ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুমের শিকার হয়েছেন ৭৩০ ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ৮৩ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফেরত না আসা ব্যক্তির সংখ্যা ১৬২।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গুমের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার কর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ (১৭ থেকে ৩১ মে) পালন উপলক্ষে সভাটি আয়োজন করে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার।

সভায় গুম থেকে ফেরত আসা সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, ‘গুমের সব আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আয়নাঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তাঁর অভিযোগ, ‘গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য কিছুই করেনি।’
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের দাবি জানান গুম থেকে ফিরে আসা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে আহমাদ বিন কাসেম আরমান। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে পুনর্বাসনের জন্য আলাদা কমিশন বা কমিটি গঠন করা হোক।’
অধিকারের সভাপতি তাসনিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন সাংবাদিক ফাইজুল হাকিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক শহীদুজ্জামান প্রমুখ।
আয়নাঘরের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনা

সভায় শেখ হাসিনাকে আয়নাঘরের নিউক্লিয়াস উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বিচারের কাজ পুরোদমে এগোচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ করতে যুক্তিসংগত সময় লাগবে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি উল্লেখযোগ্য গুম ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। জুন মাসের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো পাওয়া যাবে। গুমের ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে।’
বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা অনেকটা দূর হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধের কাঠামো এবং অপরাধী সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোটাদাগে তথ্য চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা থেকেই গেছে।

তাজুল ইসলাম জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তারা খুবই সাবধানতা অবলম্বন করছেন। বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও মানবাধিকার রক্ষা করার দিকে নজর রাখছেন। বিচারের নামে অতীতে যে অবিচার হয়েছে, সেগুলো যেন না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন।
সভায় দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-সংক্রান্ত একটি ছবি প্রকাশ করার কারণে তাঁকেসহ দৃকের কর্মরতদের র‍্যাব কীভাবে হেনস্তা করেছিল, তা তুলে ধরেন।
অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা তাসনীম ফাহমিনা অধিকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন তিনি। গুম প্রতিরোধে কার্যকর আইন প্রণয়নে যে খসড়া করা হয়েছে, তাতে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উল ল খ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গাওয়ার পর পালিয়ে থাকতে হয়েছিল

শিল্পীর সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ