কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে ১২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ শনিবার সকালে ভূরুঙ্গামারীর ভাসানীর মোড় থেকে তাঁদের আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিকেলে তাঁদের ভূরুঙ্গামারী থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।

ঠেলে পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাগদহ গ্রামের আবদুল মজিদ (৪২), হালালি বেগম (৩৬), হালাল মিয়া (২০); একই উপজেলার শিংহলবাড়ি সোনাইকাজী গ্রামের আতাউর রহমান (৩৮), আনোয়ারা বেগম (৩৫), আল আমিন (১৯), মনিষা বেগম (২০) এবং ১৬ বছর ও ৯ মাস বয়সী দুই শিশু; ফুলবাড়ীর বড়লই বড়ভিটা গ্রামের এনামুল হক (৪০), মর্জিনা বেগম (৩০) ও ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন বলে বিজিবি জানিয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল হেলাল মাহমুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা ১২ জন নারী-পুরুষকে আটক করে বিজিবি। বিকেলে তাঁদের থানায় হস্তান্তর করা হয়। আটক ব্যক্তিদের সবাই জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আটক ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন আগে কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে তাঁদের ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আটক করে। পরে শুক্রবার গভীর রাতে ভূরুঙ্গামারীর সীমান্তের কোনো এক স্থান দিয়ে বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। সীমান্ত থেকে ভূরুঙ্গামারী সদরের দিকে আসার সময় কামাত আঙ্গারিয়া ভাসানীর মোড় থেকে তাঁদের আটক করে বিজিবি।

কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির সহকারী পরিচালক মো.

মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তিরা সীমান্তপথ দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে কাজ করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন। তাঁদের ভূরুঙ্গামারী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন

ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।

দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।

দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।

জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’

আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।

ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’

আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫

আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।

কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।

ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিল বিএসএফ
  • ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন