যে যেভাবেই বলুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়- বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। 

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহীর শাহমখদুম দরগা শরীফের সামনে দোয়া ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মিনু বলেন, ‘‘যে যেভাবেই বলুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য তাকিয়ে আছে। আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশের নির্বাচন হবে এবং শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিকদের আল্লাহ সুযোগ দিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে।’’ 

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিনু বলেন, ‘‘শহীদ জিয়া গণতন্ত্রের জন্য বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই গণতন্ত্র আগামী দিনে আবার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। শহীদ জিয়ার আদর্শে ও বেগম খালেদা জিয়ার যে আদর্শে আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে শহীদ জিয়ার মতো আবার স্বনির্ভর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।’’ 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খোকার সভাপতিত্বে ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নগরের বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/কেয়া/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

থামতে না জানা জাতির ভবিষ্যৎ কী

মানবজীবনের মৌলিক শিক্ষা হলো– থামতে জানা। দৌড় প্রতিযোগিতার যেমন সুনির্দিষ্ট গন্তব্য থাকে, তেমনি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ধাপে থামার, ভাবার এবং আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন আছে। কারও প্রেমে অন্ধ হয়ে, বঞ্চনাবোধ থেকে আত্মহত্যার পথ না বেছে কিংবা অন্যের চরিত্র হননের চেষ্টা না করে মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই থামতে জানার প্রকৃত কৌশল। এমনকি শত্রু মোকাবিলায় ‘ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ প্রতিপক্ষকেও জানতে হয় কোথায় থামতে হবে। অন্যথায় সে নিজেই ষড়যন্ত্রের বুমেরাংয়ের শিকার হয়। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা যেমন নারীবিদ্বেষী বক্তব্যে কোথায় থামতে হবে– ভুলে যায়; তেমনি নারীবাদীরাও অনেক সময় ভুলে যায়– প্রাসঙ্গিকতা ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় কোথায় থামতে হবে। সীমাবদ্ধতা স্বীকারের শিক্ষা অর্থাৎ থামতে পারা এক ধরনের সৃষ্টিশীলতা।

সবদিক বিবেচনায়, রাজনীতিবিদদের থামতে না জানার পরিণামই সবচেয়ে বিস্তৃত ও ভয়াবহ, যার খেসারত আমরা দিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতার জন্য লালসা এবং বিশেষত নিজেদের মধ্যে যে কোনো জাতীয় অর্জনের ক্রেডিট ভাগাভাগির লড়াই আমাদের স্থায়ী জাতিগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা আমাদের অজান্তেই অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়াই রাজনৈতিক দায়, দরদ ও সুস্থতার প্রতীক। থামতে না জানার কারণে একের পর এক গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ঘটে যাচ্ছে, যা জাতিকে নিয়ে গেছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থা পরিপন্থি সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর সংযোজন আওয়ামী লীগ সরকারের থামতে না জানার প্রথম রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন। পরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রের যে নতুন সূচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালে, সেটিও ২০০১ সালের পর থামতে না জানার পথে গড়াতে থাকে। তৎকালীন বিএনপি সরকার বিচারপতিদের বয়সসীমা বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনের ওপর হস্তক্ষেপ, কেয়ারটেকার ব্যবস্থা দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল। এগুলো আমাদের থামতে না জানার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ আসে ‘ওয়ান ইলেভেন’-এর শাসন। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটলেও কাল হয় তাঁর থামতে না জানা। 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল সর্বজনীন জনযুদ্ধ। যুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ বিশেষত এই সময়ে নিজেকে একক কৃতিত্বের রাজনীতি করে। যার মেকানিক্যাল অ্যাপ্রোচ ছিল– মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির বাইনারি তৈরির মাধ্যমে বিভাজিত সমাজের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়। হয়েছিলও অনেকটা তাই। দেশবাসী দুটি কৃত্রিম জাতিতে বিভক্ত হয়ে হুতু-তুতসির মতো জাতিগত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তিনির্ভর স্বৈরতন্ত্র ও ‘অবিকল্প নেতৃত্ব’ ধারার উত্থান, যা মূলত শেখ হাসিনাকে থামতে না জানা শিখিয়েছিল। এই থামতে না জানা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে ‘রাজাকারের আন্দোলন’ বলে ট্যাগ দেওয়া হয়। ফলে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে তাঁর দেশত্যাগ থামতে না জানারই পরিণতি হিসেবে দেখা যায়। 

গণঅভ্যুত্থানের ফসল ঘিরে একক কৃতিত্ব দাবি করতে উদ্যত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেতরে ‘লুকিয়ে থাকা’ ইসলামী ছাত্রশিবির। বিপত্তির সূচনা তখনই ঘটে, যার চূড়ান্ত প্রকাশ শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উচ্চারিত এক স্লোগানে– ‘গোলাম আযমের বাংলায়, আওয়ামী লীগের স্থান নাই’। জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোথায় থামতে হবে, সেই বোধের অভাব বর্তমান রাজনীতিকে অধিকতর জটিল করে তুলছে বলে মেটান্যারেটিভ হাজির হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, থামতে না জানার ইতিহাসে কি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও যুক্ত হচ্ছে? ধীরে ধীরে এই প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয়। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘অস্পষ্ট’ সংস্কার নির্ভরশীলতা কিংবা ‘অজুহাত’ এবং নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপের অনুপস্থিতি খুব বেশি দৃশ্যমান না হওয়ায় এই প্রসঙ্গ ক্রমেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তাঁকেও কোথাও না কোথাও থামার বা স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার প্রশ্নে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হচ্ছে। যদি থামতে না জানেন; রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী তিনিও ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, আবারও যার ভুক্তভোগী হবে দেশবাসী। 

বিএনপির ক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কিছু নেতাকর্মীর বেফাঁস বক্তব্য। বিএনপির উচিত হবে আরও সংযত ভাষা ও গণতান্ত্রিক কর্মকৌশল গ্রহণ এবং জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক চর্চা করা। বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সমান্তরালে দেখানো, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতর থেকেও যখন বিএনপিকে আওয়ামী লীগের মতোই ‘দল’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, তখন রাজনৈতিক বিভ্রান্তি আরও বৃদ্ধি পায়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য পথ। অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে যদি ঐক্যহীনতা বা একে অপরকে দোষারোপের সংস্কৃতি জেঁকে বসে, তবে সেই ফাঁক দিয়ে বিদেশি শক্তি কিংবা সামরিক শক্তির উত্থান ঘটার আশঙ্কা থাকে।

সমাধান হিসেবে এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের রেফারির ভূমিকা অপরিহার্য। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য যত সময় প্রয়োজন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে থামতে, পর্যালোচনা করতে, জনদুর্ভোগ বুঝতে এবং সহনশীল গণতন্ত্রে ফিরে আসার তাগিদ থাকতে হবে।

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী: বিভাগীয় প্রধান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সব শহীদের জন্য দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
  • একুশে সমকাল শুভেচ্ছা কৃতজ্ঞতা
  •  তারা সংস্কারের নামে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় : রোজেল
  • জিয়া স্বীয় কীর্তিতে অমর মহানায়ক: কাদের গনি চৌধুরী
  • নির্বাচনের ডেট দিন, না হলে আমরাই দিয়ে দেব: দুদু
  • গণতন্ত্র পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে : খালেদা জিয়া
  • গণতন্ত্র আজো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: খালেদা জিয়া
  • গণতন্ত্র আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: খালেদা জিয়া
  • থামতে না জানা জাতির ভবিষ্যৎ কী