সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
আজ ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ইউপিয়ার গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে যুবাদের হয়ে একটি করে গোল করেন অধিনায়ক নাজমুল হুদা ও আশিকুর রহমান। নেপালের একমাত্র গোলদাতা সুজন ডাঙ্গোল। আগামী রোববার ফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে আজই দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল ভারত বা মালদ্বীপের সঙ্গে।
প্রথমার্ধে দুই দলের লড়াইটা সমান সমানই ছিল। ১৭ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত নেপাল। কিন্তু বাংলাদেশের গোলকিপার ইসমাইল হোসেন দারুণ প্রচেষ্টায় তেমন কিছু হয়নি।
২২ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে প্রতিপক্ষ গোলমুখে ভয় ধরিয়েও জাল খুঁজে পায়নি বাংলাদেশের রিফাত কাজী। মাঝমাঠ থেকে অধিনায়ক নাজমুল হুদার বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরে অরক্ষিত রক্ষণ পেয়েও গোলকিপারকে পরাস্ত করতে পারেননি বাংলাদেশের এই ফরোয়ার্ড।
৩৩ মিনিটে মোরশেদ আলীর ফ্রি-কিক গোলপোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়। এর ঠিক তিন মিনিট পর নাজমুলের লং শট রুখে দেন নেপালের গোলকিপার ভক্ত বাহাদুর।
দ্বিতীয়ার্ধেও কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। তবে শেষ ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ প্রথমার্ধের চেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেছে। ৫৬ মিনিটে মোরশেদের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড নেন মিঠু চৌধুরী। কিন্তু নেপালের এক খেলোয়াড় পোস্টের নিচ থেকে বলটা বিপদমুক্ত করেন। ৬০ থেকে ৬৬ মিনিটের মধ্যে আরও দুটি আশা জাগানিয়া আক্রমণ শানায় বাংলাদেশ। তা থেকে গোল আসেনি।
শেষ পর্যন্ত ৭৩ মিনিটে নাজমুলের কর্নারে আশিকুর রহমানের হেডে ১-০ হয়েছে। ৮১ মিনিটে নেপালের এলোমেলো রক্ষণভাগের পুরোপুরি সুযোগ নেয় বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা মোহাম্মদ মানিকের বুদ্ধিদীপ্ত পাস থেকে নিখুঁত শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নাজমুল। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ খানকিটা রক্ষণে মন দেয়। এরপরও গোল খেয়ে বসে। ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশের জমাট রক্ষণ চুরমার করে জাল কাঁপান নেপালের সুজন ডাঙ্গোল।
এবারের আসরে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের সঙ্গে ড্র করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।