কুষ্টিয়ায় ‘পোড়া থানা’র কার্যক্রম উদ্বোধনে হট্টগোল
Published: 31st, May 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার আয়োজনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের স্থানীয় নেতাদের হট্টগোল হয়।
শনিবার (৩১ মে) বিকালে কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে থানা চত্বরে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক। অতিথিদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
সুধী সমাবেশের অন্যান্যের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি আলমাস মামুন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সস্পাদক জুবায়েদ রিপন বক্তব্য দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধির বক্তব্যর বিরোধিতা করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন কানাই, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল নেতা শরীফসহ বেশ কয়েকজন তাদের দিকে তেড়ে যান। পরে পুলিশ ও উপস্থিত জনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কানাই বলেন, “আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছি আমরা। ৫ আগস্টের পর পুলিশকে আমরা শেল্টার দিয়ে কাজে ফিরিয়েছি আর পুলিশের প্রোগামে আমাদের বলা হয় না। আবার বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেই দুই দিনকার ছেলেপেলে।”
কামাল উদ্দিন বলেন, “মঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উঠিয়ে আমাদের সামনে বসিয়ে রাখা অপমানজনক। আবার এরা বিএনপির বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়। পুলিশকে আমি সহযোগিতা করেছি। অথচ আমাদের বলা হয়নি।”
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্যান্য থানার মতো কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট শহরের আমলাপাড়ায় সদর ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে থানার কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। এরপর পোড়া ভবন সংস্কারের কাজ শুরু হয়, যা সম্প্রতি শেষ হয়েছে।
সুধী সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিআইজি রেজাউল হক বলেন, “পুলিশের চাকরি করে সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা খুবই কঠিন। আল্লাহ যদি কাউকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেন, হয়তোবা তার দ্বারা সম্ভব। বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে অনেকগুলো মানুষকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।”
“সঙ্গত কারণে আমরা খুলনা রেঞ্জে কনসটেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টরদের লটারির মাধ্যমে পোস্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদন্নোতিও করা হবে সবকিছু বিবেচনা করে। বাংলাদেশ পুলিশের কেউ অপরাধ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায়, প্রতিষ্ঠানের দায় নয়,” বলেন তিনি।
জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দেওয়ার চেষ্টার কথা তুুলে ধরে রেজাউল হক বলেন, “এখন পর্যন্ত আপনারা যে সেবাটা চান, তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা যারা কাজ করছি, তাদের ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। একটু খেয়াল রাখবেন আমাদের ভুলটা ইনটেনশনালি নাকি কাজ করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে যে ভুল করছি সেটা। মানুষ হিসেবে সাধারণ ভুল হলে সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হয় না। আর যদি ইনটেনশনালি ভুল হয়, তাহলে আমাদের টলারেন্স জিরো।”
গণঅভ্যুত্থানে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত কত দূর এগিয়েছে, জানতে চাইলে খুলনার ডিআইজি রেজাউল হক বলেন, মামলাগুলো যে শুধু রেঞ্জ অফিস মনিটরিং করে তা নয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সও মনিটরিং করে। কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করি, আমাদের তদন্ত সুষ্ঠ ও সুন্দর হবে। যারা অপরাধী তাদের যেন বিচার হয়, সেটা মাথায় রেখে তদন্তে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।”
কোরবানির ঈদের পশুর চামড়া যাতে সীমান্ত দিয়ে পাচার না হয়, সেজন্য দৌলতপুর উপজেলার দিকে চামড়াবহনকারী যেকোনো পরিবহনকে আটকিয়ে পুলিশকে জানাতে বলেন তিনি।
কুষ্টিয়ায় দীর্ঘদিন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন অবস্থান করেছে- এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিল কি না, জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, “আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। পুলিশ সব সময় সব পারবে এমনটাও না। তবে যে সংস্থাই সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করুক না কেন, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাড়ির মালিকদের বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় সর্তকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর সুধী সমাবেশে যোগ দেন ডিআইজি রেজাউল হক।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র আম দ র সদস য ড আইজ
এছাড়াও পড়ুন:
জাপা-গণঅধিকার পরিষদের হামলা-পাল্টা হামলা, আহত ১৫
বরিশালে জাতীয় পার্টি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের হামলা ও পাল্টা হামলা হয়েছে। শনিবার (৩১ মে) বিকেলে নগরীর ফকিরবাড়ী রোড ও সদর রোডের সংযোগস্থলে এ হামলা করা হয়।
সংঘর্ষে জাতীয় পার্টি বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, গণঅধিকার পরিষদের বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক হাসানসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
তাদের মধ্যে সাতজনকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক হামলাকারীকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে নিসর্গ রিসোর্টে পেট্রোল বোমা হামলা
রংপুরে জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (৩১ মে) বিকেলে নগরীর ফকির বাড়ী রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করি। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আমরা নগরীর ফকির বাড়ী কার্যালয় থেকে সদর রোডের কাছাকাছি পৌঁছালে পেছন থেকে কিছু সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। তাৎক্ষণিক আমাদের নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের প্রতিহত করে এবং ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘হামলাকারীরা কে এবং কোন দলের তা জানি না। তবে কাদের উসকানিতে এবং কারা হামলা করেছে, তা জানতে হবে।’’
গণঅধিকার পরিষদের বরিশাল জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমীন বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টি নগরীতে মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ও উগ্র স্লোগান দিচ্ছিলেন। যে কারণে আমরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়।’’
তিনি আরো জানান, তাদের হামলায় গণঅধিকার পরিষদের বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক হাসান, গণঅধিকার পরিষদের মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদ সোহাগ ফরাজী, যুব অধিকার পরিষদের মিরাজসহ ১০-১২ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে সাতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, হামলার ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা একজনকে মারধর করে গুরুতর আহত করে পুলিশের কাছে দিয়েছে। তিনি বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ ঘটনায় আরো বেশ কয়েক জন বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/পলাশ/বকুল