অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেছেন কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। 

তিনি বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আপনারা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। আপনাদের প্রথম কাজ—জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু, আপনারা এই ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে এখনো কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেননি, টালবাহানা করছেন। বিভিন্ন এলিট কমিশন গঠন করে আমাদের মন ভোলানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের জনগণের এটা বোঝার মতো বুদ্ধি রয়েছে।”

শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) স্বৈরাচারমুক্ত করার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ফ্যাসিস্টবিরোধী জুলাই নেটওয়ার্ক। 

সমাবেশে ফরহাদ মজহার বলেন, “বিভিন্ন দাবিতে যখন আন্দোলন তৈরি হচ্ছে, তখন আপনারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে, তরুণদের বিরুদ্ধে নানা রকম প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি। আপনাদের এজেন্সি ছাত্রদের মধ্যে বিভক্তি তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আপনার ভাববেন না, এটা বোঝার মতো কাণ্ডজ্ঞান জনগণের নেই। ছাত্রদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে যেসব এজেন্সি কাজ করছে, আমরা তাদের চিনি। তাদের বলব জনতার কাতারে দাঁড়াতে। ছাত্রদের বলব, তথাকথিত মতাদর্শিক তর্ক করে নিজেদের মধ্যে বিরোধ বাড়াবেন না। এটা ফ্যাসিস্টদের কৌশল।”

তিনি বলেন, “আমাদের কাজ হলো—জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আন্দোলন জারি রাখা। এজন্য অবিলম্বে জুলাই ঘোষণার ওপর সবার জোর দিতে হবে। মনে রাখবেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে ও ক্ষমতার অন্দরমহলে যেসব প্রাসাদ তৈরি করেছে, তা যদি ৩২ নম্বরের মতো গুঁড়িয়ে দিতে না পারি, তাহলে আগামী দিনে বাংলাদেশের জনগণের কপালে অনেক দুঃখ আছে।” 

“অন্তর্বর্তী সরকারের শিথিলতা আমাদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের শিথিলতা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে। আমরা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে উৎখাত করেছি, কিন্তু তার আরোপিত সংবিধান এখনো বাতিল করতে পারিনি। ঠিক তেমনই টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতকে এখনো ফ্যাসিস্ট শক্তির কাছ থেকে মুক্ত করতে পারিনি।” 

ফরহাদ মজহার আরো বলেন, “তথ্য প্রযুক্তি খাতকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, ইন্টারনেট বন্ধ করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করে যারা শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রেখেছিল, তারা এখনো বহাল আছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে, এটাকে আমরা সমর্থন করি। এখন আপনাদের (সরকার) কাজ হলো ফ্যাসিস্ট শক্তির সহযোগী ইন্টারনেট ও টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে আমরা বিটিআরসির সামনে অবস্থান নেব।”

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন— লেখক জাহিদ জগৎ, কবি মোহাম্মদ রোমেল, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নাফিউল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা/এম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনগণ র ক ষমত ফরহ দ মজহ র র জনগণ র আপন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতি আগে যেমন ছিল, সে রকম হবে না, সেই সুযোগও নেই: সৈয়দা রিজওয়ানা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের বিষয়ে নাগরিকেরা মনে করেন, কী আর হবে, আগে যেমন ছিল, তেমনই হবে। এটা মনে করলে আর কিছুই বদলাবে না। আগে যেমন ছিল যাতে সে রকম না হয়, সে জন্য সাড়ে আট শ বাচ্চা প্রাণ দিয়েছে, সাড়ে চার শ বাচ্চা অন্ধত্ব বরণ করেছে। এসব আপনার, আমার বাচ্চা। কাজেই আগে যেমন ছিল, সে রকম হবে না, সেই সুযোগও নেই।’

গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী দেশের রাজনীতির পরিস্থিতি নিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আজ শনিবার এ কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা মহানগরী ও উপজেলা এলাকার ৪৪টি খাসপুকুর ও জলাশয় সংস্কার, উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল আজ। এ উপলক্ষে দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের দড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জাতীয় সম্পদ হিসেবে খাসপুকুর ও জলাশয় রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সংস্কারকাজের আওতায় সীমানা নির্ধারণ, সীমানা পিলার স্থাপন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পুনঃখনন, পাড়বাঁধাই, পানি প্রতিস্থাপন, দূষণমুক্তকরণ, ঘাট নির্মাণ, ওয়াকওয়ে, বেঞ্চ স্থাপন ও বৃক্ষরোপণ করা হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা। ঢাকার অধিকাংশ জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণের চাপের মুখে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী ঢাকা মহানগরী ও জেলায় মোট ১১৩টি খাসপুকুর আছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৪৪টি জলাশয় চিহ্নিত করে সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে বাকি জলাশয়গুলোর তালিকা তৈরি করে ধাপে ধাপে পুনর্গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জনসাধারণকে পলিথিন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, পলিথিন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। সরকারি নজরদারি ও জনসচেতনতার কারণে সুপারশপগুলো এখন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার কমিয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক দায়িত্ববোধ অত্যন্ত জরুরি। সে জন্য সবাইকে পলিথিনের ব্যবহার পরিহার করতে হবে।

সিলেটে সাদাপাথর লুট প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘পাথর লুটপাটকারীরা বড় বড় স্লোগান দিয়ে আমাদের দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে রেখেছিল। কিন্তু জনগণের বিক্ষোভ প্রকাশের কারণে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়।’

পরিবেশ রক্ষায় জনগণের আন্দোলনের প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘গণতন্ত্রের শর্তে রয়েছে আপনার পরিবেশ আপনাকে রক্ষা করতে হবে। উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে না। এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়ার মানুষদের আন্দোলন সফল হয়েছে। আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর করা যাবে না, সেটি এলাকার মানুষ সোচ্চার হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।’

ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশবাসীকে ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জামায়াত আমিরের
  • রায় প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের
  • পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
  • ইকুয়েডরে গণভোটে ‘না’ এগিয়ে, বিদেশি সামরিক ঘাঁটিতে সায় নেই মানুষের
  • ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করলে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
  • ‘বিহারে ভোট কিনতে ব্যবহার হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ১৪ হাজার কোটি রুপি’
  • গণভোট ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করবে: রিজভী
  • নেতারা বলবেন, জনতা শুনবে—এই সংস্কৃতি বদলাতে চায় মানুষ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • একটি দল গণভোটে না দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করছে: আখতার 
  • রাজনীতি আগে যেমন ছিল, সে রকম হবে না, সেই সুযোগও নেই: সৈয়দা রিজওয়ানা