শতভাগ বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। 

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা.

এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। 

কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সংস্কার প্রতিবেদনে সরকারি হাসপাতালে সেবা বিকেল ৫টা পর্যন্ত করা, বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল তৈরি, স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য সার্ভিস গঠনসহ ৩২টি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ কমিশনের প্রতিপাদ্য– স্বাস্থ্য সবার অধিকার। পরে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্কার কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ বিনামূল্যে দেওয়ার প্রস্তাব
সুপারিশে বলা হয়, দেশে ন্যায্য ও আর্থিকভাবে সুরক্ষিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ বিনামূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এর আওতায় মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, টিকাদান, সাধারণ রোগের চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধ ও সেবা সরকারি হাসপাতালে প্রদান করা হবে। এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ ও অস্ত্রোপচার সেবা রোগীরা বিনামূল্যে পাবেন। এটা চালু হলে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে ব্যক্তি পর্যায়ে খরচ কমবে। এই মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের চাহিদা অনুযায়ী রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, যত্নসহ বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনও কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তবে তা অনেকটা কাগজ-কলমে। ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালে তা পাওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাযন্ত্র বছরের পর বছর অকেজো থাকে, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করা হয়। কমিশনের প্রস্তাব শতভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার। এজন রোগী হাসপতালে ভর্তি হলে নিজের পকেট থেকে যাতে কোনো অর্থ খরচ করতে না হয়। 

মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এখন যার যে রকম, পরিমাণ ও মানের প্রয়োজন তা পাচ্ছে না। কারণ অর্থের সংকট। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করার জন্য জিডিপির ৫ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্যের জন্য দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সামাজিক স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে যারা ফর্মাল সেক্টরে কাজ করেন, তারা তাদের সেবার ব্যয় কিছুটা নির্বাহ করবেন।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি
কমিশনের মুখ্য সুপারিশে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, এই সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে একটি পৃথক ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। এ আইন বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তির ব্যাপারে নাগরিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রের কর্তব্য নির্ধারণ করবে। 
কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, “আট হাজারের বেশি মানুষের অংশগ্রহণে জনমত জরিপ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। আমরা যতই বলি– স্বাস্থ্য সবার অধিকার; আসলে এর আইনি ভিত্তি নেই। তাই সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি আমরা। এ জন্য ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ করতে হবে।” 
আজাদ খান বলেন, ‘এটি বর্তমানের সমপরিমাণ বাজেটে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।’
 
সরকারি হাসপাতালে সেবা বিকেল ৫টা পর্যন্ত করার সুপারিশ

স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, প্রাইভেট চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা কমানো এবং জনগণের ব্যয় সাশ্রয় নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের অফিস সময়সীমা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রস্তাবিত সময়সীমা সপ্তাহে পাঁচ দিন কার্যকর থাকবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়সীমা আউটডোর বিভাগ, ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবের জন্য প্রযোজ্য হবে, যাতে কর্মজীবী মানুষ কর্মঘণ্টার বাইরেও চিকিৎসা নিতে পারেন। এতে সেবা পাওয়ার জন্য ভিড় ও অপেক্ষার সময় কমে আসবে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা আরও মানুষকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। 
প্রতিবেদনে কেনিয়া ও তানজানিয়ার গবেষণার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সরকারি সেবা সময় বাড়ানোর ফলে ওইসব দেশে প্রাইভেট চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর দক্ষ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিশন প্রস্তাব করেছে একটি স্বতন্ত্র ‘ইমার্জেন্সি হেলথ কার্ড’ চালুর, যা মহামারি, জলবায়ু দুর্যোগ ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে।

চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা
চিকিৎসকদের কাছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি পাঠিয়ে সরাসরি ওষুধের প্রচার চালানো বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এখন থেকে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ডাক বা ই-মেইলের মাধ্যমে চিকিৎসকদের কাছে পণ্যের তথ্য পাঠাতে পারবে। সরাসরি সাক্ষাৎ করে কোনো ধরনের প্রচারণা চালানো যাবে না। 
এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের নিরপেক্ষতার পাশাপাশি রোগীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে কমিশন। কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসক-ফার্মাসিউটিক্যাল-সংক্রান্ত নীতি সম্পর্কিত সুপারিশ করেছে কমিশন, ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। 

অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত
সুপারিশে বলা হয়, সব নাগরিককে প্রয়োজনের ভিত্তিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিনামূল্যে (যথা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে এবং অতি দরিদ্রের ক্ষেত্রে) বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য সরকারি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সংগ্রহে কৌশলগত ক্রয় ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। এই ফার্মেসিগুলো জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় পরিচালিত হবে। 

অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর ভ্যাট এবং প্রযোজ্য অন্যান্য শুল্ক ও কর শূন্য হবে। ভিটামিন, মিনারেলস, ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট ও প্রোবায়োটিকসহ স্বাস্থ্য-সম্পূরক ও উচ্চমূল্যের ওষুধের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করতে হবে। এর মাধ্যমে একদিকে জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রাপ্যতা বাড়বে, অন্যদিকে তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসমূলক পণ্যে কর বাড়িয়ে রাজস্ব আয় জোরদার করা যাবে। 

সুপারিশে বলা হয়, জরুরি চিকিৎসাকে একটি বিশেষায়িত ও অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একে স্বীকৃত চিকিৎসা বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো পর্যায়ক্রমে এ বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে, যাতে জরুরি চিকিৎসাসেবার পরিসর ও মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো এবং দুই বছর পরপর এই ওষুধের তালিকা আপডেট করার সুপারিশ করেছে কমিশন। অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের ক্ষেত্রে শুরুর দিকে ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) জেনেরিক নামে লিখতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে ১০০ শতাংশ ওষুধের জেনেরিক নামে লিখতে হবে। 

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল তৈরি
ওষুধশিল্পে পরনির্ভরতা কমাতে ও সুলভ মূল্যে ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দেশেই সব ধরনের ওষুধের কাঁচামাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, ওষুধের ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। দেশীয় ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল তৈরি করতে পারলে ওষুধশিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে। এজন্য কাঁচামাল উৎপাদনে গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি ব্যবস্থার পাশাপাশি নিবন্ধন ও অনুমোদন সহজীকরণ করা।
 
একজন রোগীকে কমপক্ষে ১০ মিনিট দেখা
সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতি রোগীর জন্য গড়ে ১০ মিনিটের পরামর্শ সময় নিশ্চিত করতে হবে, এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেবা প্রদানকারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং সাপ্তাহিকভাবে ব্যবস্থাপত্রে নমুনা যাচাইয়ের পদ্ধতি চালু করতে হবে। অতিদরিদ্র বা যারা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, তারা সব হাসপাতালে বিনামূল্যে সব সেবা পাবেন। 

অ্যাম্বুলেন্স, ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক নেটওয়ার্ক গঠন
সুপারিশে বলা হয়, জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্ক, জাতীয় ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্ক, জাতীয় রক্ত সঞ্চালন নেটওয়ার্ক এবং জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক গঠন করতে হবে। এই পরিষেবাগুলো নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী নিজ নিজ ক্ষেত্রে একটি একীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারাদেশে সংযুক্ত থাকবে এবং পরিচালিত হবে। এতে জনগণ সহজে, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে এই পরিষেবাগুলো পাবেন।
সুপারিশে বলা হয়, সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।

স্বতন্ত্র ‘স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কমিশন স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতি প্রণয়নে সংসদ ও সরকারকে কৌশলগত পরামর্শ দেবে। পাশাপাশি এটি জাতীয় কৌশল, সেবা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মানদণ্ড এবং ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন প্রণয়ন করবে। কমিশন নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যকারিতা, সেবার গুণগত মান ও সার্বিক ব্যয়সাশ্রয় পর্যালোচনা করবে। এর ভিত্তিতে কমিশন বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও সরকারকে উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক মতামত ও দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
এই কমিশন সরাসরি সরকারপ্রধানের কাছে জবাবদিহি করবে। প্রতিবছর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন সংসদে পাঠাবে। পেশাদারি, দক্ষতা ও জবাবদিহিমূলক সেবার মান নিশ্চিত করতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব জনবল নিয়ে প্রশাসনিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত ও পেশাভিত্তিক একটি নতুন সিভিল সার্ভিস-বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন (বিএইচএস) করতে হবে।

কমিশন বলছে, ‘হেলথ সার্ভিসের’ অধীনে ১১টি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থাকবে। এর মধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে একটি করে মোট আটটি এবং ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি করে মোট তিনটি কর্তৃপক্ষ থাকবে। আর হেলথ সার্ভিসের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মুখ্য সচিব পদমর্যাদার একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি হবেন ‘চিফ অব বিএইচএস’। তাঁর অধীনে জনস্বাস্থ্য, ক্লিনিক্যাল সেবা এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা– এই তিনটি প্রধান খাত পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদার তিনজন উপপ্রধান নিযুক্ত হবেন, যাদের নাম হবে ডেপুটি চিফ অব হেলথ বা ডিসিএইচ।
বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসির অধীনে) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়; এর মধ্যে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারও রয়েছে। বেতন কাঠামোও অন্যান্য ক্যাডারের মতো। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য খাত পরিচালনা করা হয়। এই দুই বিভাগের দায়িত্বে থাকেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সেবার বিকেন্দ্রীকরণ
সুপারিশে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করতে হবে। জেলা হাসপাতালগুলোয় বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা চালু করতে হবে, যাতে সেবার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হয়। এতে মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় ইনস্টিটিউটগুলোর ওপর রোগীর চাপ কমবে। ভৌগোলিক কারণে কেউ বিশেষায়িত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন না।
প্রতিটি বিভাগীয় সদরে অন্তত একটি পূর্ণাঙ্গ, সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ও বিশ্বমানের টারশিয়ারি সেবা হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা জটিল ও বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য একটি আঞ্চলিক রেফারেল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

ব্যবস্থাপত্র নিরীক্ষা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ
এই নিরীক্ষার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা চিহ্নিত করে সেবার মান উন্নয়ন ও অর্থ অপচয় রোধ করা যাবে। নিরীক্ষার ফলাফল ব্যবহার করে চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন, অর্থায়ন, পেমেন্ট এবং ক্রয় সিদ্ধান্তে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
কমিশন মনে করে, বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করতে হবে। এতে ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক ব্যবহারে শৃঙ্খলা আসবে। ওষুধের অপব্যবহার ও অতিরিক্ত খরচ রোধ হবে এবং জবাবদিহিমূলক ও ব্যয়সাশ্রয়ী চিকিৎসা সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর র স প র শ কর স প র শ কর ছ ন শ চ ত করত ড য় গনস ট ক ন শ চ ত কর হ স ন বল ন র প রস ত ব ন টওয় র ক স বতন ত র অন য ন য ম হ ম মদ চ ক ৎসক ন ত কর পর য য় ন র ভর পর চ ল র জন য ত কর র র ওপর শতভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

স্লোগানে মুখর বিমানবন্দর থেকে ফিরোজা

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চার মাস পর দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার অবতরণের কথা রয়েছে। দলীয় নেত্রী প্রত্যাবর্তন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা পর্যন্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার বাসভবন গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী অপেক্ষায় রয়েছেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনেকে।

এছাড়াও সড়কের দুই পাশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছেন। দিচ্ছেন নানা স্লোগান।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে রাজধানীর গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজার সামনে সকাল থেকেই জড়ো হতে শুরু করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ‘দেশনেত্রী ফিরছেন—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় স্বস্তি।’ কেউ কেউ মুঠোফোনে ফেসবুক লাইভে আছেন ফিরোজার সামনে থেকে।

রাজনীতির মাঠে খালেদা জিয়ার এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কারও কাছে এটি মাইনাস টু তত্ত্বের ব্যর্থতা, কারও কাছে এটি শুধু একজন নেত্রীর ঘরে ফেরা নয়—একটি রাজনৈতিক বার্তা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ