আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত কয়েক দিন শাহবাগে যে আন্দোলন হয়েছে, সেই আন্দোলনে বিএনপির অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা শাহবাগে কেন যাব? আমাদের দাবি তো আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে দীর্ঘ কয়েক মাস আগেই লিখিত ও মৌখিকভাবে দিয়েছি। আমরা বিভিন্ন সেমিনার–সিম্পোজিয়ামে বলেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছি। আমাদের শাহবাগে গিয়ে কথা বলতে হবে কেন?’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। তবে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি।

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনার জন্য কয়েক মাস আগে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, এ কথা জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তখন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যদি বিষয়টি আমলে নিতেন, তাহলে হয়তো গতকাল বা তার আগের দিন এই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সরকারকে পড়তে হতো না।’ তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে, যেসব ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী হয়, দল হিসেবে তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় এনে সেই দলকে নিষিদ্ধ করা হয়।

দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আইনি, সাংবিধানিক ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার ঘোষণা দেওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তবে আমরা বলব যে অন্তর্বর্তী সরকার যেন বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের পরামর্শ এবং দেশ ও জনগণের পক্ষে আমাদের দলের বিভিন্ন রকমের বক্তব্যগুলো যথাসময়ে আমলে নেন। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সব সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করব। যেহেতু সারা বাংলাদেশে মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে, এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যেন খুব শিগগির একটা রোডম্যাপ দেন। না হলে হয়তো এ রকম বিব্রতকর পরিস্থিতি আবারও সৃষ্টি হতে পারে।’

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন রকমের রাজনৈতিক কার্যকলাপ যাতে বন্ধ রাখা যায়, নিষিদ্ধ করা যায়, সে জন্য আরও একটি পদক্ষেপ সরকার নিতে যাচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। আমার মনে হয়, সে জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটু সংশোধনী আনতে হবে। এরপর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে এখন পৃথিবী বা দেশের মানুষ স্বীকৃতি দেয় কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি। তারা একটি মাফিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের ওপর দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়াতন্ত্রের চর্চা করেছে আওয়ামী লীগ। অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের পরিসমাপ্তি ও নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে। এরপর তো আওয়ামী লীগ ‘ইজ নো মোর আ পলিটিক্যাল পার্টি’। এটা একটা মাফিয়া পার্টি ও ফ্যাসিবাদী দল। সুতরাং রাজনৈতিক দলের তকমা দিতে চাই না। আওয়ামী লীগের ডিএনএতেই গণতন্ত্র নেই।

এর আগে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব নিয়ে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার বিধান যুক্ত করাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কালকে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।’

আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য সংশোধিত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইন উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যেন ন্যাশনালি ও ইন্টারন্যাশনালি বলতে না পারে যে সুষ্ঠভাবে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। সেই বদনাম যেন আমাদের না হয়।’

সভার শুরুতে বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী ও নাগরিক কোয়ালিশনের সহ–আহ্বায়ক শহিদুল আলম। এ সময় নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আর প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা তুলে ধরেন লেখক জিয়া হাসান।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ স ব গত জ ন প রস ত ব র জন য র র জন আম দ র শ হব গ ব এনপ সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে: হাফিজ উদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। কখনো সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা, কখনো সাধারণ মানুষকে হত্যা—দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে।’

শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকোয়েট হলে ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা এ সভার আয়োজন করে।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একমাত্র একজন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়া কেউ গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। এদের অনেকেই শেখ হাসিনার দোসর ছিল। যে কারণে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী একই আছে। মাঝখান থেকে সুযোগ নিয়েছে একটি রাজনৈতিক দল—যারা একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কীভাবে জানি না, তাদের প্রতিনিধি বসিয়ে দিয়েছে এবং তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে যেসব সুযোগ পাওয়া যায়, সেটি দিব্যি ব্যবহার করছে। আর আমরা বিএনপির কর্মীরা শুধু যুদ্ধ করে গেলাম, জীবন দিয়ে গেলাম, কতবার জেলে গিয়েছি তার হিসাব নাই।’

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একাত্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বারা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যই থাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যও সেটিই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবে—এ কথা তারা তখন চিন্তাই করেনি। স্বাধীনতার পর তারা কল্পকাহিনি শুরু করল যে অনেক আগে থেকেই তারা স্বাধীনতার জন্য লড়ছিল। বাংলাদেশের ছাত্র, জনতা, যুবক, শ্রমিকদের বীরত্বের কাহিনি আওয়ামী লীগের আমলে জনগণকে জানতে দেওয়া হয়নি।’

একাত্তরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এ জাতি চিনল না—এটা দুঃখের বিষয়। অধিকাংশ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন লুঙ্গি পরা, খালি পায়ে, মাথায় গামছা বেঁধে খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখলাম ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী মহানগরের ছেলেরা সব মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় রাজনৈতিক দলগুলো আলোতে আসার সুযোগ দেয়নি।’

জামায়াতের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা নির্বাচন চায় না। তারা তো অলরেডি ক্ষমতা ভোগ করছে। নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তারা বলে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন। এই দেশের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে ভোট দিয়ে আসছে একজন প্রতিনিধিকে—এলাকার মানুষের আপদ-বিপদে যাঁকে পাওয়া যায়। যিনি কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, এমন মানুষকেই ভোট দেয়। কিন্তু তারা মনে করে আগামী দিনে তো আমরা ক্ষমতায় যেতে পারব না, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। সুতরাং বিএনপি যাতে ক্ষমতায় যেতে না পারে, এ জন্যই তারা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। বাংলাদেশের জনগণ পিআর সিস্টেম বোঝে না, তারা পছন্দের ব্যক্তিকে দেখতে চায় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে।’

আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান এবং খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল আলম। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের খুলনা মহানগরের সভাপতি শেখ আলমগীর হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা, মরদেহে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন
  • সরকার সন্ত্রাস দমনে কঠোর না হলে আসন্ন নির্বাচন অনিশ্চিত: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
  • মুরগির ডাক শুনে ঘরের দরজা খুলতেই খুন হন জসীম
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, প্রশ্ন সালাহউদ্দিন আহমদের
  • গভীর রাতে মোরগের ডাকে শুনে দরজা খোলেন, এরপর কুপিয়ে হত্যা
  • সিলেট বিভাগের ১৭ আসনে প্রার্থীদের নাম জানাল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
  • ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা
  • দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে: হাফিজ উদ্দিন
  • ৫৪ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষে–বিপক্ষে বলে বিভক্তি সৃষ্টি কাম্য নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ