বিএনপি অফিসে টেবিলে পা তুলে আ’লীগ কর্মীর ধূমপান, ভাইরাল
Published: 26th, May 2025 GMT
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিএনপি অফিসে চেয়ারে বসে টেবিলে পা তুলে সিগারেট খাচ্ছেন হারুন আর রশিদ নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মী। সামনে বসেছিলেন বেশ কয়েকজন। গতকাল রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ ছবি ভাইরাল হয়।
‘জিয়ার সৈনিক’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে হারুন অর রশিদের টেবিলে পা তোলা ও হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘বাহ্! আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি কুখ্যাত ভূমি দস্যু একাব্বর চেয়ারম্যানের ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী হারুন বলে কথা। বিএনপির অফিসে হাতে সিগারেট আর টেবিলে পা তুলে বসে থাকা সাধারণ জনগণকে মোটেও অবাক করেনি। কারণ এই এলাকায় স্বজনপ্রীতি রাজনৈতিক হালচাল। কিন্তু প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগের সময় এই স্বজনগুলো কোথায় ছিল?
জানা গেছে, ওই অফিসে উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বসেন। তবে এটি ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। অফিসটি উপজেলার গারোবাজরে অবস্থিত। আর হারুন ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। তার বাড়ি সিংহচালা গ্রামে। তার বাবা একাব্বর আলী ছিলেন বৃহত্তর রসুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে লক্ষিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর হারুন পালিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরত আসেন। পালাতে পারেননি। পরবর্তীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে আসেন হারুন। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। এর ফলেই তিনি পৌঁছে যান বিএনপির অফিস পর্যন্ত। ওই অফিসে দিন-রাত আড্ডা দেন তিনি।’
স্থানীয়রা জানান, তিনমাস আগে বিএনপির এই অফিস উদ্বোধন করা হয়। ১৫ দিন না যেতেই হারুন ওই অফিসে যাতায়াত শুরু করেন। সঙ্গে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকর্মী। রাত-দিন অফিসে আড্ডা দেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য ও লক্ষিন্দর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী আকন্দ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার দোষ কম। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা এই অফিস পরিচালনা করেন। অর্থ্যাৎ সিনিয়ররা আওয়ামী লীগদের সঙ্গে নিয়ে অফিসে বসেন। বিএনপির সিনিয়ররা আওয়ামী লীগ ছাড়া চলতে পারেন না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন হারুন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক অভয় দিয়ে এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। মনে হয় অফিসটা আমাদের না, আওয়ামী লীগের অফিস।’
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় হারুন আর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে বিএনপির অফিস না। এটা এখোলা ঘর। কারণে-অকারণে ওই ঘরে যাওয়া হয়। ওই ঘরটি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইকবাল তালুকদারের ভাই খোরশেদ তালুকদারের। সম্পর্কে ইকবাল তালুকদার আমার মামা। ছবিটি যে রাতে তোলা হয়েছে সেই রাতে ওই ঘরে আড্ডায় আমার সঙ্গে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।’
লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। গারোবাজারের ওই অফিসটা ইউনিয়ন বিএনপির না, ওইটা ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। ওইখানে বসেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইকবাল তালুকদার।’
ইকবাল তালুকদার বলেন, ‘লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা এ অফিসে বসেন। হারুন আমার বোনের দেবরের ছেলে। সম্পর্কে ভাগনে। কখন সে এই অফিসে এসে এ কাজ করেছে আমি জানি না।’
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে যদি কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ ব এনপ র ন ত ব এনপ র স ন ব এনপ র ন ত কর ম ন আওয় ম গঠন ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ ৪২, আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ৩ জন
নানা অভিযোগ ও ডোপ টেস্টের কারণে প্রাথমিক তালিকা থেকে ৪২ জনকে বাদ দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২১টি পদে ১৫৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলের সংসদের ১৩টি পদে ৩৩ জনসহ মোট ৩৪টি পদের বিপরীতে ১৮৯ জনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, জকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ১৩ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
তালিকায় আরও দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র পদে ৪ জন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৫ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ৫ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৪ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ৮ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ৭ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ৭ জন, পরিবহন সম্পাদক পদে ৪ জন, সমাজসেবা ও শিক্ষার্থী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদে ৭ জন এবং সদস্য পদে ৫৭ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল সংসদে ১৩টি পদের বিপরীতে মোট ৩৩ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই তালিকায় দেখা যায়, সভাপতি (ভিপি) পদে ৩ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৩ জন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২ জন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ২ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ৪ জন, পাঠাগার সম্পাদক পদে ২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ২ জন, সমাজসেবা ও শিক্ষার্থীকল্যাণ সম্পাদক পদে ৩ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ৪ জন এবং চারটি সদস্য পদের বিপরীতে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এর আগে গত ১৭ ও ১৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ও হল শিক্ষার্থী সংসদে ৩৪ পদের বিপরীতে ৩১২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে ২৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তাঁদের মধ্য থেকে ২৩১ জনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদে ১৯৪ জন এবং হল সংসদে ৩৭ জনের নাম ছিল।
সবশেষ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে আরও ৩৮ জন বাদ পড়ায় বর্তমানে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একইভাবে ৮ জন বাদ পড়ায় হল সংসদে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন, ‘আমরা সবার সবকিছু যাচাই-বাছাই করে জকসুর কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থিতা প্রকাশ করেছি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে থাকা প্রার্থীদের সব অভিযোগের ভিত্তিতে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এতে ডোপ টেস্ট ও বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক প্রার্থী বাদ পড়েছেন।’
তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করা হয় ৯ ও ১০ ডিসেম্বর। অধ্যাপক মোস্তফা হাসান আরও বলেন, ‘বাদ যাওয়া প্রার্থীরা চাইলে আগামী রোরবার পর্যন্ত আপিল করার সুযোগ রয়েছে।’
তবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে জকসুর নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান মোস্তফা হাসান।
প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিন প্রার্থী
এদিকে জকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিলের পর আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (রুটিন দায়িত্বে) মো. শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদের প্রার্থী আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের রাসেল, ক্রীড়া সম্পাদক পদে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আব্দুল্লাহ সালেহ চৌধুরী এবং বাম জোট সমর্থিত ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী শাহরিয়ার আদিব।
এর আগে জকসু ও হল সংসদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ১৭ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েক ধাপে আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে। প্রথম ধাপে ছয়জনের পর এবার দ্বিতীয় ধাপে আরও তিনজনের আপিল মঞ্জুর করা হলো।
এ বিষয়ে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসান বলেন, ‘বাদ পড়ে যাওয়া প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থিতার অনুমোদন দেওয়া হয়।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন। ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।