নটর ডেম শিক্ষার্থী ধ্রুবব্রতের শেষকৃত্য সম্পন্ন, ছেলেকে নিয়ে লেখালেখি চান না বাবা
Published: 13th, May 2025 GMT
রাজধানীর নটর ডেম কলেজের ভবন থেকে পড়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী ধ্রুবব্রত দাসের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরের পৌর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ধ্রুবব্রত দাসের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব উপস্থিত ছিলেন।
ধ্রুবব্রত গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া এলাকার বাণীব্রত দাসের ছেলে। গাইবান্ধা সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর তিনি নটর ডেম কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এবার কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তাঁর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
গতকাল সোমবার বাবার সঙ্গে কলেজ থেকে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গিয়েছিলেন ধ্রুবব্রত। ক্যাম্পাসে অভিভাবকদের ঢুকতে না দেওয়ায় বাবা কলেজের মূল ফটকের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর বাবা দেখতে পান, সহপাঠীরা তাঁর ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশায় তুলছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে ধ্রুবব্রত দাস কলেজের ‘ফাদার টিম’ ভবনের পঞ্চম তলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ সকালে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা থেকে ধ্রুবব্রতের লাশ গাইবান্ধায় আনা হয়। প্রথমে লাশ গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া এলাকার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী লাশ একনজর দেখতে ভিড় করেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর তাঁর লাশ শহরের পৌর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা তিনটার দিকে পৌর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তবে ছেলের মৃত্যু নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি হোক, চান না ধ্রুবব্রত দাসের বাবা বাণীব্রত দাস। তিনি কোনো ছবি না তুলতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। বাণীব্রত দাস বলেন, ‘আমার ছেলে গেছে। আমি লেখালেখি চাই না।’ এ সময় ধ্রুবব্রতের মা তমা রানী সিং আহাজারি করছিলেন।
ধ্রুবব্রত দাস.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হলো না, পোড়া দেহ পড়েছিল পুকুরে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন শাহরিয়ার অন্নব রিউশা (১৭)। পরিবার ও স্বজনদের কাছে, মেধাবী, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত রাউশা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডের এ প্লাস পান। সবশেষ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। এর আগে অংশ নেন আরো তিনিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়।
রবিবার (১১ মে) সকাল ৬টার দিকে রাউশার আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে। পরিবার ও স্বজনদের দাবি, চারটি বিশ্বিবিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন রাউশা। ভর্তির কোথাও সুযোগ পাননি তিনি। যে কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তাদের ধারণা, এ কারণে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে পারেন রাউশা। তবে, এ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই।
রাউশার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সিংদাহ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সোহেল রানার ছেলে।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে সাপের কামড়ে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
বাঁকখালী নদীতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
রাউশার স্বজন ও পরিবার জানান, রাউশা খুবই মেধাবী ছিল। কুষ্টিয়া এডুকেয়ার স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পাশ করেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকার রামপুরা এলাকায় খালার বাড়িতে যান। ঢাকা কলেজ থেকে ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। দুই পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলেন। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য তিনি প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষা দেন। এরপর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। গত ২৭ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন রাউশা।
তারা জানান, গত শুক্রবার (৯ মে) ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন রিউশা। শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাউশার মা মুক্তা খাতুন তার বাবার বাড়িতে ছেলের কাপড় আনতে যান। রাত সোয়া ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে তিনি রিউশাকে দেখতে পাননি। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। আজ সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি পুকুরে পোড়া ও বিবস্ত্র অবস্থায় রাউশার মরদেহ পান স্বজনরা।
রিউশার আইনজীবী খালা রত্না খাতুন বলেন, “রিউশা খুব মেধাবী, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে ছিল। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও ভর্তি হতে পারেনি। এরপর সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। আমরা ওকে সাহস দিতাম। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়েই হয়তো শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।”
রিউশার মা মুক্তা খাতুন ছেলের শোকে বিলাপ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, “আমার বাবা কোনে থাকবিনি রে। ক্যাম্বা থাকবিনি। আমার বাবার থুয়ে ক্যাম্বা শোবনগো।”
তিনি বলেন, “রাতে বাবার বাড়িতে রিউশার জামাকাপড় আনতে যাই। রাত সোয়া ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখি ছেলে নেই। সারা রাত সব জায়গায় খুঁজেও ওকে পাইনি। সকালে দেখি, পুকুরে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছে। সারা শরীর পুড়া। রাজশাহীতেও চান্স না পেয়ে খুবই ভেঙে পড়েছিল ও। কিভাবে কি হল তা জানি না।”
রাউশার চাচা ইকবাল বিশ্বাস বলেন, “বাগানে থাকা পরিত্যাক্ত টিনশেড ঘর ও পুকুরপাড়ে আগুনের ছাই এবং প্যান্টের পোড়া অংশবিশেষ পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।”
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, “আগুনে পোড়া এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ