অনলাইনে আম বিক্রি জমে উঠেছে, তরুণ উদ্যোক্তা বাড়ছে
Published: 30th, May 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা মোবাইল অ্যাপ এসব মাধ্যমেই আম বিক্রিতে ঝোঁক বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তরুণেরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কেউ কেউ সরাসরি বাগান থেকে, আবার কেউবা আশপাশের বাজার কিংবা আম চাষিদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে ৫ হাজারের বেশি ছোট–বড় বিক্রেতা অনলাইনে আম ও বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ব্যবসা করেন। তবে গ্রীষ্মকালীন আমের ব্যবসাই সবচেয়ে বড়। কারণ, অন্যান্য ফলের চেয়ে আমের চাহিদা বেশি থাকে।
অনলাইনে আম ব্যবসায়ীদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই তুলনামূলক বেশি। তেমনই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রীদওয়ানুল আলম। বাবার ব্যবসায়ের হাল ধরার জন্য আট মাস আগে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর নিজ এলাকায় চলে যান। বাবার ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি শখের বসে ফেসবুকে ‘আমবাজার-চাঁপাই’ নামের একটি পেজ খোলেন। ১৭ মে থেকে শুরু করেন ব্যবসা। এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা, মহারাজপুর ও কাশিমপুর এলাকায় ৮০টি গাছের আম কিনেছেন। এখন পর্যন্ত ৪৬ মণ আম বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ সময়ে অনলাইনে আমের চাহিদা বেশি থাকে। তাই বাবার ব্যবসার পাশাপাশি নিজেও কিছু করার পরিকল্পনা থেকে এই ব্যবসা শুরু করেছি।’
মূলত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলে অনলাইনে আম বিক্রি। অনলাইনে বিক্রি হওয়া আম মূলত কুরিয়ার সার্ভিস বা বাসের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। তখনয় ক্রেতারা কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়ে এসে আম নিয়ে যান। তবে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ক্রেতাদের ঠিকানায়ও আম পৌঁছে দেয়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেয় তারা।
এ বিষয়ে স্টেডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিদওয়ানুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুরিয়ারে আম পরিবহনের বেশির ভাগই অনলাইনে বিক্রি হওয়া। আমাদের মাধ্যমে ১৫০ থেকে ২০০ জন আম ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পাঠান। এ বছর অনলাইনে বিক্রি করা আমের পরিবহন খরচ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু সাতক্ষীরা থেকে ১৫০ টন আম আমাদের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আমের পরিবহন শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। রাজশাহীর আম পরিবহন সাতক্ষীরার থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি হবে।’
অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে আম বিক্রি
ফেসবুকের পাশাপাশি অ্যাপ আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আম বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আলাদা আলাদা দাম নির্ধারণ করে বিভিন্ন প্যাকেজ আকারে বিক্রি করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান পাঁচ কেজি আকারের উপহার প্যাকেজও বিক্রি করছে। কেউ আবার আমের পাশাপাশি অন্যান্য মৌসুমি ফলও বিক্রি করেন।
প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় ‘ফজলি ডট কম’ নামের ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি প্রথম দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে আম বিক্রি করতেন। ২০১২ সালে চালু করেন ওয়েবসাইট। তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাঁর ৪০ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। তবে অনলাইনে চাহিদা মেটানোর জন্য রাজশাহী, রংপুর ও সাতক্ষীরা থেকে আম সংগ্রহ করতে হয়। গত বছর অনলাইনে প্রায় ৭০ হাজার কেজি আম বিক্রি করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে অনার্স শেষে ২০১৩ সালে এমবিএ শেষ করেন হাসান তানভীর। প্রথম দিকে ‘রাজশাহী ম্যাঙ্গো’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে আম বিক্রি শুরু করেন। সে বছর অনলাইন ও পরিচিত মানুষের কাছে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার আম বিক্রি করেন। তারপর ২০১৮ সালে পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরি করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করেন। ২০১৯ সালে তৈরি করেন মোবাইল অ্যাপ। হাসান তানভীর বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে ৮০ হাজার কেজি আম বিক্রি করেছি। প্রতিবছর অনলাইনে আম বিক্রি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে।’
হাসান তানভীর আরও বলেন, অনলাইনে বিক্রি বাড়লেও প্রতিবছর অনলাইনে আম বিক্রির নামে প্রতারণার ঘটনাও ঘটে। অনেকেই নানাভাবে প্রতারণার শিকার হন। তা সত্ত্বেও অনলাইনে আম বিক্রি প্রতিবছরই বাড়ছে।
রাজধানীর বেইলি রোডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফারিন আহমেদ বলেন, ‘প্রথমবার যখন অনলাইনে আম কিনেছি, সেবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। তবে অনলাইনে আম কেনার জন্য বেশ কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনলাইনে আম কিনলে হোম ডেলিভারি পাওয়া যায়। তাই অনলাইন থেকে আম কিনি।’
খুলনার বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এই বিভাগে ৭ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন। আর রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্যমতে, এই বিভাগে চলতি বছরে আম চাষ হয়েছে ৯৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তাতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৫ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন। যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই বিভাগে অনলাইনে আম বিক্রির ১৬টির বেশি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক ছোট–বড় ব্যবসায়ী রয়েছে পাঁচ শর বেশি। খুলনা বিভাগের মোট উৎপাদিত আমের ২০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম ব ক র ব যবস য় র ব যবস পর বহন আম ক ন ফ সব ক প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।