নারীর প্রজননতন্ত্রে জরায়ুর দুই পাশে টিউবের মাধ্যমে সংযুক্ত দুটি ছোট্ট ডিম্বাকৃতির অঙ্গ রয়েছে, যাকে বলা হয় ডিম্বাশয়। ইংরেজিতে বলে ওভারি। নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার, জরায়ুমুখ ক্যানসার বা জরায়ু ক্যানসারের পাশাপাশি ডিম্বাশয়ের ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে বহুল আলোচিত। অন্যান্য ক্যানস্যারের তুলনায় একে নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০২০ সালের এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে গড়ে তিন লাখের বেশি নারী ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এই ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয়। সাধারণত এ রোগের লক্ষণগুলো শুরুর দিকে অস্পষ্ট থাকে, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি অ্যাডভান্সড স্টেজে (রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর) চিহ্নিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এখন পর্যন্ত ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য স্ক্রিনিং ব্যবস্থা নেই। এসব কারণে একে বলা হয় ‘নারীর জন্য নীরব ঘাতক’।

লক্ষণ

ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হলে শুরুর দিকে লক্ষণগুলো অস্পষ্ট থাকে। তবে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লক্ষণগুলো হলো ধারাবাহিক ক্ষুধামন্দা, পেট ভরা বা ভারী লাগা, হঠাৎ করে ওজন হ্রাস, পেট ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা অনুভব করা। সাধারণত ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ৮০ শতাংশই পোস্ট মেনোপজাল অর্থাৎ পঞ্চাশোর্ধ্ব। বিশেষ করে যেসব নারীর বন্ধ্যত্ব আছে, সন্তান কম অথবা পরিবারে কারও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা আরও বেশি।

প্রতিকার ও চিকিৎসা

ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রতিবছর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক লক্ষণ টের পেলে পুরো পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। সন্দেহ হলে সিএ ১২৫ রক্তের টিউমার মার্কার পরীক্ষা করা যায়।

কার্যকর চিকিৎসার জন্য রোগটি দ্রুত শনাক্ত হওয়া জরুরি। শুরুর দিকে শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফলতা পাওয়া যায়। অন্যথায় কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে যদি পরিপূর্ণ ‘স্টেজিং অপারেশন’ করা যায়, তাহলে কেমোথেরাপি না দিয়েও চিকিৎসা করা সম্ভব। অ্যাডভান্সড স্টেজেও অস্ত্রোপচারের গুরুত্ব অপরিসীম।

শেষ কথা

ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের বেশির ভাগ মারা যান চিকিৎসাসংক্রান্ত জটিলতা ও ট্রিটমেন্ট রেজিস্ট্যান্সের জন্য। এ রোগের অধিক মৃত্যুহারের আরেকটি মূল কারণ রোগটি দেরিতে শনাক্ত ও দ্রুত সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা। প্রাণঘাতী এ রোগের কবল থেকে রেহাই
পেতে প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসা।


অধ্যাপক ডা.

ফারজানা ইসলাম, প্রসূতি, স্ত্রীরোগ ও গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শনি গ্রহের একাধিক চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের সন্ধান

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহের আটটি মাঝারি আকারের চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে মিমাস, এনসেলাডাস, ডায়োন, টেথিস, রিয়া, হাইপেরিয়ন, লাপেটাস ও ফিবি নামের চাঁদগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের তথ্য টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি চাঁদগুলোর ওপরে নিয়মিত নজরও রাখছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ডায়োন ও রিয়া চাঁদে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড শনির প্রধান বলয়ের বরফের অনুরূপ। ফিবি চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড জৈব পদার্থের বিকিরণের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে থাকে। লাপেটাস ও হাইপেরিয়নের অন্ধকার অঞ্চলে কার্বন ডাই–অক্সাইড দেখা যায়। বরফযুক্ত এসব চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কঠিন কার্বন ডাই–অক্সাইড সৌরজগতের প্রান্তসীমার বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। যদিও সেই অবস্থানে কার্বন ডাই–অক্সাইড স্থিতিশীল নয়। আমরা শনির উপগ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থান জানার মাধ্যমে ভিন্ন পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড কীভাবে আটকে আছে, তা জানার সুযোগ আছে এখানে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির চাঁদে আটকে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড থেকে আদর্শ ল্যাবের মতো তথ্য পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, শনি গ্রহের বিভিন্ন চাঁদে কমপক্ষে দুটি পৃথক উৎস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড তৈরি হয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ