আবারও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখল ফেডারেল রিজার্ভ
Published: 8th, May 2025 GMT
আবারও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। যদিও তারা বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির জেরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বা পূর্বাভাস নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে পারবে বা ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার চাপে গতি হারিয়ে ফেলবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। খবর রয়টার্সের
গতকাল বুধবার মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদে সম্মেলনে জেরোম পাওয়েল আরও বলেন, ট্রাম্প শেষমেশ কোনো নীতিতে থাকবেন বা রাজনৈতিক ও আইনি লড়াই শেষে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে—এ সবকিছু নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। সেই সঙ্গে যে নীতি গৃহীত হবে, তার পরিসর, ফলাফল ও মাত্রা নিয়ে এত এত অনিশ্চয়তা আছে যে এই মুহূর্তে মুদ্রানীতি কী হবে, সে বিষয়ে ফেডের পরিষ্কার ধারণা নেই।
এ কথার মধ্য দিয়ে পাওয়েল বুঝিয়ে দিলেন, ট্রাম্পের পাইকারি হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ফেডারেল রিজার্ভকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ এবারও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখায় নীতি সুদহার এখন ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সীমার মধ্যে আছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে সুদহার এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। এর লক্ষ্য হলো মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং একই সঙ্গে বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখা।
গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। এরপর শুরু হয় তোলপাড়। এই শুল্ক কার্যকর হলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। কিন্তু শেষমেশ গত ৯ এপ্রিল এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প। ৯০ দিন পর কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। শঙ্কা আছে, বাণিজ্যনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে মন্দা হতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের ওপর নীতি সুদ হ্রাসের চাপ আছে। এ ছাড়া ফেড যেভাবে স্বাধীন পন্থায় কাজ করে, তা নিয়ে ট্রাম্পেরও আপত্তি আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।
অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে। নীতি সুদহার বাড়ানো হয় মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। নীতি সুদহার বুঝতে হলে রিভার্স রেপো রেটের আলোচনাও সামনে চলে আসবে।
যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য আছে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তারল্য তুলে নেয়। সে জন্যও নির্দিষ্ট সুদের হার থাকে। অর্থ তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হার দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে, তাকে বলা হয় রিভার্স রেপো। সাধারণত নীতি সুদহার বা রেপো রেটের তুলনায় রিভার্স রেপোর সুদহার কম থাকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ
নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।
আরো পড়ুন:
ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু
মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক
কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।