তিতুমীর কলেজ: হলের অধিকাংশ আসন ছাত্রদলের দখলে
Published: 1st, June 2025 GMT
সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ মামুন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় শাখা ছাত্রদলের কয়েকটি গ্রুপকে একচেটিয়া আসন বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি কলেজ প্রশাসন শহীদ মামুন ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা প্রকাশের পর থেকেই একই নাম একাধিকবার আসা, ছাত্রদলকে বেশিরভাগ আসন দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে আসন বণ্টন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেধার ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। কলেজের ইতিহাস বিভাগ থেকে হলের আসন বরাদ্দের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা হল প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। তবে কাকতালীয়ভাবে হলের চূড়ান্ত তালিকায় ইতিহাস বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থীর নাম আসে।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে নামাজের কক্ষ নিয়ে বিতর্ক
কৃষকের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীর অবস্থান কর্মসূচি
ছাত্রদলের একটি সূত্রে থেকে জানা গেছে, হলের আসন বরাদ্দের প্রকাশিত তালিকায় কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্যানেল পেয়েছে ৮০টি, সদস্য সচিব সেলিম রেজার প্যানেল পেয়েছে ১২০টি আসন। এছাড়া সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ মোল্লা গ্রুপ পেয়েছে ৪৫টি এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক হামদে রাব্বি আকরাম গ্রুপ পেয়েছে ১৫টি আসন। এছাড়াও আরো কয়েকটি গ্রুপ অল্প করে আসন বরাদ্দ পেয়েছে।
এদিকে, আসন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার (৩০ মে) তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের জলতরঙ্গ ইউনিটের নেতাকর্মীরা আসন বেশি নেওয়ার অভিযোগে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজার অনুসারীদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়। এছাড়াও হলের আসন বণ্টনের অসংগতির অভিযোগ এনে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী সাইফুল ইসলাম ও মিরাজ আল ওয়াসির অনুসারীরা।
পরে হলের আসন বরাদ্দ নিয়ে মারামারি জেরে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজে যেতে নিষেধ করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ।
গণিত বিভাগের শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “২০২৩-২৪ সেশনের অনেক শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণ করা হয়নি, অথচ তারা হলে আসন পেয়েছে। যাদের আসন দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেককেই আমি মৌখিক পরীক্ষা দিতে দেখিনি। আবার যাদের মৌখিক পরীক্ষা দিতে দেখেছি, তাদের অধিকাংশেরই নাম নেই চূড়ান্ত তালিকায়। এটি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক তালিকা।”
ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল রহমান বলেন, “বিভাগ থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিছু আসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে এটা না বোঝা যায়, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনকে বেশি দেওয়া হয়েছে। হলের আসন বরাদ্দের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল না।”
কীভাবে বিভাগ থেকে পাঠানো নির্ধারিত তালিকার বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের নামে হলে আসন বরাদ্দ হলো- এ নিয়ে কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেনি হল সুপার কাজী মোহাম্মদ আল নূর।
তিনি বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বিবেচনায় কাউকে আসন দেইনি, আমরা ছাত্রদের আসন দিয়েছি। সেখানে কেউ ছাত্রদলের সদস্য আছে কিনা, তা জানি না।”
আবেদন ছাড়া আসন পেল কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সবাই আবেদন করেছে। সবার আবেদন রয়েছে।”
আসন বরাদ্দের তালিকায় কয়েকটি নাম একাধিকবার আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা যথেষ্ট চাপে ছিলাম, সময়ও কম পেয়েছি। তাই হয়তো এমনটি হয়েছে। তবে এসব দ্রুত সংশোধন করা হবে।”
আরেক হল সুপার আবু জাফর মুহাম্মদ মাসুদ উজ্জামান বলেন, “আমার কাছে যেসব আবেদন আসছে, সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে আসন দিয়েছি। এখন কে ছাত্রদল করে না করে, ওটা আমি দেখতে যাইনি। সে হিসেবে আসন সিংহভাগ কেনো, এর বেশিও পেতে পারে যদি তারা আবেদন করে থাকে এবং আসন পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করে থাকে। আমার জানা মতে, আসন বণ্টনে কোনো অস্বচ্ছতা হয়নি।”
এই বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মঞ্জুমা হক বলেন, “আমিও এমন কিছু শুনেছি। তবে এখনো লিখিত কোনো কাগজপত্র দেখিনি। যখন এই তালিকা বিভাগ থেকে পাঠানো হয়, তখন আমি বিভাগীয় প্রধান ছিলাম না। বিষয়টি জানার জন্য কলেজ খুললে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব, কেন এমনটি হয়েছে।”
কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বেশি আসন নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। আসন আমি দেওয়ার কে? আসন দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন বলেন, “নিয়মিত ছাত্ররা আসন পেয়েছে এবং কলেজ প্রশাসন আসন দিয়েছে। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যারা যোগ্য, তারা আসন পেয়েছে। অযথা ভূয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করলে কি করার আছে?”
সার্বিক বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
ঢাকা/হাফছা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল র বর দ দ দ র জন ত ক কল জ র আসন প সদস য আসন দ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন ভারতীয় এজেন্ডা, এমনটা প্রচার করা বিপজ্জনক: জোনায়েদ সাকি
নির্বাচন ভারতের এজেন্ডা, এমনটা প্রচার করা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন দরকার।’
আজ রোববার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম নির্বাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ‘অবিলম্বে বিচার–সংস্কার–নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করো’ শীর্ষক আলোচনা হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনা সরকার যে ফ্যাসিস্ট রোলার চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে দেশে ঐক্য গড়ে উঠেছে। সেখানে নির্বাচন ভারতের এজেন্ডা, এমন কথা বলে জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে ভারতের পারপাস সার্ভ করা হচ্ছে। এমন প্রচার ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করতে সাহায্য করবে।
সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যাঁরা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন, এখন তাঁরা নতুন বন্দোবস্ত করে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ফ্যাসিজমের থেকে যাওয়া শিকড়ে পানি ঢেলে তাঁরা আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছেন।
গণ–অভ্যুত্থানে পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরেছে বলে মন্তব্য করেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, কোনো অভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতারা এতটা বিতর্কিত হননি, যতটা এখন হচ্ছেন। তরুণেরা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন, যা লজ্জাজনক।
একটি দল ছাড়া কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না, প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য উল্টোভাবে সত্য বলে মন্তব্য করেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, জাপানে প্রধান উপদেষ্টা যে কথা বলেছেন, সেটা তথ্যভিত্তিক নয়।
সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা প্রমুখ। সভার শুরুতে আবদুস সালাম স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।