁদের বাইরে মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জন্য এ প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনলাইনে কাজের প্রবণতা বেড়েছে। তাঁদের কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা করতে তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রত্যেক ক্যাডারে কিছু পদ আছে, যাঁরা প্রতিনিয়ত সরকারের কাছে মাঠ প্রশাসনের প্রতিবেদন পাঠান। প্রাসঙ্গিকতা থাকায় তিনি এমন প্রস্তাব দেন। তবে ঢালাওভাবে সবাইকে দেওয়ার কথা বলেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা পর্যায়ে সরকারের অন্তত ২৮টি বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি কার্যালয়, পরিসংখ্যান, প্রকৌশলীর কার্যালয়। মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা কর্মরত, শুধু তাঁদের ভাতা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রথম সভায় মাঠ প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা হবে। কোন কোন কর্মকর্তাকে ভাতা দেওয়া হবে এবং ভাতার পরিমাণ কত হবে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত দ র য় র কর মকর ত কর মকর ত ক প রস ত ব পর য য় প রথম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ