বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে ইশরাক সমর্থকরা। যার ফলে নগর ভবনে সেবা নিতে আসা নাগরিকরা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে নগর ভবনে থাকা সোনালী ও জনতা ব্যাংকের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

রবিবার (১৮ মে) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকসহ সব ফটকে তালা ঝুলছে এবং সেবাপ্রত্যাশীরা হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

নগর ভবনের সামনে প্রধান ফটকে কথা হয় সেবাপ্রার্থী সেলিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছি ছেলের জন্মনিবন্ধন নেয়ার জন্য, কিন্তু এসে শুনছি অফিস বন্ধ। আগে জানলে এত যানজট ঠেলে আসতাম না। এখন তো ঢাকায় দেখি প্রতিদিনই আন্দোলন হয়। আসলে সাধারণ মানুষের জিম্মি করে এই সকল আন্দোলন করা ঠিক না। সরকারের উচিত এই বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দেয়া।”

রাজধানীর লালবাগ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত কাজের জন্য নগর ভবনে আসেন ব্যবসায়ী ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার দোকানের জন্য কয়েকদিন ধরে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার জন্য নগর ভবন এসে ফেরত যেতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক ভোগান্তিকর বিষয়। দোকান খোলা রেখে এসে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা সম্ভব নয়। আর আন্দোলনের জন্য গত বৃহস্পতিবার থেকে সিটি কর্পোরেশনের সকল অফিস বন্ধ। এজন্য আমাদের মতো যারা সাধারণ সেবাপ্রার্থী রয়েছে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”

ডিএসসিসির ৩৩ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, “ইশরাক হোসেন হলো জনতার মেয়র। আদালত ন্যায্য রায় দিয়েছে, তবুও কেন এত টালবাহানা বুঝি না। আমাদের দাবি অতিদ্রুত ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল নেতা নাদিম হাসান বলেন, “২০২০ সালে যখন নির্বাচন হয়েছে তখনই ইশরাক হোসেন তাপসের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল, কিন্তু তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভোট চুরি করে তাপসকে মেয়র ঘোষণা করেছে। এখন আদালত ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচন কমিশন গেজেট দিয়েছে। তারপরও এখন তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে কেন এত দেরি সেটা আমাদের প্রশ্ন। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলছি, কোনো টালবাহানা করে লাভ নেই, অতি দ্রুত ইশরাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করছি।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিরাপত্তাকর্মী মোকসেদুর রহমান বলেন, “নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা, শুধুমাত্র এই ভবনে থাকা সোনালী ও জনতা ব্যাংক ছাড়া। ভবনের ১৩ ও ১৪ তলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া স্যারের অফিসসহ সব তলায় তালা দেওয়া হয়েছে। এখন অনেকে সেবার জন্য এসে ফেরত যাচ্ছে।”

নগর ভবনে তালার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো.

শাহজাহান মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। সেবাপ্রার্থীরা নগর ভবন এসে ফেরত যাচ্ছেন, এটা একটা দুঃখজনক বিষয়। আমরাও অফিস করতে পারছিনা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মিলে বিষয়টি সমাধান করলে সবার জন্য ভালো।”

প্রসঙ্গত, বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ঢাকা/রায়হান/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নগর ভবন র স ইশর ক হ স ন ড এসস স র জন য আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়ানোর ‘হোতা’ শাহ পরাণ গ্রেপ্তার

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শাহ পরাণ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার বুড়িচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার পরাণ ধর্ষণ মামলার মূল আসামি ফজর আলীর আপন ছোট ভাই। মামলার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। 

র‍্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার কার্যালয়ের অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, শাহ পরাণ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড।

মুরাদনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, শাহ পরাণকে র‍্যাব হস্তান্তর করেছে। তাকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গত ২৬ জুন রাতে উপজেলার একটি গ্রামে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, ঘটনার রাতে তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় ফজর আলী ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার সময় আশপাশের কয়েকজন লোক এসে ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে। পরে ওই ঘটনার ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী নারী  মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ