শিশু কনসালট্যান্টের কক্ষের সামনে শিশুদের কোলে নিয়ে মায়েদের লম্বা এক সারি। তীব্র গরমে শিশুদের কান্নার আওয়াজ পৌঁছে গেছে অনেক দূর পর্যন্ত। মেডিসিন কনসালট্যান্ট কক্ষের সামনে বৃদ্ধসহ বয়স্ক লোকজন তাকিয়ে আছেন দরজার দিকে। কিন্তু কক্ষে তালা। গত ১৪ মে ঘড়িতে সময় তখন বেলা ১১টা। 
স্বাস্থ্যসেবা প্রার্থীদের ভাষ্য, চিকিৎসক আসেন তাদের খেয়ালখুশি মতো। কিছুক্ষণ রোগী দেখে আবার চলে যান। ভোগান্তির এই চিত্র ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের ডিউটি তালিকা অনুযায়ী, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৯ জন চিকিৎসক সেবা দেন। সরকারি নিয়ম অনুসারে বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেবাপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সময়মতো চিকিৎসকদের দেখা পান না তারা।

গত ১৪ মে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থানকালে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পান সমকাল প্রতিনিধি। সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকের বসার অধিকাংশ কক্ষেই ঝুলছিল তালা। কয়েকটি কক্ষ খোলা ছিল। চলন্ত ছিল বৈদ্যুতিক পাখা, জ্বলন্ত ছিল লাইট। কিন্তু কক্ষে মানুষের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে হাসপাতালে প্রবেশ করলেন মেডিকেল অফিসার ডা.

শুভময় পাল। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. আলমগীর কবির এলেন ৮টা ৫১ মিনিটে। মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম সরকার, ডা. সুচিত্রা নাথ ও দন্ত চিকিৎসক মোস্তফা কামাল আসেন ৯টা ১ মিনিটে। ৯টা ১৬ বাজিয়ে এলেন মেডিকেল অফিসার ডা. প্রিন্স। ৯টা ৫২ মিনিটে কক্ষে প্রবেশ করলেন আরেকজন মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল হোসেন। ৯টা ২ মিনিটে হাসপাতালের বারান্দায় দেখা হয় আবাসিক চিকিৎসক শহিদুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, একটু দেরি হতেই পারে। 

এদিকে অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করা হয়েছে গাইনি চিকিৎসক বনানী ভৌমিকের জন্য। সিজারিয়ান অপারেশন করাবেন এমন দুই নারীর স্বজনরা জানান, সকাল ৮টায় ডাক্তার আসার কথা সাড়ে ৯টা বাজলেও তাদের দেখা নেই। তবে বনানী ভৌমিকের দেখা মিলেছে ৯টা ৫০ মিনিটে। হাসপাতালের দোতলায় শিশু কনসালট্যান্ট ডা. বিশ্বজিৎ পালের কক্ষের সামনে শিশুদের কোলে নিয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায় বসে আছেন ৭ জন মা। বাচ্চা কান্না করে বলে কোলে নিয়ে অনেকেই আবার পায়চারি করছেন বারান্দায়। ঘড়িতে সময় তখন বেলা ১১টা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বজিৎ পাল ছুটিতে আছেন। তবে ঘাটাইল আলোক হেলথ কেয়ারে বিকেল সাড়ে ৪টায় বসবেন বলে জানান ওই হেলথ কেয়ারের ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান। 

কথা হয় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা তেলেঙ্গপাড়া গ্রামের বিউটি আক্তারের (২২) সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, হাসপাতালে নারী চিকিৎসকদের গাফিলতি বেশি। সময়মতো আসেন না তারা। শাহপুর গ্রামের মনসুর আলী বলেন, ‘সকাল ৮টায় আইছি সিরিয়ালে দাঁড়াই আছি। এহন ১০টা বাজে, এহনো ডাক্তারের দেহা নাই। তালা লাগানো। আমাগো এবা কইরা হয়রানি হতে হয়। ১০টার আগে 
ডাক্তার আসেন না।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঘাটাইল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদ্যুতের অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কক্ষে লোক না 
থাকলে অযথা ফ্যান এবং লাইট জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু নয়িম মোহাম্মদ সোহেল সমকালকে বলেন, ‘সময়মতো উপস্থিত হওয়া আমাদের দায়িত্ব। রোগীরা অনেক সময় দেরি করে আসেন এজন্য ডাক্তার হয়তো লেট করে আসছেন।’ রোগীর তো লম্বা লাইন ডাক্তার নেই? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি। কক্ষে ডাক্তার না থাকলেও ফ্যান ঘুরছে, লাইট জ্বলছে কেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন কোন কক্ষে এমনটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স ম ড ক ল অফ স র ড চ ক ৎসক

এছাড়াও পড়ুন:

রোগীদের কেন নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা হবে, প্রশ্ন আইন উপদেষ্টার

রোগীদের কেন নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা হবে—এমন প্রশ্ন তুলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে কোন জায়গায় হসপিটালে, প্রাইভেট ক্লিনিকে সব সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম থাকে ডাক্তারের।...আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় আইন উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিপিএইচসিডিওএর সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকদের বিষয়ে বেশ কিছু সাধারণ অভিযোগ তিনি প্রায়ই শোনেন, যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকেরা ভালোভাবে রোগের কথা না শুনেই পরামর্শপত্র লেখেন এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দেন। তিনি বলেন, ‘এই অত্যাচার বন্ধ করেন। মানুষ অনেক গরিব। এখানে লোকজন খুব গরিব আছে। বড়লোকদের গলা কাটেন সমস্যা নাই। গরিব রোগীদের ১৪-১৫টি টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করান।’

সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অন্যায় মুনাফা করা বন্ধ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের পাশে বেসরকারি খাত না দাঁড়ালে স্বাস্থ্যসেবাকে পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএমএ রোগীর বাবা জানালেন বেদনার গল্প ও সচেতনতার আহ্বান
  • নিবন্ধনহীন বিদেশি চিকিৎসকের সেবা বন্ধে বিএমডিসির চিঠি
  • চিকিৎসকদের নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল ড্যাব
  • অনর্থক স্বাস্থ্য পরীক্ষার অত্যাচার বন্ধ করুন: আসিফ নজরুল
  • রোগীদের কেন নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা হবে, প্রশ্ন আইন উপদেষ্টার