চার মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে বাম দলগুলো
Published: 27th, May 2025 GMT
বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে বাম দলগুলো। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশেও সায় নেই তাদের। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন চায় তারা। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাক– এটি চায় না বাম দলগুলো।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যভুক্ত চারটি দল প্রথম দফার সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে এসব মতামত জানিয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ কয়েকটি দল সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে কী পরিবর্তন চায়, তা জানিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব দিলেও বাম দলগুলো তা দেয়নি। ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশে লিখিত ও মৌখিক মতামত দিয়েছে তারা।
সংলাপে সিপিবি ও বাসদ বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি– জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বহাল রাখার পক্ষে মত দেয়।
বাংলাদেশ জাসদ সংবিধানের গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার চরিত্র বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাবনা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মত দেয় তারা। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়গুলো নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক এড়ানোর কথাও বলেছে তারা।
এনসিসি গঠন হলে দ্বৈত প্রশাসন ও ‘সুপার গভর্নমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা হবে মত দিয়ে এর বিরোধিতা করেছে বামেরা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(ক) ও ৭(খ) বাতিলের প্রস্তাবে সিপিবি ও বাসদ একমত হলেও জোরপূর্বক সংবিধান বাতিল করা অপরাধ-সংক্রান্ত ৭(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
প্রাদেশিক ব্যবস্থা এবং জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে সিপিবি ও বাসদ। গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতার পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সমকালকে বলেছেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংস্কার দরকার।
ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থ, পেশিশক্তি, অস্ত্রের প্রভাব ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছে বাম দলগুলো। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি তারা। সংসদে নারী সদস্যের সংখ্যা ১০০ করে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত তারা।
বাম দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর পদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশে একমত হলেও প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হবে কিনা– দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারণের এখতিয়ার রাখায় মত দিয়েছে।
রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে বাসদ। বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো দুরূহ। মৌলিক বিরোধের বিষয়গুলো বাদ রেখে কাছাকাছি ও আংশিক ঐকমত্য যেখানে আছে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেখানে ঐকমত্য পৌঁছান যাবে, সেগুলো নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদ সংবিধান থেকে ৭ মার্চের ভাষণ অপসারণকে সমর্থন করেনি। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল থাকবে বলে মত দেয় তারা। ‘আদিবাসী’ অভিধার সংজ্ঞাসহ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে, সেগুলো অধ্যাদেশ ও প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা যেতে পারে। যেসব প্রশ্নে দ্বিমত থাকবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রাখতে সংসদের তৈরি সংলাপ কাঠামোকে দায়িত্ব দিতে হবে।
বাসদ (মার্ক্সবাদী) সংসদের মেয়াদ চার বছর করা, এক ব্যক্তির টানা দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে না পারা এবং সংবিধান সংশোধনে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে। বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, অনেক বিষয় যথার্থ মনে হয়নি, আরও ব্যাখ্যার প্রয়োজন। আরও আলাপ-আলোচনা করতে হবে। মতপার্থক্যের জায়গাগুলো দূর করতে হবে।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চার মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ হয়েছে। এ বিষয়ে আরও আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে আসা যেতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব দ য় ছ গণত ন ত র ক ব ম দলগ ল ঐকমত য মত দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।
জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।
জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।