হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছে পুলিশ।

সোমবার (১৯ মে) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ পরিদর্শক বিল্লাল ভূঁইয়া তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

এদিকে, সকাল ৯টার দিকে নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়ে। তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে ভাটারা থানার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গতকাল দেশের বাইরে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা তিন-চারশ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি। মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগান দাতা হিসেবে আসামি করা হয় নুসরাত ফারিয়াকে।

গত বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর সুবিধাভোগী বিনোদন জগতের তারকাদের অনেকেই বেশ বিপাকে পড়েন। এর মধ্যে কিছু তারকা আছেন, যারা সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করা কিংবা বিভিন্ন সময়ে তার প্রশংসা করার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করার পর এমন সমালোচনার শিকার হন নুসরাত ফারিয়া।  

সম্প্রতি এ নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি। আপনি কি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার কারণে অনুশোচনায় ভোগেন? এমন এক প্রশ্নের উত্তর ফারিয়া বলেন, “মুজিব সিনেমার জন্য ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল— এই ৫ বছর আমি একই লুকে নিজেকে মেইনটেইন করেছি। চুলে কোনো রঙ করিনি, কালো চুল নিয়ে ঘুরেছি এই চরিত্রটির জন্য। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শারীরিক ওজনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। ফলে সেই কাজটিকে নিয়ে যদি অনুশোচনা করি, তাহলে আমার পেশাকেই অপমান করা হবে।”

নুসরাত বলেন, “এই সিনেমার জন্য আমি যে পরিস্থিতি পার করেছি বা এখনো করছি, তা আমার ভাগ্যে লেখা ছিল বলেই মনে করি। এটা খণ্ডানোর ক্ষমতা আমার ছিল না। একটি দেশের সরকারি পর্যায় থেকে কোনো কাজের প্রস্তাব এলে তা নিজের অত পছন্দ না হলেও মানা করা যায় না।”

২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার আশিকী চলচ্চিত্র দিয়ে নুসরাত ফারিয়ার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনয়শিল্পী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।

প্রথম চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি হিরো ৪২০, বাদশা – দ্য ডন, প্রেমী ও প্রেমী এবং বস ২: ব্যক টু রুল এর মতো আরো বেশ জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০২৩ সালে তিনি শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত মুজিব: একটি জাতির রূপকার চলচ্চিত্রে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেন।

‘পটাকা’ শিরোনামে ২০১৮ সালে একটি গানের মাধ্যমে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ফারিয়া। এছাড়া, ইউটিউবসহ সোশাল মিডিয়ার নানা মাধ্যমে তার গাওয়া ‘হাবিবি’, ‘আমি চাই থাকতে’ সহ আরো কিছু গান প্রকাশ পেয়েছে।

ঢাকা/এম/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চর ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে কুবির একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তদন্ত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংসহ গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষ স্থগিত করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) ভুক্তভোগী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই অভিযোগ করেন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (বুধবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে প্রথমদিনের মতো ক্লাস করতে যান। ক্লাস শেষে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা (২০২৩–২৪ বর্ষ) তাদের ক্লাসরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় র‍্যাগিং, সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তারা নবীনদের শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

আরো পড়ুন:

যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি চান ইবি শিক্ষার্থীরা 

সংবাদমাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য

এ সময় ঠিকভাবে পরিচয় দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন ২০২৩-২৪ বর্ষের একজন এবং ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দেন তারা। এছাড়া ‘শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন?’ বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তার হাতের ক্যানুলা খুলে যায়। এতে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। 

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২৩-২৪ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করেন। 

অভিযুক্ত আবর্তনের শ্রেণি প্রতিনিধি ইরফান অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র‍্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালোসিসের সমস্যা যে ছেলের, তার সঙ্গে রুমে ঢোকার সময় একজনের ধাক্কা লাগে। এতে ওই বিষয়টি ঘটে গেছে। এছাড়া বাকি অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।”

একই আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, “ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়।” 

রাগিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মাত্র ৫-১০ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।”

তবে ভুক্তভোগী আবর্তনের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তারা (ইমিডিয়েট সিনিয়র) পরিচয় পর্বের নামে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলে। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।” 

লিখিত অভিযোগ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনা নিয়ে আমরা শুরুতে লিখিত অভিযোগ করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভাগের কিছু সিনিয়র এসে বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জেনে গেছে।”

থাপ্পড় মারার অভিযোগে শয়ন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না জানিয়ে অন্যত্র চলে যান। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, “র‍্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য।”

তিনি বলেন, “যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”

এ বিষয়ে কল দিলে বিভাগীয় প্রধান ড. মেহের নিগার ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। 

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে কুবির একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তদন্ত
  • আবেগে নেইমারের স্বাক্ষর করা বল নিয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড
  • তখন ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছিল এনএসআই-ডিজিএফআই
  • নতুন গ্রহাণুর দিকে চোখ নাসার, ধেয়ে যাবে পৃথিবীর পাশ দিয়ে এ সপ্তাহে
  • শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে
  • আগের পাঁচ মাসের চেয়ে জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
  • আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা
  • লুকিয়েও বাঁচেন না কাব্য, ক্যামেরাম্যান খুঁজেই ফেলে!
  • কনটেইনার পরিবহনে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল চট্টগ্রাম বন্দর
  • বেরোবিতে নোটিশ ছাড়াই ভর্তি ফি দ্বিগুণ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা