বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ কিন্তু সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে এবং তাদের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান কিংবা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।”

রবিবার (২৫ মে) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের ১৮ বছরে যাত্রার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, “রাষ্ট্রে স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদ রুখে দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ, সরকার গঠিত হলে অবশ্যই সেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রে নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়। দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত থাকলে সরকারের পক্ষ ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করা সহজ হয় না। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে।”

আরো পড়ুন:

ঝিনাইদহে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১৫

নির্বাচন বিলম্বিত হলে স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে: বিএনপি

তিনি বলেন, “হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান এই অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈধতার হয়তো সংকট নেই। তবে এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই কার্যকর এবং টেকসই হয় না, হবেও না।”

নিয়ম মাফিক অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছু কাজ করতে হয় উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এরই ধারাবাহিকতায় নিয়ম মাফিক অন্তর্বর্তী সরকারকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতার দেখা গেছে, প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিবন্ধকতা। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের হয়তো সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরে সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে, এটি কিন্তু আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সবাই বিশ্বাস করে।”

তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্য-অযোগ্যতা বিষয় নয়। দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে, অন্যদিকে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক রকমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এ কারণে আমরা দেখছি, জনগণ প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও তাদের এই দাবি-দাওয়া শোনার জন্য এই মুহূর্তে কেউ নেই।”

তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ এবং সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। সুতরাং দেশে-বিদেশে সম্মানিত দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে।”

তিনি বলেন, “পতিত পলাতক ফ্যাসিবাদ যাতে আর কোনো রূপে এবং কোনো ক্রমেই ফিরতে না পারে, এই সময় সেটিই হোক বাংলাদেশের পক্ষের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার। সময়ের প্রয়োজনে সাংবিধানিক কিংবা আইনগত সংস্কার এবং উভয় প্রকারের সংস্কারের বিকল্প নেই। অল্প সংস্কার কিংবা বেশি সংস্কার বলেও কিন্তু কিছু নেই। রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক প্রয়োজনীয় সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।”

এনপিপির চেয়ারম্যানস ড.

ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

ঢাকা/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন জনগণ র ক র জন ত ক ব এনপ র সরক র র রক র র র জন য র র জন ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

সব হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ফেডারেশনের মশালমিছিল

পুরান ঢাকায় ভাঙারি পণ্য ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মাহবুব রহমান হত্যাসহ সাম্প্রতিক সব হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। সঞ্চালনায় ছিলেন সহসাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জামান।

সভাপতির বক্তব্যে সৈকত আরিফ বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সরকার যদি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জনগণ নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে সৈকত আরিফ বলেন, ‘সরকার পতনের পর থেকেই হাটবাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এসব সংঘর্ষ খুন-হত্যায় রূপ নিচ্ছে। দলটি শুধু বহিষ্কার করেই দায় এড়াতে চাচ্ছে। বিএনপিকে বলছি, কেবল বহিষ্কার নয়, বিচার নিশ্চিত করতেও আপনাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, আজকের অরাজকতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাষ্ট্রীয় বিচারহীনতার। গণ-অভ্যুত্থানের পর শত শত মাজার ও মন্দির ভাঙা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার কোনো বিচার হয়নি। তাই আজ মিটফোর্ডের মতো এলাকায় প্রকাশ্যে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে সাম্প্রতিক সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধে রাষ্ট্রকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জিন্নাত আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা নগর শাখার সভাপতি আল-আমিন রহমান, ছাত্র ফেডারেশনের শাখার সংগঠক সীমা আক্তার, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসান আল মেহেদী, দপ্তর সম্পাদক অনুপম রায় রূপকসহ সংগঠনের অন্য নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচার-সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পেছানোর যুক্তি আর চলবে না: মঈন খান
  • পুশইন নিয়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চায় না জনগণ
  • মুক্তির প্রাথমিক শর্ত বৈষম্যের অবসান
  • একটি দল ভাবছে, চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে তারা 
  • সব হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ফেডারেশনের মশালমিছিল
  • জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন কর‌তে দে‌ব না: হেফাজ‌ত
  • জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে মহানগরী জামাতের মিছিল
  • খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি: জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় নিয়ে মামুনুল হক
  • বিচার-সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না: নাহিদ
  • খুলনায় এনসিপির সমাবেশে ২০ হাজার লোক সমাগমের প্রস্তুতি