প্রসূতির মৃত্যু কমলেও লক্ষ্যপূরণ বহুদূর
Published: 27th, May 2025 GMT
মায়ের মৃত্যুর পর বড় দুই ভাই জোর করে প্রবাসীর সঙ্গে খাদিজা খাতুনকে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেন। বছর ঘুরতেই গর্ভধারণ, গত বছর জুলাইয়ে বাড়িতে সন্তান প্রসবের সময় মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বিদ্যাকুটের খাদিজা।
ঘটনার বিষয়ে চাচাতো বোন পারুল আক্তার বলেন, ‘সন্তান প্রসবের পর ফুল আসেনি। রাতভর অপেক্ষার পর ভোরে খাদিজাকে নেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। ততক্ষণে রক্তক্ষরণে সব শেষ!’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩-এর গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল’ অনুসারে, গর্ভাবস্থা, প্রসবকাল ও প্রসবের পর ৪২ দিনের মধ্যে মায়ের মৃত্যু হলে তা প্রসূতির মৃত্যু বিবেচনা করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয়ভাবে ২০২৩ সালে এক লাখ জীবিত সন্তান প্রসবে ১৩৬ প্রসূতির মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে ১৫৩, ২০২১ সালে ১৬৮ ও ২০২০ সালে ছিল ১৬৩ জন।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রসূতির মৃত্যু ৭০ শতাংশে বা প্রতি লাখে ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে প্রসূতির মৃত্যু কমতে থাকা আশাব্যঞ্জক। তবে প্রাতিষ্ঠানকি প্রসব সেবা দেওয়া না গেলে প্রসূতির মৃত্যু প্রতি লাখে ৭০ জনের নিচে আনা কঠিন হবে।
বিবিএস জরিপ অনুসারে, এখনও বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার ৩৩ শতাংশ। চার বা তার বেশি প্রসবপূর্ব সেবা নেওয়ার হার মাত্র ৩৯ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে আজ বুধবার পালিত হবে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘মায়ের যত্নের ন্যায্যতা : কোনো মা স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে থাকবে না’।
জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও মেরী স্টোপস বাংলাদেশের লিড অব অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন মনজুন নাহার সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে এখনও বাড়িতে অর্ধেকের বেশি সন্তান প্রসব হচ্ছে। এতে বাড়ছে প্রসূতির মৃত্যু। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হলে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় জরুরি। প্রচার বাড়াতে হবে। দিবসটি জাতীয়ভাবে উদযাপনে আটকে না রেখে উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে নিরাপদ প্রসব সেবার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে সম্ভব হবে এসডিজি লক্ষ্যপূরণ।
গর্ভকালীন চেকআপে অনাগ্রহ
গর্ভধারণের পর নিয়মিত চেকআপে কমিয়ে আনা সম্ভব প্রসূতি ও গর্ভের সন্তানের মৃত্যুঝুঁকি। দেশে কমপক্ষে চারটি গর্ভকালীন চেকআপে যাওয়া নারীর সংখ্যা কমছে। গবেষণা বলছে, শহরে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রসূতি গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার চেকআপে যান। গ্রামাঞ্চলে এটি ১৭ দশমিক ৯ বা প্রতি পাঁচজনে একজন।
মনজুন নাহার জানান, গর্ভধারণের পর প্রথম চেকআপ করাচ্ছেন ৬৪ শতাংশ প্রসূতি। অথচ দ্বিতীয় চেকআপে এটি কমে ২০ শতাংশে ঠেকছে। তৃতীয় চেকআপের তথ্য আরও নাজুক। কমপক্ষে চারবার প্রসূতি সেবা গ্রহণের হার বাড়ানো জরুরি।
কমছে না বাল্যবিয়ে
দেশের ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণীর বিয়ে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই হয়েছে। বিবিএস পরিচালিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩ (বিএসভিএস-২০২৩)’ শীর্ষক জরিপে দেখা গেছে, গত তিন বছরে দেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে।
২০২২ সালে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, অন্তত ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর বিয়ে ১৮ বছর বয়সের আগেই হয়েছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩২ দশমিক ৪ এবং ২০২০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাসিক নিয়মিতকরণ সেবাসমূহ অনুমোদিত হওয়া সত্ত্বেও অনিরাপদ গর্ভপাতের শিকার হয়ে অনেকে মৃত্যুঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও মাসিক নিয়মিতকরণ চিকিৎসা গ্রহণে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে এমআর, এমআরএম এবং পিএসি সেবা প্রদানে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা কার্যক্রম সারাদেশে সব পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে মৃতের পরিবারের
সদস্যসহ গঠিত কমিটির মাধ্যমে কার্যকর করার পরামর্শ দেন তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বস প রস ত র ম ত য প রসব র ন র পদ চ কআপ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।