রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাত করে ও শিল–পাটার আঘাতে দুই বোনকে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করেছে। নিহত দুই নারী হলেন মরিয়ম বেগম (৬০) ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগম (৫২)।

মিরপুর থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম বেগম সপরিবার পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় একটি ভবনের দোতলায় থাকতেন। মরিয়মের ছোট বোন অবিবাহিত এবং তিনি তাঁর সঙ্গেই থাকতেন। সকালে মরিয়মের একমাত্র সন্তান নুসরাত জাহান (বৃষ্টি) মা ও খালা সুফিয়াকে বাসায় রেখে গুলশানে নিজ কর্মস্থলে যান। তিনি সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মরিয়মের স্বামী কাজী আলাউদ্দিন বিশেষ কাজে সকালে বরিশালের বাবুগঞ্জ যান। তিনি বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা।

রাত আটটার দিকে নুসরাত ফিরে দরজা নক করে বাসার ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। পরে তাঁর কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে তিনি ভেতরে ঢুকে মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ডাইনিং রুমের মেঝেতে এবং খালাকে একটি শোবার ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং তাঁরা মিরপুর থানায় খবর দেন।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, মিরপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান এবং মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সাজ্জাদ রোমন ঘটনাস্থলে যান। রাত ১১টার পর পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

ওসি সাজ্জাদ রোমন প্রথম আলোকে বলেন, মরিয়ম ও সুফিয়ার মাথায় শিল–পাটার আঘাত এবং পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও শিল–পাটা জব্দ করেছে। ওই বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। বাসার দরজা–জানালা ও গ্রিল অক্ষত। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সকালের পর চেনাজানা লোকেরা ওই বাসায় ঢোকেন। হয়তো সন্ধ্যার দিকে দুই বোনকে খুন করে তাঁরা পালিয়ে যান।

রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, ৬৪৯ পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় নার্গিস ভবনের সামনে মানুষের ভিড়। ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মরদেহ উদ্ধারে কাজ করছিল। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী এইচ এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারটি ১৫ বছর ধরে এই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। রাত ৯টা ২০ মিনিটে মরিয়মের স্বামী আলাউদ্দিন তাঁকে ফোন করে বলেন, স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। তিনি যেন বাসায় গিয়ে তাঁদের সঙ্গে তাঁকে কথা বলিয়ে দেন। এ সময় তিনি বাসায় গিয়ে পুলিশ ও র‍্যাব দেখতে পান। রাতেই আলাউদ্দিন ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে তাঁকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাকছুদের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ তাৎক্ষণিক বুঝতে পারছেন না। মরিয়মের শোকার্ত মেয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। বাড়ির ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্তে কাজ চলছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতু থেকে খুলে ফেলা হচ্ছে রেললাইন

যমুনা সেতুর ওপর থেকে রেললাইন খুলে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ বৃহস্পতিবার নাট-বোল্টসহ যন্ত্রাংশ খোলার কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত ১৮ মার্চ যমুনা রেলসেতু চালু হয়েছে। এরপর থেকে সড়ক সেতু দিয়ে ট্রেন চলছে না। যমুনা সেতুর ওপর রেললাইনের প্রয়োজন নেই। এ কারণে সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের মাধ্যমে যৌথ পরিকল্পনায় সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, রেললাইন খোলা শুরু হয়েছে। উপরিভাগে যানবাহনের জটলা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আগামীতে সেতুর দুটি লেন প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। রেললাইন খুলে নেওয়া হলে সড়ক সেতুতে আরও প্রায় সাড়ে তিন মিটার জায়গা বাড়বে। এটা মূল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযোগ করতে পারব। এতে উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার বাড়বে। এ ধরনের সেতু আন্তর্জাতিকভাবে ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত হয়। বর্তমানে যমুনা সেতুর প্রতি লেন ৬ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ। এ কারণে দুর্ঘটনা বা যানজট হয়। রেললাইন অপসারণের পর প্রতি লেন প্রস্থ হবে প্রায় ৮ মিটার। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লাগে। প্রশস্তকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সাসেক-২) পরিচালক ড. ওয়ালীউর রহমান। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এবারের ঈদে সেতু দিয়ে এক দিনে ৬৫ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে সেতু কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদের আগে-পরে বিপাকে পড়ে। সেতুর ওপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় এলেঙ্গা ও সিরাজগঞ্জসহ দুই পারে থেমে থেমে যানজট হয়। সেতুর উপরিভাগ প্রশস্ত করা হলে দুর্ঘটনা ও যানজট কমতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধন হয়। এর নকশায় রেলপথ ছিল না। পরে সেতুর ওপর উত্তর পাশে লোহার খাঁচা, বার ও অ্যাঙ্গেল যুক্ত করে রেললাইন বসানো হয়। ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হয়। নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে ট্রেন চলার কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতি বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি তৈরি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ