ফতুল্লায় পশুর হাটের দরপত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ২০, আটক ৮
Published: 28th, May 2025 GMT
ফতুল্লায় কোরবানীর পশুর হাটের দরপত্র ক্রয় নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০জন আহত হয়েছেন। তখন পুলিশ ধাওয়া করে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং ৮ জনকে আটক করেন। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় অবস্থিত সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার, বিএনপি নেতা লাভলু, ফতুল্লা থানা যুবদলের সদস্য সচিব সালাউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফ প্রধান, হানিফ, জাকিরসহ অন্তত ২০জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদরের গোপনগর ইউনিয়ন থেকে ৩০/৩৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী সকালে উপজেলায় আসে। এরপর তারা কিছু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাশের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়। আর কিছু উপজেলা পরিষদের মাঠে অবস্থান নেয়।
যারা হাটের সিডিউল ক্রয় করে বাহিরে বের হয় তাদেরই দেহ তল্লাশী করে শিডিউল রেখে দেয়। সকালে ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা লাভলুর উপর হামলা করে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রুবেলের অনুসারিরা।
পুলিশের সামনে তাকে মাটিতে ফেলে কিল ঘুষি মেরে দরপত্র ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। দুপুর ১২টায় একই হাটের দরপত্র কেনেন জাকির নামের আরেক ব্যবসায়ী। তিনিও দরপত্র নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথেই তার উপর হামলা করে রুবেল মেম্বারের অনুসারিরা।
বিকেল চারটায় বৃষ্টির মধ্যে একই হাটের দরপত্র কেনা নিয়ে পুনরায় রুবেল মেম্বারের অনুসারিরা ফতুল্লা থানা যুবদলের সদস্য সচিব সালাউদ্দিন ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফ প্রধানের উপর হামলা করে।
বিকেলে ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার আসেন উপজেলায়। তখন তার সামনে ওই সন্ত্রাসী উশৃঙ্খলাতা করলে সে প্রতিবাদ করেন। এসময় সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করেন। রুহুল আমিন শিকদারের লোকজন জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসলে দুই গ্রুপের সংঘাত বেধে যায়।
পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন ওই সন্ত্রাসীদের মধ্যে কিছু পালিয়ে যায় আর ৮জন উপজেলা কার্যালয়ের অফিস কক্ষে আশ্রয় নেয়। এসময় পুলিশ তাদের আটক করেন। তাৎক্ষণিকভাবে আটকদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, সদরের ১৫টি পশুর হাটের শিডিউল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু উশৃঙ্খল যুবক পরিস্থিতি অশান্ত করে। তাদের আটক করা হয়েছে। নাম-পরিচয় জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ স ঘর ষ য বদল য বদল ব এনপ ন র য়ণগঞ জ গর র হ ট হ ট র দরপত র উপজ ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যালয়ের ভবন বানাতে পাহাড়ে কোপ, দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে নগরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় চত্বরে নতুন ভবন নির্মাণের নামে প্রায় দেড় মাস ধরে পাহাড় কাটা হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। এগুলো পরিষ্কার করে জমি সমতল করার কাজও চলছে।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল আমিন ভবন নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা লিখিতভাবে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুসারে পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। তবু বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজের আড়ালে পাহাড় কাটা চলতে থাকে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামী পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে, তাই ভবন নির্মাণ করা দরকার। পাহাড়টি সামান্য কাটার কথা ছিল। কিন্তু বেশি কাটা হয়েছে। তবে তিন সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।মো. কামরুল আহসান, নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরপরিবেশ অধিদপ্তর ২ ডিসেম্বর গিয়ে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর কার্যালয়ের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় ও গাছ কেটে ভবন তৈরির কোনো সুযোগ নেই। আইন অমান্য করে পাহাড় কাটা হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে তিনি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এ এস এম এমদাদুল কবীরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ এস এম এমদাদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি ঘটে থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। শিগগিরই বিদ্যালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন। কতটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে, কেন কাটা হয়েছে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।
দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত
মহসিন স্কুলের ভবন নির্মাণ চলছে ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পে সারা দেশে ৩২৩টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের আরও চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু মহসিন স্কুলে অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠায় এ প্রকল্পের দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি বলছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৮০টি। কিন্তু অধিকাংশ মামলাই অর্থদণ্ডে নিষ্পত্তি হয়েছে।পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২ ডিসেম্বর দুপুরে পাঁচ পরিবেশকর্মী ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামীর কাছে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চান। তাঁরা প্রধান শিক্ষককে বলেন, পাহাড় কেটে ভবন হতে পারে না।
পরিবেশকর্মী রিতু পারভী বলেন, ‘গাছ কাটার খবর শুনে গিয়ে দেখি পাহাড়ও কাটা হচ্ছে। আরও কাটার প্রস্তুতি ছিল। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের আর কোনো উদাহরণ তৈরি হতে দেব না।’
পাহাড়ের সঙ্গে কাটা হয়েছে কয়েকটি গাছ। সম্প্রতি তোলা