বন্ধুরা, ধূমপানের মতো ক্ষতিকর বিষয়ে হয়তো তুমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছ; চেষ্টা করছ প্রাণপণে তা ছেড়ে দেওয়ার। কিছুতেই কিছু করতে পারছ না– এই তো? ব্যাপার না। চলো কীভাবে ধীরে ধীরে এই ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে তার কিছু বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি জানা যাক।
গভীর নিঃশ্বাস: ডিপ ব্রেথিং বা গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া হলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি টেকনিক। প্রতিবার যখন তোমার সিগারেট খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে, নিচের কাজটি তিনবার করবে– গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে ফুসফুসকে যতটুকু সম্ভব বায়ু দিয়ে পূর্ণ করো। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ো। ঠোঁট কিছুটা বন্ধ রেখেই শ্বাস ছাড়ো, যাতে তা আস্তে আস্তে বের হতে পারে। যখন তুমি নিঃশ্বাস ছাড়বে, চোখগুলো বন্ধ রাখো এবং তোমার চিবুক বা থুতনি ক্রমে বুকের দিকে নামিয়ে আনো। দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে ভাবো, সিগারেট খাওয়ার উত্তেজনা ধীরে ধীরে তোমার দেহ থেকে সরে যাচ্ছে। এটি একটি প্রাচীন টেকনিক। খুবই শক্তিশালী। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তুমি যে কোনো ধরনের মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। সিগারেট থেকে মুক্তি পেতে শুরুতে এ পদ্ধতি অনেকটা কাজে দেবে।
তরল গ্রহণ: প্রথম কয়েকদিন মাত্রাতিরিক্তভাবে পানি পান করো। অতিরিক্ত পানি পানের কারণে তোমার শরীরের ভেতর থেকে নিকোটিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত বস্তু তরলাকারে বেরিয়ে আসবে।
প্রথম সপ্তাহে যতটুকু সম্ভব চিনি, কফি, চা ও অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকো। চর্বি জাতীয় খাবার থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করো। আপেল ও গাজর জাতীয় ফল বেশি করে খেতে পারো।
ধ্বংস অনিবার্য: ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছ যত সিগারেট, তার সব ধ্বংস করে ফেলো।
মুখের ব্যস্ততা: মুখকে ব্যস্ত রাখার জন্য বিকল্প খাবার হিসেবে চুইংগাম, দারুচিনি বা আর্টিফিশিয়াল সিগারেট ব্যবহার করতে পারো। একটি জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ ধূমপায়ী এই আইডিয়াকে সমর্থন করেছে।
ব্যায়াম চর্চা: ভর্তি হতে পারো জিমে। যদি জিমে যেতে ইচ্ছে না করে তবে বাসা কিংবা বাড়ির ছাদের মতো কোনো জায়গা বেছে নিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করো। স্টিম বাথ নাও। বেশ লম্বা সময় ধরে জগিং করো।
নতুন শখের আশ্রয়: যোগব্যায়াম শুরু করো। দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করো। নতুন কোনো শখে নিজেকে জড়িয়ে ফেলো।
হাত ধরা: বন্ধুদের বা পরিবারের সবাইকে বলো তোমাকে সহযোগিতা করতে।
তাদের তোমার সামনে ধূমপান না করতে অনুরোধ করো।
নোট রাখা: যখনই ধূমপান করতে ইচ্ছে করবে, একটি খাতা নিয়ে বসো। পাশাপাশি দুটি পৃষ্ঠার একটিতে ধূমপান করার ১০টি কুফল এবং অন্য পৃষ্ঠায় ধূমপান না করার ১০টি সুফল লিখে ফেলো। u
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত