এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের কলমবিরতি কর্মসূচি চলছে
Published: 15th, May 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন শুল্ক, ভ্যাট ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে ঢাকার এনবিআর ভবনসহ সারা দেশে কাস্টমস, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, চলবে বেলা তিনটা পর্যন্ত।
ক্যাডার ও নন–ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, এনবিআরসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চল, ভ্যাট ও কাস্টমস কার্যালয়ে কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুল্ক-করসংক্রান্ত সেবা বন্ধ আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, বেনাপোলসহ বিভিন্ন শুল্ক–কর কার্যালয়ে এই কর্মসূচি চলছে।
গত মঙ্গলবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তিন তিনের কলমবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় কোনো কাজ হয়নি। আগামী শনিবারও সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি থাকবে।
আজ সকাল এগারোটায় ঢাকা কাস্টমস হাউসের একাংশ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকান শিক্ষক ইকবাল
বিদ্যালয়ে না গিয়ে বাবার সঙ্গে পেঁয়াজখেতে কাজ করছিল রাফিউল ইসলাম (১০)। বাবাও খুশি সহযোগী হিসেবে ছেলেকে কাছে পেয়ে। খবর পেয়ে মাঠে হাজির হন রাফিউলের শিক্ষক ইকবাল হোসেন। মাঠ থেকে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। এখন সে নিয়মিত ছাত্র।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন এভাবে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে ফেরান। পাশাপাশি দুর্বল শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় ভালো হয়, সেই চেষ্টা করেন।
সহকর্মী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন ইকবাল হোসেন। এরপর বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ ভালো হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার ‘হোম ভিজিট’ করার নিয়ম থাকলেও তিনি একাধিকবার ভিজিট করেন। বিদ্যালয়ের টিফিনের সময় ছাড়াও ছুটির পর পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকা ও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি যান তিনি। সহকর্মীদেরও বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ও পড়ালেখায় দুর্বল, খোঁজখবর নিয়ে টিফিনের সময় ও বিদ্যালয় ছুটির পর তাদের বাড়ি যান ইকবাল হোসেন। বাড়িতে না থাকলে যেখানে শিক্ষার্থী থাকে, সেখানে যান। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অনেক ক্ষেত্রে শিশুশ্রমে ব্যবহার করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ফেরান। কাজটি তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে করে আসছেন।
প্রধান শিক্ষকের হোম ভিজিট ও দুর্বলদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার সুফল পেতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একসময়ের অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছে। পড়ালেখায়ও উন্নতি হয়েছে বলে অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বলছেন।
কোনাবাড়িয়া গ্রামের অভিভাবক রেনুকা খাতুন বলেন, তাঁর ছেলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। জ্বরের কারণে একটানা দুই দিন স্কুলে যেতে পারেনি। পরদিন প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন কিছু খাবার নিয়ে বাড়িতে হাজির হন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকেরা এভাবে বাড়ি এসে খোঁজখবর নেওয়ায় তাঁরা খুশি।
প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, হোম ভিজিটের নির্দেশনা আছে। তিনি কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে না এলে বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন। টিফিনের সময় ও বিদ্যালয় ছুটি শেষে অনুপস্থিত ও দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে কাজটি করেন। বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া ছাড়া বিদ্যালয়ে এনে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা যত্ন নেন। এসব করতে ভালো লাগে। তাঁর এ কাজে সহকর্মী, শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবকেরা সহযোগিতা করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টিফিনের সময় শিক্ষকদের তিন মাসে একবার হোম ভিজিটের নির্দেশনা আছে। কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়মিত কাজটি করেন, যা প্রশংসনীয়। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। তাঁকে দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।