সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ মামুন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় শাখা ছাত্রদলের কয়েকটি গ্রুপকে একচেটিয়া আসন বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি কলেজ প্রশাসন শহীদ মামুন ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা প্রকাশের পর থেকেই একই নাম একাধিকবার আসা, ছাত্রদলকে বেশিরভাগ আসন দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে আসন বণ্টন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেধার ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। কলেজের ইতিহাস বিভাগ থেকে হলের আসন বরাদ্দের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা হল প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। তবে কাকতালীয়ভাবে হলের চূড়ান্ত তালিকায় ইতিহাস বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থীর নাম আসে।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে নামাজের কক্ষ নিয়ে বিতর্ক

কৃষকের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীর অবস্থান কর্মসূচি

ছাত্রদলের একটি সূত্রে থেকে জানা গেছে, হলের আসন বরাদ্দের প্রকাশিত তালিকায় কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্যানেল পেয়েছে ৮০টি, সদস্য সচিব সেলিম রেজার প্যানেল পেয়েছে ১২০টি আসন। এছাড়া সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ মোল্লা গ্রুপ পেয়েছে ৪৫টি এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক হামদে রাব্বি আকরাম গ্রুপ পেয়েছে ১৫টি আসন। এছাড়াও আরো কয়েকটি গ্রুপ অল্প করে আসন বরাদ্দ পেয়েছে।

এদিকে, আসন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার (৩০ মে) তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের জলতরঙ্গ ইউনিটের নেতাকর্মীরা আসন বেশি নেওয়ার অভিযোগে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজার অনুসারীদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়। এছাড়াও হলের আসন বণ্টনের অসংগতির অভিযোগ এনে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী সাইফুল ইসলাম ও মিরাজ আল ওয়াসির অনুসারীরা।

পরে হলের আসন বরাদ্দ নিয়ে মারামারি জেরে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজে যেতে নিষেধ করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ।

গণিত বিভাগের শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “২০২৩-২৪ সেশনের অনেক শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণ করা হয়নি, অথচ তারা হলে আসন পেয়েছে। যাদের আসন দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেককেই আমি মৌখিক পরীক্ষা দিতে দেখিনি। আবার যাদের মৌখিক পরীক্ষা দিতে দেখেছি, তাদের অধিকাংশেরই নাম নেই চূড়ান্ত তালিকায়। এটি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক তালিকা।”

ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল রহমান বলেন, “বিভাগ থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিছু আসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে এটা না বোঝা যায়, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনকে বেশি দেওয়া হয়েছে। হলের আসন বরাদ্দের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল না।”

কীভাবে বিভাগ থেকে পাঠানো নির্ধারিত তালিকার বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের নামে হলে আসন বরাদ্দ হলো- এ নিয়ে কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেনি হল সুপার কাজী মোহাম্মদ আল নূর।

তিনি বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বিবেচনায় কাউকে আসন দেইনি, আমরা ছাত্রদের আসন দিয়েছি। সেখানে কেউ ছাত্রদলের সদস্য আছে কিনা, তা জানি না।”

আবেদন ছাড়া আসন পেল কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সবাই আবেদন করেছে। সবার আবেদন রয়েছে।”

আসন বরাদ্দের তালিকায় কয়েকটি নাম একাধিকবার আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা যথেষ্ট চাপে ছিলাম, সময়ও কম পেয়েছি। তাই হয়তো এমনটি হয়েছে। তবে এসব দ্রুত সংশোধন করা হবে।”

আরেক হল সুপার আবু জাফর মুহাম্মদ মাসুদ উজ্জামান বলেন, “আমার কাছে যেসব আবেদন আসছে, সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে আসন দিয়েছি। এখন কে ছাত্রদল করে না করে, ওটা আমি দেখতে যাইনি। সে হিসেবে আসন সিংহভাগ কেনো, এর বেশিও পেতে পারে যদি তারা আবেদন করে থাকে এবং আসন পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করে থাকে। আমার জানা মতে, আসন বণ্টনে কোনো অস্বচ্ছতা হয়নি।”

এই বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মঞ্জুমা হক বলেন, “আমিও এমন কিছু শুনেছি। তবে এখনো লিখিত কোনো কাগজপত্র দেখিনি। যখন এই তালিকা বিভাগ থেকে পাঠানো হয়, তখন আমি বিভাগীয় প্রধান ছিলাম না। বিষয়টি জানার জন্য কলেজ খুললে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব, কেন এমনটি হয়েছে।”

কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বেশি আসন নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। আসন আমি দেওয়ার কে? আসন দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।”

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন বলেন, “নিয়মিত ছাত্ররা আসন পেয়েছে এবং কলেজ প্রশাসন আসন দিয়েছে। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যারা যোগ্য, তারা আসন পেয়েছে। অযথা ভূয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করলে কি করার আছে?”

সার্বিক বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

ছদরুদ্দীন আহমেদ বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই। তবে খোঁজ নিচ্ছি আসলে এমন কিছু ঘটেছে কি না।”

ঢাকা/হাফছা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল র বর দ দ দ র জন ত ক কল জ র আসন প সদস য আসন দ

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ