আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ভারত সরকারের প্রতি আখতারের আহ্বান
Published: 16th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারত সরকারের উদ্বেগ প্রকাশের সমালোচনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভারত সরকারের কাছে আহ্বান রাখব, বাংলাদেশে বাকশালী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের (ভারত সরকার) যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে এ দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।’
এনসিপির যুবসংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন আখতার হোসেন। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) পরিত্যক্ত কার্যালয়ের সামনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, অপরাধের দায়ে বাংলাদেশে যাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের পক্ষে ভারত সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারত সরকার দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি করেনি; বরং তাদের সম্পর্ক ছিল এ দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, বাকশালী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে। এ দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে ভারতকে। কোনো বিদেশি প্রভু বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
আখতার বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা হয়েছে। তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মতাদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করার সময় এসেছে এখন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুবসংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিসহ নেতা–কর্মীরা। আজ শুক্রবার বিকেলে, গুলিস্তানে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র র জন র জন ত প রক শ আখত র এনস প অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়।
আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।
জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।
যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।
এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।
গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।