আপনারা রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা, নট সরকারের: চুন্নু
Published: 30th, May 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন,“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলতে কিছু নেই। সাময়িক প্রশাসন পরিচালনার জন্য আপনারা রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা নট সরকারের। কিন্তু তারপরও আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে চেয়েছিলাম। আমাদের কী অপরাধ। আমাদের বাড়িতে আমরা থাকতে পারছি না। অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নিন।”
দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে জাতীয় পার্টি আয়োজিত কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
রংপুরে জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা
নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউ সংস্কার করতে পারবে না: জিএম কাদের
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমরা বলতে চাই না যে, দেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলতে কোনো ব্যবস্থা নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপপতি যখন আর্টিকেল হানড্রেড সিক্সটির সংবিধানের অধীনে রেফারেন্স পাঠান সেই রেফারেন্সে যেই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেখানে লেখা আছে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা বলে কোনো কিছু নাই। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা করতে পারেন, কিন্তু সংবিধানে যেই জিনিস নাই সেটা তারা করতে পারেন না। যার ফলে সেই রেফারেন্সে লেখা আছে রাষ্ট্রপতিকে তারা বলেছেন, সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো বিধি নাই। তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রশাসন পরিচালনা করার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন। নট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এব প্রধান উপদেষ্টা। আমি এটা ডকুমেন্টারি বলতে পারবে, যে রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে থেকে পাঠানো হয়েছিল সেখানে সুস্পষ্ট লেখা আছে রাষ্ট্রপতি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারবেন। তারা রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা, নট সরকারের।”
“তারপরও আমরা এই প্রশ্নে যেতে চাই না কারণ সরকারের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা জানি না আমাদের কী অপরাধ। অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেন, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা সেই, আমি আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না এটা তো হতে পারে না।”
বর্তমান সরকারের কাছে চুন্নু প্রশ্ন রাখেন, “দেশের মানুষ নিজের ঘরে নিরাপদে থাকতে পারবে না? গতকাল রাতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের রংপুরে নিজ বাসভবনে অবস্থান করছিলেন, তখন এনসিপি তার বাসভবনে হামলা করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।একটি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এমন একটি অনিরাপদ দেশের জন্য কী আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছিল? দেশের মানুষ অনেক আশা করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল, বর্তমান সরকার কী সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে? সরকার গঠনের ৯ মাস পরেও দেশকে নিরাপদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বৈষম্যবিরোধীর নামে বাড়ি ঘরে হামলা এটা মেনে নেওয়া যায় না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করতে পারে না। মব জাস্টিসের নামে যখন তখন সাধারণ মানুষের ওপর হামলা আর মেনে নেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে না, এরচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “মব জাস্টিসের নামে বেআইনি ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের নতুন একটি দলকে সমর্থন করায় বর্তমান সরকারে প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপিসহ অনেকগুলো দল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়, আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকারের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। বর্তমান সরকার যদি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায় তাহলে, মবজাস্টিসের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।যারা জিএম কাদেরের বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলা করেছে তাদের বিচার করবে, না হলে বর্তমান সরকারকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে।”
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণ জাপার আহ্বায়ক মীর আব্দুস সবুর আসুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকটে মো.
সমাবেশ শেষে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাকরাইল অফিস থেকে বিজয়নগর মোড় হয়ে পানির ট্যাংকি ঘুরে আবার জাপা অফিসে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসনে খোকা, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাঈনুর রাব্বি চৌধুরী রুমান, একে এম নূরুজ্জামান জামান, ভাইস-চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, এস এম সোবহান, মো. হুমায়ুন খান, শামসুল হক, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, দ্বীন ইসলাম, খন্দকার দেলোয়ার জালালী, মাহমুদ আলম, এম এ রাজ্জাক খান, ইমরানুল হক, জহরিুল ইসলাম মিন্টু, সমরেশ মন্ডল, রুবেল, উজ্জ্বল চাকমা, পারভেজ সাজ্জাদ, আসাদুজ্জামান, কৃষক পার্টির এম এ কুদ্দুস মানিক, মটর শ্রমিক পার্টির মেহেদী হাসান, ছাত্রসমাজের মারুফ ইসলাম তালুকদার ও নাজমুল হাসান প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র র উপ দ ষ ট ল ইসল ম ব সভবন ন র পদ রক র র অপর ধ যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রাতেই কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। পরে ২০ জুলাই রাত আটটায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।