ভারতের ‘গোর্খা রেজিমেন্ট’ সম্পর্কে কতটা জানেন?
Published: 21st, May 2025 GMT
ভারতীয় সেনা বিভাগের প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ বলেছিলেন যে, ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি বলেন যে সে মরতে ভয় পায় না, তাহলে হয় সে মরতে ভয় পাচ্ছে, নয়তো সে একজন গোর্খা সেনা।’’- গোর্খা সেনারা এতোটাই সাহসী যে তারা যেকোনো ঝুঁকি নিতে পারে।
কথিত আছে, গোর্খারা প্রাকৃতিকভাবেই যোদ্ধা। যুদ্ধের সময় তাদের আক্রমণাত্মক প্রকৃতি ও শৈলির জন্যই পরিচিত। এরা আত্মবিশ্বাস ও সাহসে পরিপূর্ণ।
নেপালের একটি জেলার নাম গোর্খা। এটা যোদ্ধাদের জন্যই প্রসিদ্ধ। ভারতীয় সেনা বিভাগের গোর্খা সেনাদের নেওয়া হয় উত্তর ভারত আর নেপালের পাহাড়ে বসবাসকারী গুরুং, রায়, সাগর ও লিম্বু নামক আদিবাসী থেকে।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়নি: বিক্রম মিশ্রি
রাশিয়া-ইউক্রেন ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে: ট্রাম্প
প্রত্যেক গোর্খা সেনার কাছে ১৮ ইঞ্চি ধারালো চাকু থাকে। যাকে তারা কুকরি বলে। এই সেনাদের প্রধান হাতিয়ার হলো চাকু বা কুকরি। ১৮১৫ সালের ২৪ এপ্রিল গোর্খার রেজিমেন্টের প্রথম সেনা দল ‘নাসিরি রেজিমেন্ট’ তৈরি হয়। গোর্খা রেজিমেন্টের ভরসাতেই ব্রিটিশ সেনাদল হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করতে নেমেছিল।
যখন ভারত ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের পক্ষ থেকে নেপালের দুই লাখ গোর্খা সেনা অংশগ্রহণ করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ২০ হাজার গোর্খা সেনার মৃত্যু হয়েছিল। ইংরেজরা ১৮৫৭ সাল থেকেই নিজেদের রেজিমেন্টে গোর্খা সেনা নিযুক্ত করা শুরু করে। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ইতিহাসও রয়েছে এই সেনাদের।
ভারতের প্রথম স্বতন্ত্র সংগ্রামে এরা ব্রিটিশ সেনাদের হয়ে লড়াই করেছিল। কেননা ওই সময় পর্যন্ত তারা ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে কাজ করতো। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীন হলো তখন ব্রিটেন, ভারত ও নেপালের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী দশটি গোর্খা রেজিমেন্ট ব্রিটিশ সেনা বিভাগ ও স্বাধীন ভারতীয় সেনাবিভাগের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
স্বাধীন ভারতীয় সেনাবিভাগে ৭টি গোর্খা রেজিমেন্ট যুক্ত হয়। এখন এই ৭টি রেজিমেন্টের ৪৬টি ব্যাটেলিয়নে প্রায় ৪২ হাজার গোর্খা সেনা আছে। এদের প্রতীক হলো এক জোড়া বাঁকানো কুকরি। এই সেনারা ছুরিকে সব সময় তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্র হিসেবে বহন করে।
দশরা উৎসব এই গোর্খা সেনাদের কাছে একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই অনুষ্ঠানে প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী মহিষ বলি দেওয়া হয়। মহিষের মাথাকে কুকরির এক কোপে কেটে ফেলা হয়। মহিষ বলি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় রেজিমেন্টের সবচেয়ে তরুণ সদস্যকে।
ভারতীয় রেজিমেন্টকে গোর্খা রেজিমেন্ট দুইজন মার্শাল আর্ট দিয়েছে একজন হলেন শ্যাম মিনেকশ অন্যজন হলেন জেনারেল দলবির সিং সোহাগ। ভারতীয় সেনা গোর্খা রেজিমেন্ট পাকিস্তানী সেনা ও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পারদর্শীতা দেখানোর উপহার স্বরূপ গোর্খা রেজিমেন্টকে ৩টি পরমবীর চক্র, ৩৩টি মহাবীর চক্র এবং ৮৪টি বীর চক্র দিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১২০০ থেকে ১৩০০ নেপালি গোর্খা ভারতের সেনা বিভাগে যোগ দেয়। গোর্খা সেনাদের উচ্চতা ৫ ফুট দুই ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট চার ইঞ্চি। গোর্খারা শুধুমাত্র ভারতীয় সেনাবাহীনিতে কাজ করে না তারা ব্রিটেন, সিঙ্গাপুরের সেনাবাহীনিতেও কাজ করে। এজন্য এদেরকে ভাড়াটে সেনাও বলা হয়।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই।
মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার।
যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।
সুচরিতা/শাহেদ