কক্সবাজার শহরে সাগরতীরের সুগন্ধা পয়েন্টে সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে অবশেষে অভিযান চালিয়েছে দুদক। গতকাল সোমবার দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বাবুর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। পরে তিনি জানান, সরকারি জমি দখলের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সাগরতীরে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ২ একর ৩০ শতাংশ জায়গা দখল করে টিনের ঘেরা দিয়ে প্রায় একশ দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ধারী একটি চক্র এই জমি দখলের জন্য তৈরি করে নিয়েছে ভুয়া খতিয়ান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুদকের আভিযানিক দল সুগন্ধা পয়েন্টে পৌঁছাতেই গেট বন্ধ করে দেয় দখলদাররা। নির্মাণশ্রমিকরা পেছন দিয়ে পালিয়ে যান। প্রায় এক ঘণ্টা পর দুদক সদস্যদের অনুরোধে তালা খুলে তাদের ভেতরে ঢোকার সুযোগ দিলেও গণমাধ্যমের কাউকে ঢুকতে দেয়নি। পরে দুদক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে গণমাধ্যমকর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেন।

গত ৩০ এপ্রিল ‘সুগন্ধা পয়েন্টে সাগরচুরি’ শিরোনামে সমকালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। হুমায়ুন বিন আহমদ বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ৬৪টি পাকা দোকান নির্মাণে লোকজনকে কাজ করতে দেখা গেছে। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সুগন্ধা পয়েন্টে এই হোটেল-মোটেল জোনে গত ৫ আগস্টের পর প্রথমে একটি পক্ষ জায়গা দখল করেছিল। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তাদের তাড়িয়ে দেন। পরে সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্তের পক্ষে হাইকোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞার নোটিশ টানিয়ে আরেকটি পক্ষ নির্মাণকাজ শুরু করে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুনেছি সুগন্ধা পয়েন্টে দুদক অভিযান চালিয়েছে। কয়েক দিন আগে ওই স্থানে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ওবায়দুল হোসাইন এই জমি দখলে নিয়ে নির্মাণকাজ করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে কয়েক বছর ধরে সাগরপারের জমি দখল করে চলেছেন তিনি। এসব নিয়ে গত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে অনেকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এখন তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিএনপির একটি চক্র। ওবায়দুল হোসাইনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলা চালানো এবং বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা আছে। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন কিছুদিন। স্থানীয়রা বলছেন, তাঁর সঙ্গে বিএনপির লোকজন যুক্ত হওয়ায় প্রশাসন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে ওবায়দুল হোসাইনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট

সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। প্রস্তাবে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে মামলা দায়েরের আগেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ–সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ–সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।

বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ