অ্যাপলের তৈরি ইয়ারপডসের মাধ্যমে কি নজরদারি করা সম্ভব
Published: 14th, May 2025 GMT
অ্যাপলের ইয়ারবাড ইয়ারপডস নিয়মিত ব্যবহার করেন অনেক অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারী। কেউ আবার পছন্দের ব্যক্তিদের উপহারও দেন ইয়ারপডস। তবে অ্যাপলের ‘ফাইন্ড মাই’নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইয়ারপডসের অবস্থান শনাক্ত করে ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান কিউআর কোড জেনারেটরের প্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞ মার্ক পোরকার।
মার্ক পোরকার বলেন, ‘অফিস থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ইয়ারপডসের মাধ্যমে কর্মীদের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব। যদি ডিভাইসটি খোলা অবস্থায় দেওয়া হয় বা প্যাকেজিং করা না থাকে, তবে তা আগে থেকেই অন্য কারও অ্যাপল আইডির সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকতে পারে। নতুন বা পুরোনো প্রজন্মের যেকোনো ইয়ারপডস অ্যাপল আইডির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেটির অবস্থান জানা সম্ভব।’
ইয়ারপডসে সরাসরি জিপিএস বা সেলুলার সংযোগ না থাকলেও অ্যাপলের ‘ফাইন্ড মাই’নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যায়। আর তাই একবার কোনো ইয়ারপডস একটি নির্দিষ্ট অ্যাপল আইডির সঙ্গে যুক্ত হলে ‘ফাইন্ড মাই’ অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যায়। অতীতে এ পদ্ধতি গোপন নজরদারি ও ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
নজরদারি এড়াতে ইয়ারপডস ব্যবহারের আগে ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ করার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। ফ্যাক্টরি রিসেটের জন্য ইয়ারপডস চার্জিং কেসে রাখার পর ৩০ সেকেন্ড ঢাকনা বন্ধ রাখতে হবে। এরপর ঢাকনা খোলার পর কেসের পেছনের ছোট বোতামটি ১৫ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখতে হবে। কেসের সামনের বাতির রং প্রথমে অ্যাম্বার এবং পরে সাদা রঙে দেখা গেলে বুঝতে হবে রিসেট সম্পন্ন হয়েছে। রিসেটের পর অ্যাপল আইডির মাধ্যমে তা আবার সংযুক্ত করতে হবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র অবস থ ন অ য পল র নজরদ র ক ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়ের নিরাপত্তায় বসছে এআই নজরদারি
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেবল ক্যামেরার চোখে নয়, এবার নিরাপত্তা দিতে যোগ হবে আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
প্রথম ধাপে বসানো হবে ৬২৪টি ক্যামেরা।এর মধ্যে আছে ৪৩টি ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা–মুখ শনাক্তে পারদর্শী।২০টি বুলেট ক্যামেরা–দূরপাল্লার নজরদারিতে ব্যবহার।৪টি পিটিজেড (PTZ) ক্যামেরা–ঘুরে ঘুরে পূর্ণাঙ্গ চিত্র ধারণে দক্ষ ৭টি ড্রন ক্যামেরা।
আগুন ও অব্যবস্থাপনার আলোড়ন
২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন ছিল গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে চেতনায় নাড়া দেওয়া একটি ঘটনা। তদন্তে উঠে আসে-অধিকাংশ ক্যামেরা কাজ করছিল না, ব্যাগেজ স্ক্যানার ছিল অকেজো।
আরো পড়ুন:
নয়নের পরিবারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘিরে উদ্বেগ আর ‘সন্দেহ’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দ্রুত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ভবনের প্রতিটি প্রবেশমুখ, সীমানা ও গুরুত্বপূর্ণ করিডোরে।
প্রযুক্তিবিদদের কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইয়েদ মাহমুদ উল্লা বলেন, “বর্তমান বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ইনফ্রারেড সেন্সর যুক্ত ক্যামেরা। অন্ধকারে যেমন কাজ করে, তেমনি মানুষের শরীরের তাপমাত্রা শনাক্ত করতে পারে। এমনকি ছোট প্রাণীও ধরা পড়ে এই ক্যামেরায়। এসব প্রযুক্তি ভালোভাবে ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে অন্তত ৮ থেকে ১০ বছর কার্যকর থাকে।”
পুলিশের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “প্রশাসনিক সচেতনতার অভাব আমাদের নিরাপত্তাকে দুর্বল করে রেখেছে। সচিবালয়ের মতো স্থানে এমন দুর্বলতা অনভিপ্রেত। নিরাপত্তা কেবল যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে না, এটি একটি কৌশলগত সংস্কৃতিও। পরিকল্পনায় নজরদারির বিষয়টি যতটা গুরুত্ব পায়, বাস্তবায়নে তা পায় না। এটাই বড় দুর্বলতা।”
বাজেট
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ পেলে ক্যামেরা কেনা শুরু হবে। প্রকল্পটি ‘সচিবালয় নিরাপত্তা আধুনিকীকরণ’ নামে কার্যক্রম শুরু করবে।”
তিনি বলেন, “প্রকল্পে ভবিষ্যতে বায়োমেট্রিক এক্সেস কন্ট্রোল, ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ফায়ার অ্যালার্ম ইন্টিগ্রেশন এবং স্বয়ংক্রিয় প্রবেশগেট সিস্টেম সংযুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।”
প্রযুক্তির ছায়ায় নিরাপত্তার ছাদ
সম্প্রতি সরকার সচিবালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা দেশে সরকারি ভবন পর্যায়ে নজরদারির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যামেরাগুলোর বিশেষত্ব হলো-এগুলো শুধুমাত্র ভিডিও ধারণ করে না, বরং চেহারা শনাক্ত, গাড়ির নম্বর চিহ্নিত এবং সন্দেহজনক আচরণ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।
একটি অজানা মুখ যদি সীমান্ত অতিক্রম করে সচিবালয়ে প্রবেশ করে বা অনুমোদনহীন গাড়ি গেট পেরোতে চায়, সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিং রুমে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সচিবালয়ের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মডেল অনুসরণ করে প্রযুক্তির প্রয়োগ হবে। গাফিলতির সুযোগ আর থাকবে না।”
সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সচিবালয়ে প্রযুক্তির নতুন যাত্রা কেবল একটি প্রকল্প নয় বরং একটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সূচনা। যেখানে নিরাপত্তা মানে কেবল প্রহরী নয় বরং তথ্য, বিশ্লেষণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।একদিকে বিদেশি প্রযুক্তি, অন্যদিকে প্রশাসনিক সদিচ্ছা-দুইয়ের মিলনে যদি বাস্তবায়ন হয় পরিকল্পনা, তবে এ উদ্যোগ হতে পারে গোটা দেশের সরকারি ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি টেমপ্লেট।”
ঢাকা/এসবি