সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বেশ কিছু সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে পেনশনযোগ্য বয়স হলে জমাকৃত অর্থ এককালীন তোলার সুযোগ, প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার পরিমাণ কমানো, প্রগতি স্কিমে মাসিক সর্বোচ্চ জমার পরিমাণ বাড়ানো, আউটসোর্সিং সেবাচুক্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালুর প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি। 

গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের দ্বিতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো একজন চাঁদাদাতা পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি আগ্রহী হলে তাঁকে তাঁর মোট জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ এককালীন তুলে নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হবে। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বয়সীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। চাঁদাদাতাদের বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর থেকে তারা মাসিক পেনশন পাবেন। এতদিন এককালীন টাকা তোলার কোনো সুযোগ ছিল না।

প্রবাসীদের জন্য প্রগতি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী অনেকের মাসিক আয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় এ দুটি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার হার দুই হাজার টাকার পরিবর্তে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রগতি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি অংশের মাসিক আয় বেসরকারি খাতের কর্মকর্তাদের গড় মাসিক আয়ের তুলনায় বেশি হওয়ায় মাসিক সর্বোচ্চ জমার পরিমাণ ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা এবং আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা চুক্তির আওতায় নিয়োজিত সেবাকর্মীদের প্রগতি পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। 

এতে বলা হয়, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএসএ) সদস্যপদ গ্রহণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। একই সঙ্গে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালুর বিষয়টি পরীক্ষা করে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

এছাড়া পেনশন স্কিমে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য প্রচার কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। পাশাপাশি টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, টকশো ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারকালে বিজ্ঞাপন প্রচার ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। 

বৈঠকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৬০ বছর বয়সের জন্য অপেক্ষা না করে চাঁদাদাতার ইচ্ছা অনুসারে যে কোনো বয়স থেকে পেনশন সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। একে ‘স্বেচ্ছা পেনশন’ নামে উল্লেখ করে শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করে কর্তৃপক্ষ। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেলে তাঁর অক্ষমতার সময় থেকেই পেনশন সুবিধা চালু করার কথাও বলা হয়। একইসঙ্গে যে কোনো প্রয়োজনের সময় পেনশন স্কিমে জমা করা মোট অর্থের ২০ শতাংশ এককালীন উত্তোলনের বিধান সংযুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তবে এসব বিষয় আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার নির্দেশনা দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। 

জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল সমকালকে বলেন, পেনশন কর্তৃপক্ষের বেশকিছু প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করেছে। আবার কিছু প্রস্তাব আরও পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে আরও জনপ্রিয় করতে বাস্তবতার ভিত্তিতে বিষয়গুলো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। 

২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। সেদিন থেকেই বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’– এ চার স্কিম সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে পুরোপুরি প্রস্তুতি না নিয়ে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনগণকে তুষ্ট করতে তড়িঘড়ি করে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করার অভিযোগ ওঠে। চাঁদা ও পেনশন সুবিধার কাঠামোও সমালোচনার মুখে পড়ে। এতে শুরুর দিকে নিবন্ধকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও পরে তাতে ভাটা পড়ে। 

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪১ জন। চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প নশন র পর ম ণ প রস ত ব দ র জন য একক ল ন প রব স প রগত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ

নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।

আরো পড়ুন:

ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু

মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক

কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।

এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ