সাম্যের কবি দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীতে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কবির পরিবারের সদস্যরা, নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গ।

এ দিন সকাল ছয়টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হন এবং শোভাযাত্রা সহকারে কবি’র সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীরা।

শ্রদ্ধা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম যুগ যুগ ধরে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। জুলাই আন্দোলন এবং বিগত ১৫ বছরের আন্দোলনে তার লেখনী আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। শত আঘাতের মধ্যেও তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস।

রিজভী বলেন, ‘শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার জন্য নজরুল আমাদের তাগিদ দিয়েছেন। জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তিনি আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ করেন, অনুপ্রাণিত করেন। সে কারণে আজও তিনি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।’

সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা চলমান সংকটকে ঘনীভূত করার চেষ্টা করছেন। তারা নিজেদের দায়িত্ব বাদ দিয়ে অন্য কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করলে আমরা তার প্রতিবাদ করবই।’

রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ নিরপেক্ষ আচরণ আশা করে। কোনো দলকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব তাদের না। এমনটি হলে জনগণ মানবে না।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা সুযোগ পেলেই আঘাত করবে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করা। নইলে স্বৈরাচারের দোসররা সুযোগ গ্রহণ করবে।’

জাতীয় কবির নাতনী খিলখিল কাজীসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বোন মিষ্টি কাজী ও নজরুল ইনস্টিটিউটের সদস্যরা।

শ্রদ্ধা জানিয়ে খিলখিল কাজী বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম যা দিয়ে গেছেন বাঙালি জাতিকে, তা অনস্বীকার্য। তিনি শিখিয়ে গেছেন সবসময় সত্যের পক্ষে থাকবো, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলবো। এসবগুলো যদি আমরা পালন করতে পারি, ধারণ করতে পারি তা হবে আমাদের স্বার্থকতা।

খিলখিল কাজী আরও বলেন, তিনিই তো আমাদেরকে দিয়েছেন গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই। মানুষকে বড় করে দেখেছেন। সমাজের যত অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে তার লেখনী নিয়ে কাজ করেছেন। স্বদেশী আন্দোলনকারীরা তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙেছেন।

শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার শিক্ষা দেয়। সর্বাবস্থায় সাম্য ও শান্তি বজায় রেখে নিজেদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখার শিক্ষাও আমরা নজরুলের সাহিত্যকর্ম থেকেই পাই।

শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর সমাধির পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবি’র সমাধি প্রাঙ্গণে স্মরণসভায় অংশ নেন উপাচার্য।

স্মরণসভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম ‘চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ সালেকীন) অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ অনুষ্ঠানে নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।

এ ছাড়াও কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটসহ নানা সংগঠন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ নজর ল ইসল ম নজর ল ইসল ম উপ চ র য ন কর ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ স্থায়ী সরকার চায়: নজরুল ইসলাম খান 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করে নির্বাচিত স্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যেতে হবে। যে সংস্কারের কথা অন্তর্বর্তী সরকার বলছে তার সবই বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে আছে। তাদের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে নতুন কিছু নেই।

আজ শনিবার বিকেলে বগুড়ার সূত্রাপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান এ কথাগুলো বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আলোচনা সাপেক্ষে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন জুনের মধ্যে প্রস্তুতির কথা বলেছে, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী, তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। জনগণ স্থায়ী সরকার চায়। আওয়ামী লীগ সব সেক্টর ধ্বংস করেছে। তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা থেকেই পুনর্গঠনের দিশা পাওয়া যাবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ড. ইউনূস গুণী মানুষ হলেও নাতি-নাতনিদের উপদেষ্টা করায় কিছু ভুল হচ্ছে। এখনকার সরকারে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি, যা শেখ হাসিনার আমলে সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখনো ন্যায়বিচারের দাবিতে কথা বললেই বাধা আসে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বেকার তরুণদের জন্য সরকার কিছু করছে না। মানবিক করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করলেই রোষানলে পড়তে হয়। অথচ এই অধিকার নিয়েই আমরা লড়াই করছি।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

ভারী বৃষ্টিতে শুরুতে প্রস্তুতি বিঘ্নিত হলেও দুপুরের পর কর্মীদের অংশগ্রহণে মাঠ ভরে যায়। সমাবেশ চলার সময়ে নেতাকর্মীরা বৃষ্টির মধ্যেই মঞ্চের সামনে অবস্থান করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা, না দেশের ব্যর্থতা
  • ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে: তারেক রহমান
  • দ্রুত নির্বাচনই রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথ: ওয়ার্কার্স পার্টি
  • কোনো দল নয়, জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে ড. ইউনূসকে এনসিপির আহ্বান
  • নির্বাচন ও সংস্কারের ‘রোডম্যাপ’ দরকার: যমুনা থেকে বেরিয়ে জামায়াতের আমির
  • সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে জনগণের আশা পূরণ হবে না: জামায়াত আমির
  • সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে জনগণের আশা পূরণ হবে না
  • ‘সংস্কারের বাইরে ড. ইউনূসকে যারা নামাতে চান, তারা দিল্লির রাজনীতি করেন’
  • জনগণ স্থায়ী সরকার চায়: নজরুল ইসলাম খান