তিন সংস্করণের ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকুর রহিম এখন খেলছেন শুধু টেস্ট ক্রিকেট। বিদায় বলেছেন সাদা বলের দুই সংস্করণকেই। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই দুই অধিনায়কেরই ভবিষ্যৎ লক্ষ্য আন্তর্জাতিক কোচ হওয়া।
আজ বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে (বিএসজেএ) সাংবাদিকদের তথ্যটা জানিয়েছেন বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘আমি বিসিবিতে যোগ দেওয়ার আগেই আমার সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ যোগাযোগ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক কোচ হতে চায়।’

২০২১ সালের জুলাইয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলা মাহমুদউল্লাহ জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবরে খেলেছেন সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি।
মাহমুদউল্লাহর মতো মুশফিকেরও শেষ ওয়ানডে রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে। শেষ টি–টোয়েন্টি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে টেস্ট ক্রিকেট এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য খেলছেন দুজনই।


বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলে খ্যাত পাঁচ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। তাঁদের মধ্যে প্রথম দুজন রাজনীতিতে জড়ানোয় তাঁদের ভবিষ্যৎ–ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়, যদিও এই মুহূর্তে তাঁরা ঠিক রাজনীতিতেও নেই। গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁদের জীবন অনেকটাই বদলে গেছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া জাতীয় দলের আরেক সাবেক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও দেখা যেতে পারে ওয়ানডে দলের সাবেক এই অধিনায়ককে।
বাকি ছিলেন কেবল মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এলে ভবিষ্যতে তাঁরা ক্রিকেটে সম্পৃক্ত থাকবেন কি না, থাকলে সেটা কীভাবে—এর আগে জানা যায়নি সেসব। জানা যায়নি তাঁদের অন্য কোনো পরিকল্পনার কথাও।
বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল আজ সেই অজানা কথাটাই বলে জানালেন নিজের একটা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও। ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমেই কোচদের ট্রেনিং এডুকেশন প্রোগ্রাম চালানোর ইচ্ছা তাঁর।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস নয়

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। সেই রক্ষাঢাল ধ্বংস করে গুটিকয় ব্যক্তি যখন গোটা জনগোষ্ঠীকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, এর থেকে ভয়াবহ নৈরাজ্যের বার্তা আর কী হতে পারে। কেননা প্রভাবশালী নামে পরিচিত এসব ব্যক্তি এই অপরাধ যে সরকারি সব কর্তৃপক্ষের অজান্তে করেছেন, তা তো নয়। সবার চোখের সামনেই খননযন্ত্র এনে বন সাবাড় করে মাটি খুঁড়ে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বরগুনার তালতলী উপজেলায় আন্ধারমানিক নদের দুই তীরে প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধের ঢালে ৫০টির বেশি ঘের গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এতে শুধু ম্যানগ্রোভ বনই উজাড় হচ্ছে না, সঙ্গে বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, বাঁধের ২০ ফুটের মধ্যে পুকুর, দিঘি বা ঘের নির্মাণ করা যাবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই আইন বাস্তবায়নে বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ভূতটা শর্ষের ভেতরেই বিদ্যমান? ঘের তৈরির সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় স্থানীয় মানুষেরা কিছু বলতে পারেন না। তাঁদের অভিযোগ, নেপথ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

যদিও বন বিভাগ যথারীতি দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু বন বিভাগের তথ্যই প্রমাণ করছে যে তারা যে শম্বুকগতিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে প্রক্রিয়াটা শেষ হতে অনন্তকালও লেগে যেতে পারে! কেননা, ছয়জন ঘেরমালিকের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেছে আর কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

বন উজাড় করে ঘের কেটে যাঁরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছেন, তাঁদের যুক্তি হলো জমি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন। আবার কেউ যুক্তি দিয়েছেন, সরকারের কাছ থেকে তাঁরা বন্দোবস্ত পেয়েছেন। কিন্তু নদীর চরের জমি কীভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা যেখানে জড়িত, সেখানে আইনি যুক্তির বাইরে আর কোনো যুক্তিতর্ক কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

আমরা মনে করি, বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণেই তালতলীর উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রভাবশালীরা যে দলের হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্ধারমানিক নদের ঢালের অবৈধ ঘেরগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করে সেখানকার ভূগঠনকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া জরুরি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ