যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রয়াসে। তাঁদের মধ্যে কোনো বিরোধ বা সমস্যা তৈরি হলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা করে সমাধান করা প্রয়োজন। কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) সেই পথে হাঁটছে বলে মনে হয় না।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার তাঁরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় পক্ষপাতমূলকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২২ দফা দাবির বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। মামলা প্রত্যাহার ও রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ২৭ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করে আসছেন।
শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের আগে উপাচার্য অপর এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের এ রকম মুখোমুখি অবস্থান কাম্য নয়।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ঘটনাটি আরও উদ্বেগজনক। দীর্ঘ ৭৪ দিন পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকেরা। তাঁরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু করা যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো.
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা চলে আসছে। কোথাও শিক্ষকেরা ধর্মঘটে আছেন, কোথাও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যেও মতভেদ আছে। উপাচার্য একদিকে, সহ-উপাচার্য আরেক দিকে। এভাবে প্রশাসনে দ্বিধাবিভক্তি থাকলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কারও ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিমতো চলতে পারে না। এগুলো চলতে হবে আইন অনুযায়ী। কোথাও ব্যত্যয় হলে, কারও কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে সেটাও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দিনের জন্য পাঠদান বা পরীক্ষা বন্ধ থাকলে যে বিরাট ক্ষতি, সেটা শিক্ষকদের বুঝতে হবে। কেউ অপরাধ করলে আইনানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সেখানে শাস্তির আগে পাঠদান না করার বিষয়ে শিক্ষকদের ধনুর্ভঙ্গপণ কাম্য নয়। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন।
আমরা চাই না এক দিনের জন্যও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিক্ষক বা প্রশাসনের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র উপ চ র য কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্লোগানে মুখর বিমানবন্দর থেকে ফিরোজা
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চার মাস পর দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার অবতরণের কথা রয়েছে। দলীয় নেত্রী প্রত্যাবর্তন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা পর্যন্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার বাসভবন গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী অপেক্ষায় রয়েছেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনেকে।
এছাড়াও সড়কের দুই পাশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছেন। দিচ্ছেন নানা স্লোগান।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে রাজধানীর গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজার সামনে সকাল থেকেই জড়ো হতে শুরু করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ‘দেশনেত্রী ফিরছেন—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় স্বস্তি।’ কেউ কেউ মুঠোফোনে ফেসবুক লাইভে আছেন ফিরোজার সামনে থেকে।
রাজনীতির মাঠে খালেদা জিয়ার এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কারও কাছে এটি মাইনাস টু তত্ত্বের ব্যর্থতা, কারও কাছে এটি শুধু একজন নেত্রীর ঘরে ফেরা নয়—একটি রাজনৈতিক বার্তা।