মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও
Published: 17th, November 2025 GMT
ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।
অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।
বাধা পেরিয়েতারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।
গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুগলের জেমিনি লাইভে নতুন পাঁচ সুবিধা চালু
কথোপকথনভিত্তিক এআই সেবা জেমিনি লাইভে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গুগল। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস ব্যবহারকারীরা এখন আরও পাঁচটি নতুন সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন। গুগলের মতে, জেমিনি লাইভের এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় হালনাগাদ হিসেবে পাঁচটি নতুন সুবিধা যুক্ত হচ্ছে।
গুগল ব্লগে জানানো হয়েছে, নতুন সংস্করণে ব্যবহারকারীরা কথোপকথন নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি স্বাধীনতা পাবেন। পাশাপাশি শেখার ক্ষেত্রেও যুক্ত হয়েছে আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুবিধা। কথোপকথন সুবিধায় শুধু শব্দের সমষ্টি নয়, কণ্ঠের ওঠানামা, বাক্যের ছন্দ ও স্বরের লুকানো অনুভূতি বাস্তব যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন হালনাগাদ জেমিনি লাইভকে মানুষের কথার বিভিন্ন সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যকে আরও নিখুঁতভাবে বোঝার সক্ষমতা দিচ্ছে। গুগলের এআই বিভাগের নির্বাহী জশ উডওয়ার্ড জানান, নতুন মডেলের জেমিনি লাইভ ব্যবহার ও অভিজ্ঞতায় বড় পরিবর্তন আসবে।
এখন ব্যবহারকারীরা চাইলে জেমিনি লাইভকে ধীরে বা দ্রুত কথা বলতে নির্দেশ দিতে পারবেন। কোনো সংবেদনশীল বা জটিল আলোচনার সময় এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও শান্ত ও কোমল স্বরে সাড়া দেবে। গল্পের বর্ণনায় স্বর, ছন্দ ও চরিত্রভেদে কণ্ঠনিয়ন্ত্রণ আরও পরিশীলিত হয়েছে। জেমিনি লাইভ এখন কাউবয় থেকে ককনি এ ধরনের নানা অ্যাকসেন্ট অনুকরণ করতে পারবে। ফলে ব্যবহারকারীরা আরও বৈচিত্র্যময় ও স্বতঃস্ফূর্ত কথোপকথনের অভিজ্ঞতা পাবেন।
এখন থেকে বিদেশি ভাষা শেখা বা সাহিত্যবিষয়ক পড়াশোনায় আরও ব্যবহার উপযোগী নির্দেশনা দেবে জেমিনি লাইভ। ব্যবহারকারীর শেখার ধরন, অগ্রগতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী এআই তার পরামর্শের কাঠামো বদলে নেবে। চাকরির সাক্ষাৎকার, উপস্থাপনা ও ব্যক্তিগত আলোচনার আগে জেমিনি লাইভে অনুশীলন করা যাবে। গুগলের দাবি, এসব সুবিধা ব্যবহারকারীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ও যোগাযোগদক্ষতা উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: টেকরাডার