পুনর্বাসন দাবি উচ্ছেদ হওয়া ৬ রাখাইন পরিবারের
Published: 26th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা বন্দর নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত ছ-আনিপাড়া রাখাইন পল্লিবাসীর উপযুক্ত পুনর্বাসন দাবি করেছে উচ্ছেদ হওয়া ছয়টি পরিবার। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।
নাগরিক সংগঠন ‘নাগরিক উদ্যোগ’ এবং উচ্ছেদকৃত ছয়টি রাখাইন পরিবার যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন ছ-আনীপাড়া রাখাইন পল্লীবাসীর পক্ষে চিংদামো রাখাইন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ মেইনথিন প্রমীলা, মানবাধিকার কর্মী দিপায়ন খীসা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন এবং উচ্ছেদকৃত ছয়টি রাখাইন পরিবারের প্রতিনিধিরা।
সভায় বলা হয়, পায়রা বন্দর নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় দফায় জমি অধিগ্রহণের সময় ছয়টি রাখাইন পরিবারের ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বসতভিটা অধিগ্রহণ করা হয়। পরিবারগুলোর সঙ্গে পূর্ব কোনো আলোচনা ছাড়াই তাদের বসতবাড়ি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের পর শুধুমাত্র গাছপালা ও বসতবাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা দেওয়া হলেও ভোগদখলকৃত জমির ক্ষতিপূরণ এখনো পরিবারগুলো পায়নি।
বক্তারা বলেন, পরবর্তীতে পরিবারগুলোর দাবি ও আলোচনার প্রেক্ষিতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ছ-আনীপাড়া রাখাইন পল্লির ছয়টি পরিবারকে কলাপাড়া উপজেলায় উপযুক্ত স্থানে পুনর্বাসনের জন্য লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, দীর্ঘ ৩৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কার্যকর কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে পরিবার প্রতি পাঁচ হাজার টাকা বাসাভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, মাত্র ছয়মাস পর এই ভাতা বন্ধ করে দেয়।
সভায় ছ-আনীপাড়া রাখাইন পল্লিবাসীর পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- রাখাইনদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে কলাপাড়া উপজেলায় কোনো বিদ্যমান রাখাইন পল্লির সন্নিকটে আমাদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিমাসে পরিবার প্রতি পাঁচ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।
অন্যান্য রাখাইন পল্লির বেদখলকৃত শ্মশানগুলো পুনরুদ্ধার করে, সেগুলোর যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে রাখাইন জনগোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। রাখাইনদের ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানগুলো নিজস্ব সংরক্ষিত এলাকা কোনোভাবেই অধিগ্রহণ করা যাবে না। রাখাইন এলাকায় রাখাইন জনগোষ্ঠীর সম্মতি ছাড়া জমিতে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কল প ড় পর ব র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক।
এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।”
চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”
ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।”
হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।
কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”
ঢাকা/রাঙামাটি/এস