সমুদ্রসৈকত, পার্ক ও স্কুলের কাছে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ফ্রান্স
Published: 30th, May 2025 GMT
শিশুরা সচরাচর যাতায়াত করে, এমন সব জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। দেশটির স্বাস্থ্য ও পরিবারবিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ভত্রাঁ এমনটি বলেছেন।
আগামী ১ জুলাই থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এসব জায়গার আওতায় থাকবে সমুদ্রসৈকত, পার্ক, উন্মুক্ত উদ্যান, স্কুলের বাইরের এলাকা, বাসস্টপ এবং খেলার জায়গা।
ওয়েস্ট-ফ্রান্স দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যাথরিন ভত্রাঁ বলেন, ‘যেখানে শিশুরা থাকে, সেখানে তামাকের অস্তিত্ব থাকা চলবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধূমপানের স্বাধীনতা সেখানে শেষ হওয়া উচিত, যেখানে শিশুদের নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতা শুরু হয়।’
এই মন্ত্রী বলেন, ক্যাফে ও বারের বাইরের অংশ এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। এই নিয়ম ভাঙলে ১৩৫ ইউরো জরিমানা গুনতে হবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকার বেশি। সাধারণ পুলিশ এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবে। তবে মানুষ এ নিয়ম মেনে চলবে বলে আশা করছেন তিনি।
তবে ই-সিগারেট এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে না। ক্যাথরিন বলেন, ই-সিগারেটে নিকোটিনের পরিমাণ সীমিত করতে কাজ করছেন।
ফরাসি মাদক ও মাদকাসক্তি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে প্রতিদিন ২৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ধূমপান করেন, যা এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। ২০১৪ সালের পর এই হার ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল কমিটি অ্যাগেইনস্ট স্মোকিং জানায়, প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ৭৫ হাজারের বেশি ধূমপায়ী মারা যান, দেশটিতে যা মোট মৃত্যুর ১৩ শতাংশ।
ফ্রান্সের রেস্তোরাঁ ও নাইটক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় ধূমপান ২০০৮ সাল থেকেই নিষিদ্ধ।
২০২৪ সালে সমুদ্রসৈকত, পার্ক ও অন্যান্য খালি জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করার ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল ফ্রান্স সরকারের। কিন্তু সে সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তবে ইতিমধ্যে দেড় হাজারের বেশি পৌরসভা স্বেচ্ছায় খোলা জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে এবং ফ্রান্সের শত শত সমুদ্রসৈকত কয়েক বছর ধরেই ধূমপানমুক্ত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫