ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার আয়োজনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের স্থানীয় নেতাদের হট্টগোল হয়।

শনিবার (৩১ মে) বিকালে কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে থানা চত্বরে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক। অতিথিদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

সুধী সমাবেশের অন্যান্যের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি আলমাস মামুন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সস্পাদক জুবায়েদ রিপন বক্তব্য দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধির বক্তব্যর বিরোধিতা করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন কানাই, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল নেতা শরীফসহ বেশ কয়েকজন তাদের দিকে তেড়ে যান। পরে পুলিশ ও উপস্থিত জনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কানাই বলেন, “আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছি আমরা। ৫ আগস্টের পর পুলিশকে আমরা শেল্টার দিয়ে কাজে ফিরিয়েছি আর পুলিশের প্রোগামে আমাদের বলা হয় না। আবার বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেই দুই দিনকার ছেলেপেলে।”

কামাল উদ্দিন বলেন, “মঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উঠিয়ে আমাদের সামনে বসিয়ে রাখা অপমানজনক। আবার এরা বিএনপির বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়। পুলিশকে আমি সহযোগিতা করেছি। অথচ আমাদের বলা হয়নি।”

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্যান্য থানার মতো কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট শহরের আমলাপাড়ায় সদর ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে থানার কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। এরপর পোড়া ভবন সংস্কারের কাজ শুরু হয়, যা সম্প্রতি শেষ হয়েছে।

সুধী সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিআইজি রেজাউল হক বলেন, “পুলিশের চাকরি করে সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা খুবই কঠিন। আল্লাহ যদি কাউকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেন, হয়তোবা তার দ্বারা সম্ভব। বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে অনেকগুলো মানুষকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।”

“সঙ্গত কারণে আমরা খুলনা রেঞ্জে কনসটেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টরদের লটারির মাধ্যমে পোস্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদন্নোতিও করা হবে সবকিছু বিবেচনা করে। বাংলাদেশ পুলিশের কেউ অপরাধ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায়, প্রতিষ্ঠানের দায় নয়,” বলেন তিনি।

জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দেওয়ার চেষ্টার কথা তুুলে ধরে রেজাউল হক বলেন, “এখন পর্যন্ত আপনারা যে সেবাটা চান, তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা যারা কাজ করছি, তাদের ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। একটু খেয়াল রাখবেন আমাদের ভুলটা ইনটেনশনালি নাকি কাজ করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে যে ভুল করছি সেটা। মানুষ হিসেবে সাধারণ ভুল হলে সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হয় না। আর যদি ইনটেনশনালি ভুল হয়, তাহলে আমাদের টলারেন্স জিরো।”

গণঅভ্যুত্থানে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত কত দূর এগিয়েছে, জানতে চাইলে খুলনার ডিআইজি রেজাউল হক বলেন, মামলাগুলো যে শুধু রেঞ্জ অফিস মনিটরিং করে তা নয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সও মনিটরিং করে। কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করি, আমাদের তদন্ত সুষ্ঠ ও সুন্দর হবে। যারা অপরাধী তাদের যেন বিচার হয়, সেটা মাথায় রেখে তদন্তে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।”

কোরবানির ঈদের পশুর চামড়া যাতে সীমান্ত দিয়ে পাচার না হয়, সেজন্য দৌলতপুর উপজেলার দিকে চামড়াবহনকারী যেকোনো পরিবহনকে আটকিয়ে পুলিশকে জানাতে বলেন তিনি।
কুষ্টিয়ায় দীর্ঘদিন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন অবস্থান করেছে- এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিল কি না, জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, “আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। পুলিশ সব সময় সব পারবে এমনটাও না। তবে যে সংস্থাই সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করুক না কেন, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাড়ির মালিকদের বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় সর্তকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর সুধী সমাবেশে যোগ দেন ডিআইজি রেজাউল হক।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র আম দ র সদস য ড আইজ

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রিকেট ম্যাচের দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা, আহত ২৭ নারী পুলিশ সদস্য

বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচের দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছিলেন নারী পুলিশ সদস্যের একটি দল। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের বহনকারী বাস একটি গাছে ধাক্কা দেয়। এতে বাসে থাকা ২৭ নারী পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া পুলিশলাইনসের ভেতর এই ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ জানায়, নগরের সাগরিকা এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচের দায়িত্ব পালনে যাচ্ছিলেন নারী পুলিশ সদস্যরা। তাঁদের বহনকারী বাস দামপাড়া পুলিশলাইনসের ভেতরে উঁচু স্থান থেকে ঢালু রাস্তায় নামার সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ সময় বাসে থাকা ২৭ পুলিশ সদস্য আহত হন।

ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। এ সময় আহত অনেক পুলিশ সদস্যকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখা যায়। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি বর্তমানে পুলিশ লাইন্সের ভেতরে রাখা হয়েছে। আহতদের সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক প্রথম আলোকে বলেন, আহত ২৭ জনের মধ্যে ১৪ জন দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে দুজন এখনো চিকিৎসাধীন। ১২ জন চিকিৎসা শেষে পুলিশ হাসপাতালে চলে যান। সেখানে বর্তমানে ২৫ জন চিকিৎসাধীন, তবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কেউ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্রিকেট ম্যাচের দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা, আহত ২৭ নারী পুলিশ সদস্য