উৎসব উদযাপনে চাপ বেড়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্কে। ঠিকঠাক কথা বলা যেন কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে নেটওয়ার্ক দুর্বলতা সুস্পষ্ট হয়ে বোঝা যায়। কলড্রপ বা ফ্রিকোয়েন্সি না পাওয়া এখন নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার অংশ। কথোপকথনে এপাশে যখন শুনতে পান না, আবার ওপাশে থাকা আলাপচারী অনেক সময় স্পষ্ট শুনতে পান না। কিছু পরামর্শ মেনে চললে নেটওয়ার্ক অভিজ্ঞতা অনেকাংশে ভালো হতে পারে। হঠাৎ করেই বিশেষ জায়গার, যেমন– রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড বা কোরবানির হাটে গ্রাহকের চাপ বেড়ে গেলে বা গ্রামাঞ্চলে খারাপ নেটওয়ার্কের কারণে কথোপকথন সুস্পষ্ট শোনা যায় না।
কণ্ঠ ভেঙে যায়।
অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন হোক; প্রায় সব ফোনেই এমন ইস্যুর মুখোমুখি হতে হয়। তুলনামূলক দুর্বল সিগন্যালের কারণে এমনটা হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েকটি সহজ কৌশল মেনে চললে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ইস্যুতে
কিছুটা সুফল পাওয়া যায়।
বিশেষ মোড অন-অফ
প্রথমেই এয়ারপ্লেন মোড অন করে অফ করে নিতে হবে। অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন– দুই ঘরানার সিস্টেমে সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি এটি। ফলে দুর্বল নেটওয়ার্ক অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়ে যায়। ন্যূনতম ১৫ সেকেন্ডের জন্য এয়ারপ্লেন মোড অন করে রাখা প্রয়োজন। তারপর আবার অফ করলে যে অবস্থানে রয়েছেন, সে অঞ্চলের মোবাইল টাওয়ার খোঁজার কাজ করবে। অনেক সময়ে এমন পদ্ধতি মেনে নেটওয়ার্ক ইস্যুর সমাধান পাওয়া যায়।
প্রয়োজনে নেটওয়ার্ক সেটিংস
ডিভাইসের নেটওয়ার্ক সেটিংস রিস্টার্ট করে নিতে হবে। যখন ডিভাইসে এক থেকে দুই দাগ সিগন্যাল দৃশ্যমান হয়, ওই সময়ে একবার পুরো নেটওয়ার্ক সেটিংস খুলে তা রিস্টার্ট করার প্রয়োজন হবে। খেয়াল রাখবেন, এমনটা করলে সংরক্ষিত থাকা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড, পার্সোনালাইজড সেটিংস– সবই মুছে যাবে। কিন্তু ডিভাইসের টাওয়ার
খোঁজার প্রচেষ্টা আবার নতুন করে শুরু হলে তা আশপাশে নেটওয়ার্কের ক্ষমতাকে কিছুটা শক্তিশালী করবে।
থ্রিজি, না ফোরজি
ডিভাইসে ক্যারিয়ারের সেটিংস বদলের প্রয়োজন হতে পারে। স্থানীয়ভাবে অনেক জায়গায় থ্রিজি বা ফোরজি পরিষেবার তারতম্য হতে পারে। কিন্তু ডিভাইসে যে ক্যারিয়ার রয়েছে, মানে যে ধরনের স্থানীয় অপারেটরের পরিষেবার মধ্যে রয়েছেন, সেখানে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সির খোঁজে ডিভাইস অবিরাম প্রচেষ্টায় থাকে। এতে তার ব্যাটারি ও র্যামের ওপর বাড়তি চাপের কারণে ডিভাইস নেটওয়ার্ক সিগন্যালের দুর্বল অংশে পৌঁছে যায়। সব সময় ডিভাইসের ক্যারিয়ার সেটিংস সময়োপযোগী রাখা বিশেষ প্রয়োজন। অপারেটর অনেক সময় মেসেজের মাধ্যমে সেটিংস অপশন করণীয় প্রেরণ করে, তা মেনে চলা শ্রেয়। ডিভাইসে থাকা সব সফটওয়্যার আপডেট থাকলে নেটওয়ার্কে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
ভ্রমণে পূর্ণ সিগন্যাল
অনেক সময় এয়ারপ্লেন মোড অন-অফ করে সুফল পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ফোনকে একবার রিস্টার্ট করা প্রয়োজন। রিস্টার্ট হলে অনেক সময় টাওয়ারজনিত সমস্যা তাৎক্ষণিক ও প্রাথমিকভাবে সুরাহা হয়ে যায়। ফলে পূর্ণ সিগন্যাল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। ডিভাইস বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক দৃশ্যমান সমস্যা রিস্টার্ট করা থেকেই সমাধান হয়ে যায়। ভ্রমণে ডিভাইস অনেক সময় হুট করেই ধীরগতির হয়ে যায়।
হ্যাং হয়ে গেলেও ফোনকে কিছুক্ষণ পুরোপুরি বন্ধ রেখে আবার সচল করা ভালো। ফলে ফোনের নিজস্ব সফটওয়্যার নিজে থেকেই রিবুট হয়। অভ্যন্তরীণ সমস্যা চিহ্নিত করে রিপোর্ট পাঠায় ডিভাইস নির্মাতার কাছে।
পুরোনো সিমকার্ড বদল
যদি ব্যবহৃত ফোন বেশ পুরোনো হয়, তাহলে সিম ট্রে খুলে সিমকার্ড বের করে নরম কাপড় দিয়ে মুছে আবার তা ফোনে প্রবেশ করাতে হবে। টানা পুরোনো সিম ব্যবহার করা উচিত নয়। অপারেটরের দেওয়া নতুন সিম ব্যবহার করা উচিত। কারণ, অপেক্ষাকৃত পুরোনো সিমকার্ডের নেটওয়ার্ক ধারণ সক্ষমতা সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়। নতুন আসা সিমকার্ড টাওয়ার সিগন্যাল ভালো রিসিভ করে। ভ্রমণে হুট করে নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে উল্লিখিত পরামর্শ সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
অনেক সময় স্থানীয় অপারেটরের নেটওয়ার্ক দুর্বলতার কারণে এমন সমস্যায় পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন কিছু করার থাকে না। মাঝেমধ্যে ব্যবহৃত অ্যাপ দিয়ে বা থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নিজের ফোনের নেটওয়ার্ক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স ট র ট কর ন টওয় র ক স র ন টওয় র ক অন ক সময় ম ড অন দ র বল ব যবহ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত