পরিচিত অপরাধীদের দেশ ছাড়তে দিয়ে ‘মিথ্যা’ গণমামলায় শিল্পী, সাংবাদিকদের জড়ানো হচ্ছে
Published: 19th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাসে জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি হয়নি অভিযোগ করে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, পরিচিত অপরাধীদের দেশ ছাড়তে দিয়ে হত্যার ‘মিথ্যা’ গণমামলায় লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষকে জড়ানো হচ্ছে।
আজ সোমবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। সেখানেই এসব কথা বলেন। অবিলম্বে জুলাই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা এবং নাগরিক হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, চিহ্নিত ‘রাঘববোয়ালরা’ এখনো আইনের আওতার বাইরে। অনেককে বিদেশে চলে যেতে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা ও রহস্যজনক ভূমিকা জনমনে গভীর হতাশা তৈরি করছে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করছে।
অন্যদিকে ‘মিথ্যা’ গণমামলায় অভিনয়শিল্পী ইরেশ যাকের, নুসরাত ফারিয়া, সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, রাজনৈতিক নেত্রী লাকী আকতারসহ আরও অনেককেই হাস্যকর মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই হয়রানি নৃশংস জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচারের জনদাবির প্রতি চরম প্রতারণা।
প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য এই মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে বলেও মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের প্রতিও চরম অবমাননা।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি চারটি দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো, অবিলম্বে জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে; লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, নির্মাতা, রাজনৈতিক কর্মীসহ হয়রানির শিকার সব ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই হত য ক ণ ড র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যপ্রদেশে ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট, হয়েছে লুট, দুজন কৃষকের মৃত্যু
ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকট তীব্র হয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। এতে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি ইউরিয়া সারের ট্রাক লুটের মতো ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বিতরণ কেন্দ্রে সারের জন্য সারিতে দাঁড়ানো আরেকজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যটিতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সার সংকট ঘিরে এটা দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা।
গত সোমবার মধ্যপ্রদেশের টিকামগড় জেলার বাদোরাঘাট সার বিতরণ কেন্দ্রে সারিতে দাঁড়ানো অবস্থায় ৫২ বছর বয়সের যমুনা কুশওয়াহা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারি বাজরুয়া গ্রামের এ কৃষক দুই বস্তা ইউরিয়া সার পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে পরপর তিন দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
স্বজনেরা জানান, ওইদিন যমুনা না খেয়েই সকালেবেলা গ্রাম থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের সার বিতরণ কেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুরের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। পরে দ্রুত জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যমুনা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বিতরণ কেন্দ্রে বাইরে অসুস্থ হয়ে পড়া কৃষখ যমুনাকে সরকারি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় তহশিলদার সত্যেন্দ্র গুর্জরই। স্থানীয় দেহাত থানা–পুলিশের স্টেশন হাউস অফিসার চন্দ্রজিৎ যাদব নিশ্চিত করেন, যমুনার মৃত্যু হৃদরোগে হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাজ্যের গুনা জেলার একটি সার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে পরপর দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর মারা যান ৪৫ বছরের ভূরি বাঈ।
টিকামগড়ের সহকারী কৃষি পরিচালক (ডিডিএ) অশোক শর্মা জানান, ১৯ হাজার টন ইউরিয়া সার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে অশোক শর্মা দাবি করেন, টোকেনে থাকা সময় ধরেই সার বিতরণ করা হচ্ছে। বাদোরাঘাট সার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে কারও মারা যাওয়ার তথ্য তাঁর কাছে নেই।
যদিও কৃষকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, টোকেন ন্যায্যভাবে দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এরপরও অনেককেই সার না পেয়ে দিনশেষে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
মধ্যপ্রদেশের টিকামগড় এবং আশপাশের জেলাগুলোয় সার সংকট নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে গত সোমবার কয়েক শ কৃষক সেখানকার প্রধানতম একটি মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর ফলে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
এ ছাড়া গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা টিকামগড়ের জাতারা কৃষিপণ্য বাজারে সরাসরি বিতরণ ট্রাক থেকে ইউরিয়ার বস্তা লুট করেন। একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত বুধবারের ওই ঘটনায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি সারের বস্তা লুট হয়েছে। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে এলেও, এ ঘটনায় জেলার সার সরবরাহের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) স্থানীয় সাহারিয়া জাতিগোষ্ঠীর সদস্য ভূরি বাঈয়ের মৃত্যুর পর থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভূরির মৃত্যুর কয়েকদিন পর গুনা আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তিরস্কার করেন।
ভারতে চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সারেরর ব্যবহার ৪ কোটি টনে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বর্ষায় বাড়তি চাহিদা এবং গত এক দশক ধরে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য প্রায় অপরিবর্তিত থাকার কারণে সারটির ব্যবহার ক্রমেই বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে ব্যবহৃত সারটির বিক্রি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৮ লাখ টনে পৌঁছে, সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে।
এই বছর ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। জলাধারগুলো ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ফের পূর্ণ হওয়ায় কৃষকেরাও নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করেছেন। মধ্যপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, এবারের রবি মৌসুমে (অক্টোবর–মে) জলাধারে পানি বেশি থাকার কারণে ইউরিয়া সারের চাহিদাও বাড়তির দিকে রয়েছে।