জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে ঢাকার এনবিআর ভবনসহ সারা দেশে কাস্টমস, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ে তিন দিন কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশের সব কর অঞ্চল, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ কর্মসূচি পালন করছেন।

তিন দিনের এ কলমবিরতি শুরু হয়েছে আজ বুধবার। আজ সকাল ১০টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়, চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এনবিআর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন না। অনেকে আলোচনা ও গল্প করছিলেন।

এনবিআর ভবনের নবম তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলমবিরতি কর্মসূচির একটি ব্যানার টানিয়ে এর আশপাশে অবস্থান নিয়ে আছেন। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন জানান, আজ সকালে অফিস সময় শুরু থেকে (১০টা) তাঁরা কলমবিরতি পালন করছেন।

অতিরিক্ত কর কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু বলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমাদের এ কলমবিরতি কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দাবি না আদায় হলে তিন দিন পর্যন্ত এ কলমবিরতি চলবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে আমরা আলোচনা করে নতুন কর্মসূচি দেব।’
সাধন কুমার আরও বলেন, ‘আমাদের দাবির বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের ওপর মহল থেকে কোনো সাড়া পাইনি। আশা করি, গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারের ওপর মহল ইতিমধ্যে আমাদের দাবির বিষয়টি জেনেছেন। ফলে তাদের থেকে ভালো সাড়া পাব বলে আশা করছি।’

গত সোমবার রাতে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে নতুন দুটি বিভাগ গঠন করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের আওতাধীন কর অঞ্চল, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল মঙ্গলবার এই কলমবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গতকাল বিকেলে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে কলমবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয়।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে জানানো হয়, সারা দেশের কাস্টমস, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়গুলোয় তিন দিন কলমবিরতির সময় আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রপ্তানি—এ তিন ধরনের কার্যক্রম চালু থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁ অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ

সোনারগাঁ উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারি অর্থ তছরূপের অভিযোগ উঠেছে। নামে বেনামে প্রকল্প তৈরি করে অতিরিক্ত বিল ভাউচার এমনকি কখনো কখনো কাজ না করেই চলছে হরিলুট।  

সম্প্রতি উপজেলা অডিটরিয়ামের সংস্কার কাজে বাজারমূল্য থেকে কয়েকগুণ বেশি দামে কাজের বিল পাস করানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারকে ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা ইসলামের নির্দেশে উপজেলা প্রকৌশলী নিজ তত্বাবধানে কাজ সম্পন্ন করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ২০২৪–২৫ অর্থবছরের (স্কিম কোড ৩৬.৭০৪.২৫.১০২.১২) প্রকল্পের আওতায় মঞ্চের দেয়াল ও ব্যাক ওয়ালে প্যানেলিং, মঞ্চের সিলিং জিপসাম বোর্ডে, ভিআইপি চেয়ার, ছোফা, লোহার ফ্রেমের চেয়ার, খঊউ স্ট্রিপ লাইট, সাউন্ডস সিস্টেমসহ অন্যান্য কাজের ব্যয়ের হিসাব ধরা হয়েছে বাস্তবতার চেয়ে বহুগুণ বেশি।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, অডিটোরিয়ামের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও সংস্কার কাজে ব্যবহারের জন্য ২০০ টি ভিজিটর চেয়ারের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪৪ টাকা। যেখানে ১টা চেয়ারের মূল্য পরছে ৫,২৭৬.২২ টাকা। ৫ টি সোফার মূল্য ধরা হয়েছে ২,৫৭,৬৭৫/- টাকা, যেখানে ১টি সোফার মূল্য পরে ৫১,৫৩৫/- টাকা। মালামালে বাজার দর থেকে কয়েক গুন বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।

যা ২০১৯ সালের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আবাসিক এলাকা নির্মাণে বালিশ ক্রয়ে যে ব্যয় করা হয়েছিল তার চেয়ে কম নয়। এই অভিযোগ ও অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের অভিযান করা হলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেশে রূপপুর বালিশ কেলেঙ্কারি নামে আরেকটা ঘটনা পরিচিতি লাভ করতে পারে।

স্থানীয় ঠিকাদার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারে এসব উপকরণের প্রকৃত দাম নথিতে উল্লেখিত অঙ্কের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এমনকি উচ্চমানের উপকরণ ব্যবহার করলেও নির্ধারিত খরচের সাথে বাস্তব দামের বিশাল ফারাক রয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। উল্লেখিত দাম বর্তমান বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও দাবি সংস্লিষ্টদের।

তারা আরও দাবি করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান টেন্ডারবাজি করেন। ঠিকাদারদের কাজ নিয়ে নিজেই লোক দিয়ে কাজ করান। ফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমানের সরকারি বাসভবন, সরকারি কোয়াটার, পুকুরের সাইড ও শিশুদের খেলার যায়গা সংস্কারেও অর্থ লোপাটের বিষয় আছে। সঠিক তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে। এছাড়াও অনেক প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ লোপাটের ঘটনায় সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের অতিরিক্ত মূল্য ধরা হলে সরকারি অর্থ অপচয়ের ঝুঁকি থাকে এবং সঠিক তদারকি না হলে অর্থ লোপাটের সম্ভাবনাও থাকে।  

এ বিষয়ে এ কাজের ঠিকাদার মারদ ট্রেডার্স এর কর্ণধার ফারুক আহমাদ বলেন, ত্রিশ লাখ টাকার এই কাজ আমি ১০% লেস এর পর ২৭ লাখ টাকায় সোনারগাঁ অডিটোরিয়াম সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আলমগির স্যারকে বুজিয়ে দিয়েছি।

তারপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা ইসলাম আমার বিল পাস করেন। এখানে অতিরিক্ত বিল ভাউচার বা কাজ ঠিক-বেঠিক বিষয়টা আপনি সাংবাদিক দেখে কি করবেন? যারা দেখার তারা দেখেই আমার বিল পাস করছে।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আলমগির হোসাইন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়। 

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোনারগাঁ অডিটোরিয়াম সংস্কারে কোন প্রকার দূর্নীতি হয়নি। এ কাজের বিল পাস দিয়েছি আমি।

কাজেই আমি এ কাজের খোঁজখবর করেই দিয়েছি। আমি আপনাদের সহযোগীতা করতে পারব না।  আপনারা আপনাদের মতো অনুসন্ধান করেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ