বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণসহ মারধর করে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় হিরো আলমসহ আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বগুড়ার পিবিআই পুলিশ সুপারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল নং-১ এর আদালতে গত রোববার এ মামলা করেন ভুক্তভোগী এক নারী। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.

আনোয়ারুল হক, বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে তদন্তের জন্য আদেশ দেন। 

মামলায় আসামিরা হলেন- বগুড়ার এরুলিয়া পশ্চিমপাড়ার মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম, তার মেয়ে আলো বেগম, ব্যক্তিগত সহকারী আল আমিন, মালেক ও তার স্ত্রী জেরিন এবং আহসান হাবাবী সেলিম। 

মামলায় বাদীর অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদীকে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন হিরো আলম। এরপর তিনি ওই বাদীকে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ করেন। মৌলভী ডেকে বাদীকে হিরো আলম ‘বিয়ে’ করে বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করতে থাকেন। এরই মধ্যে বাদীর কাছ থেকে হিরো আলম ১৫ লাখ টাকা ধার নেন। পরে বাদী হিরো আলমকে বিয়ের কাবিনের জন্য চাপ দিলে গত ১৮ এপ্রিল বগুড়ার বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু বাদী সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হলে অন্যান্য আসামিরা গত ২১ এপ্রিল তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়। ওই দিন তাকে বগুড়া শহরে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ এপ্রিল ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চিকিৎসা নেন মর্মে অভিযোগে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে হিরো আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি ওই নারীর সঙ্গে বিয়ে বা ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ওই নারীকে চিনি না। আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ র আলম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ডলারের দরে নমনীয়তা দেখায়নি সরকার, আইএমএফের সঙ্গে আজ আবার বৈঠক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক হবে। আজও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে আগামী ১৯ মে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সুরাহা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। গতকাল এ নিয়ে আবার ভার্চুয়াল সভা হয়। সোমবারের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহাম্মদ যুক্ত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা ছাড় নিয়ে আলোচনার সময়ও আইএমএফের কিস্তির বিষয়ে সমাধানের তাগিদ দেয় সংস্থাটি। গত রোববার ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভায় সংস্থার দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সময় এডিবি আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করা হবে না। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো করতে চাই না। আইএমএফের কিস্তি ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই, তাও নিজেদের মতো করে বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দু’জনেই সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না। তবে সব শর্ত মানা হবে না।

আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য সব শর্ত মেনে নিলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিকের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে আসছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ