শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যায় সিসিটিভিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি গ্রেপ্তার
Published: 12th, May 2025 GMT
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় সিসিটিভিতে দেখতে পাওয়া তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তি নিহতদের ছোট বোনের ছেলে। তাঁর নাম গোলাম রব্বানী ওরফে তাজ (১৮)।
গতকাল রোববার গভীর রাতে ঝালকাঠির সদর উপজেলার আছিয়ার গ্রাম থেকে গোলাম রব্বানীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
দুই বোনকে হত্যায় একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজ সোমবার দুপুরে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেল চারটায় রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত জানানো হবে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) দেখতে পাওয়া ব্যক্তিটিই গোলাম রব্বানী। তিনি হত্যার শিকার মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগমের ছোট বোনের ছেলে। তিনি তাঁর দুই খালাকে হত্যা করেছেন।
গত শুক্রবার ৬৪৯ পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়িটির দোতলায় একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগমকে (৫২) ছুরিকাঘাত, শিলনোড়ার আঘাতে হত্যা করা হয়। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম রব্বানী মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর শনির আখড়ায় থাকেন। তিনি ঘটনার দিন টাকার জন্য পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় তাঁর বড় খালা মরিয়ম বেগমের বাসায় যান। সেখানে মরিয়মের আরেক বোন সুফিয়া বেগম থাকতেন। তাঁরা রব্বানীকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় রব্বানী ছুরিকাঘাত ও শিলনোড়ার আঘাতে দুই খালাকে হত্যা করেন। পরে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। গোলাম রব্বানী মুঠোফোনে আসক্ত। উগ্র আচরণে কারণে এর আগে তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনার পরদিন মরিয়মের স্বামী বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন বাদী হয়ে রাজধানীর মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
আজ যোগাযোগ করা হলে কাজী আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তাঁকে গোলাম রব্বানীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।
আলাউদ্দিনের বড় মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মা ছোটবেলা থেকে গোলাম রাব্বানীকে আদরযত্ন করতেন। অথচ তাঁর মা ও খালাকে গোলাম রব্বানীই দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দিলেন। তিনি গোলাম রব্বানীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়ির সিসিটিভিতে দেখা যায়, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে নীল রঙের জিনস প্যান্ট ও গাঢ় নীল রঙের শার্ট পরা এক ব্যক্তি বাড়িটির দোতলায় ওঠেন। তাঁর মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক আর মাথায় কমলা রঙের ক্যাপ। পরনের কাপড় পাল্টে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর একই ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
বাড়িতে মরিয়ম বেগম, তাঁর স্বামী কাজী আলাউদ্দিন ও মেয়ে নুসরাত জাহান এবং মরিয়মের ছোট বোন সুফিয়া বেগম থাকতেন। ঘটনার সময় কাজী আলাউদ্দিন বরিশালে গ্রামের বাড়িতে আর নুসরাত অফিসে ছিলেন।
নুসরাত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে তিনি নিজ কর্মস্থলে যান। রাত পৌনে ৯টার দিকে বাসায় ফিরে কলিংবেল বাজালে ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাননি। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে বাসায় ঢুকে মাকে ডাইনিং রুমে আর খালাকে শোয়ার ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
নুসরাত বলেন, তাঁর মায়ের মাথায় ও পেটে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত হয়। খালার মাথা শিলনোড়ার আঘাতে থেঁতলানো ছিল। ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল রক্তমাখা চাকু ও শিলনোড়া। তিনি প্রতিবেশীদের অ্যাম্বুলেন্স আনার অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে বাসায় পুলিশ আসে। খাবারের টেবিলের ওপর একটি মগে শরবত বানানো ছিল। পাশে তিনটি গ্লাস ছিল।
নুসরাত বলেন, ২০ বছর ধরে তাঁরা এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। তাঁর মা অপরিচিত কোনো লোককে বাসায় ঢুকতে দিতেন না। ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী বেশির ভাগ সময়ই ফটকে থাকতেন না। ভাড়াটেরা তালা খুলে আবার লাগিয়ে দিতেন। কোনো কারণে বাড়ির প্রধান ফটক খোলা থাকলে যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে।
মরিয়ম ও সুফিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হিমঘরে রাখা হয়েছে। তাঁদের বরিশালে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম রব ব ন প রথম আল ক কর মকর ত শ ক রব র
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ১৫ কারখানা ছুটি ঘোষণা
বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে নিরাপত্তার জন্য পার্শ্ববর্তী অন্তত ১৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৭ টার দিকে নাসা গ্রুপের ‘নাসা বেসিক কমপ্লেক্স’ কারখানার সামনে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেয় শ্রমিকরা।
শিল্প-পুলিশ জানায়, সকালে নাসা গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এর পরপরই বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের একটি অংশ পাশের কলকারখানার শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। এসময় নিরাপত্তাজনিত কারণে আশপাশের অন্তত ১৫টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকরা জানায়, বকেয়া বেতন পরিশোধের আগে গত ১০ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ৪ দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে নাসা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। আজ শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও বকেয়া পরিশোধ না করে আবারও ৪ দিন সাধারণ ছুটির নোটিশ টানিয়ে দেয় গেটে। শ্রমিকরা সাধারণ ছুটি বর্ধিত করার নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
নোটিশে বলা হয়েছে, “অনিবার্য কারণবশত আজ ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে ১৮ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত কারখানার সকল বিভাগ ও শাখাসমূহ (জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া) সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হলো। আগামী ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার কারখানার সকল বিভাগ ও শাখাসমূহ যথারীতি খোলা থাকিবে।”
এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, “শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই এলাকায় অবস্থিত ১৫টি পোশাক কারখানা আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।”
ঢাকা/সাব্বির/এস