পুলিশের সুধী সমাবেশে হট্টগোল: বিএনপি নেতা বললেন ‘ছাত্রদের মঞ্চে উঠিয়ে আমাদের সামনে বসিয়ে রাখা অপমানজনক’
Published: 1st, June 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটপাট ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে দোতলা থানা ভবন পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অবশেষে সেই ভবন সংস্কার করে সেখানে পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে থানা চত্বরে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক।
সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক, নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি আলমাস মামুন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সস্পাদক জুবায়েদ রিপন প্রমুখ।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধির বক্তব্যের বিরোধিতা করে সমাবেশস্থলে হট্টগোল শুরু করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
একপর্যায়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন কানাই, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদএর নেতা শরীফসহ বেশ কয়েকজন তাঁদের দিকে তেড়ে যান। পরে পুলিশ ও উপস্থিত জনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে বিএনপি নেতা আল আমিন কানাই বলেন, ‘আন্দোলনে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেছি আমরা। ৫ আগস্টের পর পুলিশকে আমরা শেল্টার দিয়ে কাজে ফিরিয়েছি আর পুলিশের প্রোগামে আমাদের বলা হয় না। আবার বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয় দুই দিনকার ছেলেপেলে।’
এ ছাড়া কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মঞ্চে উঠিয়ে আমাদের সামনে বসিয়ে রাখা অপমানজনক। আবার এরা বিএনপি বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়। পুলিশকে আমি সহযোগিতা করেছি। ৫ আগস্ট আমি কামাল থানার ওসিকে বাঁচিয়েছি। লুট করা অস্ত্র উদ্ধার করে দিয়েছি। অথচ আমাদের বলা হয়নি।’
এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির কুমারখালীর প্রতিনিধি সদস্য আলমাস হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে সংগঠক হিসেবে পুলিশ দাওয়াত করেছিল। সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। বলেছি, ৫৪ বছর ধরে যারা এই দেশের পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে, আমি তাদেরও বিচার চাই। এ কথা বলা কি আমার সাংবিধানিক অধিকার নয়?’
আলমাস হাসান আরও বলেছেন, ‘ডিআইজিকে বলেছি, শহীদ পরিবারের কাছে আপনি গিয়ে সরি বলেন। কেননা, তাঁদের পরিবার জানুক, পুলিশ তাঁদের পরিবারের সদস্যদের গুলি করে মেরেছে।’
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্যান্য থানার মতো কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট শহরের আমলাপাড়ায় অবস্থিত সদর ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে থানার কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। এরপর পোড়া ভবন সংস্কারের কাজও শুরু হয়।
বদলি হবে লটারির মাধ্যমেসুধী সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ডিআইজি রেজাউল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা খুলনা রেঞ্জে কনস্টেবল থেকে সাবইন্সপেক্টরদের লটারির মাধ্যমে পোস্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদোন্নতিও করা হবে সবকিছু বিবেচনা করে। পুলিশের কেউ অপরাধ করলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত দায়, প্রতিষ্ঠানের দায় নয়।’
গণ–অভ্যুত্থানে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে রেজাউল হক বলেন, ‘মামলাগুলো যে শুধু রেঞ্জ অফিস মনিটরিং করে, তা নয়; পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মনিটরিং করে। এর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করি আমাদের তদন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। যারা অপরাধী, তাদের যেন বিচার হয়, সেটা মাথায় রেখে তদন্তে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
সম্প্রতি কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। ওই বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিল কি না, জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। পুলিশ সব সময় সব পারবে, এমনটাও নয়। তবে যে সংস্থাই সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করুক, পুলিশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ এ সময় বাড়ির মালিকদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক কম ট র ৫ আগস ট ব এনপ র আম দ র ড আইজ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হামলায় নিয়োগ পরীক্ষা পণ্ড, তিনজন আটক
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। চাঁদা না দেওয়ায় তারা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের। গতকাল শনিবার উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের নন্দীকুজা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এতে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযান চালিয়ে আলতাফ হোসেন, মাহবুর রহমান নাবিল ও রাসেল আলী নামে তিনজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, শনিবার সকালে নন্দীকুজা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা চলছিল। লিখিত পরীক্ষা শেষে অফিস কক্ষে ভাইভা নেওয়া হচ্ছিল চাকরিপ্রার্থীদের।
এ সময় নন্দীকুজা গ্রামের আলতাফ হোসেন, মাহবুর রহমান নাবিল, ফয়সাল হোসেন ও রাসেল আলী নামে চারজন লাঠিসোটা নিয়ে এসে হামলা চালিয়ে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদেরও লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় তারা অফিস কক্ষের আসবাব ও কাগজ নষ্ট করে। পরে সভাপতির নির্দেশনায় পরীক্ষা স্থগিত করলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা চলে যান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কয়েকজন তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তারা নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে হামলা চালিয়ে তাঁকে মারধরসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের লাঞ্ছিত করে। ফলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
একই তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুস সাত্তার। বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।