বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখায় বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকার ভাতা প্রদান, সারা দেশে শিল্পায়ন সম্প্রসারণ, মিল-কারখানা স্থাপন এবং পরিকল্পিতভাবে শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে এসব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, যথাযথ নীতিকাঠামো, সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এবং তথ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। স্বচ্ছতা ও প্রোডাকটিভিটি বাড়াতে বিশ্বমানের প্রযুক্তির অনুসরণ করতে হবে।

শুক্রবার (৯ মে) চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী রোডের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন: তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে তরুণ সমাজকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। যৌথভাবে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এই সেমিনারের আয়োজন করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “যে জাতি টেকনোলজিতে পিছিয়ে থাকবে, তারা কখনো সামনে যেতে পারবে না-তা সে কৃষি, সেবা, উৎপাদন কিংবা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেই হোক। যদি স্বচ্ছতা আনতে চান, প্রোডাকটিভিটি বাড়াতে চান, যদি কম্পিটিটিভ হতে চান—তবে প্রযুক্তির বিশ্বমান অনুসরণ করতেই হবে।”

তিনি বলেন, “যেভাবে জিয়াউর রহমান গার্মেন্টস সেক্টরের পথ উন্মোচন করেছিলেন, তেমনি আমরা ১০–১৫টি সেক্টরে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেব। এটি একটি বিশাল ইনসেনটিভ হবে।”

তিনি আরো বলেন, “দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সরকারি আমলাদের কাছে যেতে হবে না। কেউ চাইলে বাড়িতে বসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বিএনপি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যেখানে বিএনপির বাইরের মানুষও এসে কঠিন সত্য তুলে ধরছে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অভিনব দৃষ্টান্ত।”

কর্নেল ইউনিভার্সিটির লেকচারার জামাল উদ্দিন বলেন, “বিএনপির ৩১ দফার বিভিন্ন অংশে কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখন সময় এসেছে বাস্তবভিত্তিক, ফলপ্রসূ ও সময়োপযোগী একটি নীতি প্রণয়নের, যাতে আগামী ১০–১৫ বছর পর দেশের তরুণ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দেন।

তিনি বলেন, “এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির বাইরের শিল্প বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা, যাতে তারা আমাদের নীতি-নির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারেন। আমরা সেরা মানুষের কাছ থেকে শুনতে চাই এবং যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশের জন্য সর্বোত্তম নীতি প্রণয়ন করতে চাই।”

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নীট এলায়েন্সের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

আগামী ১০ মে বিকেএমইএর নির্বাচন ২০২৫-২০২৭ এর মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নীট এলায়েন্স তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বুধবার (৭ মে) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ক্যাফেটেরিয়ায় ‘মিট দ্য প্রেসে’মোহাম্মদ হাতেম ১৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে-

১. আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণে কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও বাস্তবধর্মী নীতি প্রণয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

ক. এইচ.এস কোড এর জটিলতার নিরসন করা 

খ. এফ ও সি-তে কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সকল প্রকার জটিলতা দূর করা 

গ. কম্পোজিট ইউনিটের ক্ষেত্রে আমদানি প্রাপ্যতা ও এর ব্যবহার পদ্ধতি সহজীকরণ করা 

ঘ. বন্ডেড প্রতিষ্ঠান থেকে নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ সরবরাহে জটিলতা দূর করা 

. বন্ড কমিশনারেটে চলমান নানা জটিলতা দূর করণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা 

চ. নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স করতে বাধ্য করা এবং এ কারণে রপ্তানির বাধা দূর করা 

২. বর্তমানে শতভাগ রপ্তানি খাতের কারখানার জন্য ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। কিন্তু রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে নানাভাবে ভ্যাট নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আইন করে রাখা মুসকের নানারকম ফরমের ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। তদুপরি এই সকল ফরমের ব্যবহার না করায় রাস্তাঘাটে রপ্তানিমুখী শিল্পের মালামাল পরিবহনে নানা জটিলতা তৈরী করে রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

৩. বর্তমানে ট্যাক্সেশন পদ্ধতিটি কোনভাবেই বিনিয়োগ ও ব্যাবসা বান্ধব নয় এবং ট্যাক্সেশনের মূল চেতনা ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। এ পদ্ধতির সংস্কারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি সহজ করা ও ট্যাক্সের হার দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থীর রাখার জন্য এনবিআর -এর সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

৪. গতিশীল উৎপাদন ব্যবস্থা ও লিড টাইম নিশ্চিত করণে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় সুতা আমদানি চালু করার লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌক্তিক আলোচনার পরিবেশ তৈরী করবো। 

৫. ব্যংকিং খাতের নানা প্রকার জটিলতা দূর করণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রপ্তানিবান্ধব নীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখা। 

৬. ইউরোপ-আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমাতে বিশ্বের অপ্রচলিত বাজারে সম্ভবনা অনুসন্ধান ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাজার বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিপননে গতিশীলতা আনয়নে চুক্তি সাক্ষর করা।

৭. বৈচিত্র্যময় ও উচ্চ মূল্যের পোশাক প্রস্তুত করতে সরকারের নীতিমালা প্রণয়নে অবদান রাখা। 

৮. আধুনিকায়নের মাধ্যমে কারখানাগুলোকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে আরএসসি'র প্রণীত জটিল নীতিমালাগুলো সহজ করতে সরকার ও আরএসসি বোর্ডের সাথে দর কষাকষির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। 

৯. ক্রেতা কর্তৃক অনৈতিক বায়িং প্রাকটিস তথা পণ্যের কম দাম দেওয়া, পণ্য বুঝে নিয়ে মূল্য পরিশোধ না করা, দামে ছাড় দিতে বাধ্য করা, বায়িং হাউস/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার/শিপিং লাইনের যোগসাজসে মূল্য পরিশোধ না করে মাল ছাড়িয়ে নেওয়া এবং ক্রয়াদেশ বাতিল করার মতো ঘটনা যেন বায়াররা ঘটাতে না পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে সর্বমহলে অবহিত করার ব্যবস্থা করা। 

১০. বৈদেশিক শুল্কব্যবস্থা, পরিবেশ বিপর্যয়, মহামারী, যুদ্ধাবস্থার মতো বিষয়গুলো প্রায়শই আমদের রপ্তানি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে যেকোনো বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানিখাতকে প্রস্তুত রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ রাখা। 

১১. বিকেএমইএ'র বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম অসন্তোষ থেকে রক্ষা পেয়েছে নীটওয়্যার খাত। এ ধরনের সফলতাগুলো বহির্বিশ্বে প্রচারের মাধ্যমে খাতসংশ্লিষ্ট ভাবমূর্তি উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া।

শ্রমিক কর্মচারী মালিক সরকার সকলে মিলে শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। শ্রমিকদের যেকোন ন্যায্য দাবির প্রতি বিকেএমইএ'র পূর্ণ সমর্থন এবং একইসাথে অন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা। 

১২. শিল্পখাতে জ্বালানী সংকট নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

১৩. ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের বিকাশে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি, প্রশিক্ষণ ও বিপননে সরকারি নীতি নির্ধারণীতে কার্যকর ভূমিকা রাখা। 

১৪. দেশের রপ্তানিখাতকে বিশ্ববাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে বিদেশে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে পোশাক শিল্প পরিবার তথা দেশের বস্ত্রখাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আমরা বিকেএমইএ সরকারের সাথে সহযোগীর ভূমিকা পালন করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি। 

১৫. ঢাকাতে বিকেএমইএ'র একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণদের নীতি প্রণয়নে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচি, প্রথম সেমিনার চট
  • ফলেন পরিচয়েৎ
  • হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নীট এলায়েন্সের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা