তামাক এখন আর অভ্যাস নয়, এটি মারাত্মক নীরব ঘাতক। যা ধীরে ধীরে গ্রাস করছে আমাদের শরীর, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই তামাককে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা শ্বাসতন্ত্রের অসুখের জন্য দায়ী করে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, তামাকজনিত ধোঁয়া কিডনির জন্যও ক্ষতিকর। 

এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’—এ যেন সময়োপযোগী এক জাগরণ।

তামাক কোম্পানির ছলচাতুরি

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে কেন্দ্র করে দেশের ৬৪টি জেলায় র‍্যালি, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, আলোচনা সভা, গণমাধ্যম প্রচারণা ও স্কুল-কলেজে পোস্টার প্রদর্শনীসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে নতুন প্রজন্মকে আসক্ত করছে। কখনও ফ্লেভার্ড ই-সিগারেট, কখনও রঙিন মোড়কে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, আবার কখনও কর ফাঁকির ফাঁদ। সব কিছুই এক সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা.

শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘‘তামাক কোম্পানিগুলো স্কুলের পাশেই ফ্লেভার্ড ই-সিগারেট বিক্রি করছে, যা আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারা শিশু-কিশোরদের ধোঁয়ার দুনিয়ায় ঠেলে দিচ্ছে।’’

বাংলাদেশের চিত্র 

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে (জিএটিএস) ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ধূমপায়ী প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ। বাকিরা ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন জর্দা, গুল বা খয়ের ব্যবহার করেন। প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে মারা যান প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। এ ছাড়া আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা সরাসরি স্বাস্থ্যখাতে বোঝা হয়ে পড়ে।

ধূমপান কিডনির জন্যও নীরব ঘাতক

ধূমপান যে শুধু ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর তা বহুদিনের জানা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই ধোঁয়া ধীরে ধীরে নষ্ট করছে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। ব্রিটেনের কিডনি রিসার্চ সংস্থা ‘কিডনি রিসার্চ ইউকে’ এক প্রতিবেদনে জানায়, ধূমপান কিডনির রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে। এসবের সম্মিলিত প্রভাবে কিডনি ফেইলিওরের মতো মারাত্মক অবস্থা তৈরি হতে পারে। 

ন্যাচার নামক আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধূমপানকারীদের কিডনির কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। গবেষণা বলছে, ধূমপান কিডনির জন্য নীরব ঘাতক। রোগীরা বুঝতেই পারেন না, কীভাবে কিডনি নষ্ট হচ্ছে। তবে আশার খবর হলো, ধূমপান বন্ধ করলে কিডনি কোষগুলো পুনরায় সচল হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ডা. ভিটার তথ্যমতে, ধূমপান ছাড়ার এক বছরের মধ্যেই রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং কিডনিতে রক্তপ্রবাহ বাড়ে।

আইন, বাস্তবতা ও নাগরিক দায়িত্ব

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, ‘‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের কাজ প্রায় শেষ। এতে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ, তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ এবং কর কাঠামো আরও শক্তিশালী করার বিধান রাখা হয়েছে।’’

তবে বাস্তবতা বলছে, আইন যতই কঠিন হোক, বাস্তবায়নে রয়েছে দুর্বলতা। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং তামাক কোম্পানির প্রভাব বলয়ের কারণে এই মহৎ উদ্যোগ অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হয়।

স্বাস্থ্য আন্দোলনের সদস্য ডা. রাশেদা বেগম বলেন, ‘‘যে শিশুটি আজ ই-সিগারেট নিচ্ছে, সেই ভবিষ্যতে ক্যানসার রোগী হবে। এটা শুধু স্বাস্থ্য নয়, সামাজিক ও নৈতিক সংকট।’’
 

ঢাকা/এএএম//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ডন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান