যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে একদল বিক্ষোভকারীর ওপর পেট্রল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ফিলিস্তিনের গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ করছিলেন। এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-এফবিআই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এফবিআই প্রধান ক্যাশ প্যাটেল বলেন, ‘আমরা কলোরাডোর বোল্ডারে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে অবগত এবং ঘটনাটির আদ্যোপান্ত তদন্ত করে দেখছি।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত একদল লোকের দিকে ঘরোয়াভাবে তৈরি মলোটভ ককটেল (পেট্রল বোমা) সদৃশ কিছু ছুড়ে মারেন এক ব্যক্তি।

বিক্ষোভকারীদের ওপর এটি সন্ত্রাসী হামলা ছিল কি না—  এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্ডার পুলিশপ্রধান স্টিভ রেডফার্ন এ ঘটনার পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল তা নিয়ে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার কিছু আগে হামলার ঘটনাটি ঘটে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গায়ে জামা না থাকা এক ব্যক্তি দুই হাতে স্বচ্ছ স্প্রে বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর তাঁর সামনে ঘাসে আগুন জ্বলছে।

ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘জায়নবাদীরা নিপাত যাক’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘তারা খুনি’। লাল টি-শার্ট পরা কয়েকজনের দিকে তাকিয়ে তিনি কথাগুলো বলছিলেন, যাঁরা মাটিতে পড়ে থাকা একজনের শুশ্রূষা করছিলেন।

আরও পড়ুনরাফায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৩০১৬ ঘণ্টা আগে

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে জানান বোল্ডার পুলিশপ্রধান স্টিভ রেডফার্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে পৌঁছানোর পর একাধিক আহত ব্যক্তিকে দেখতে পাই, যাঁদের শরীরে আগুনে পোড়া ও অন্যান্য ধরনের জখমের চিহ্ন ছিল।’

স্টিভ রেডফার্ন বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ তাৎক্ষণিক ওই সন্দেহভাজনের মুখোমুখি হয়। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তাঁকে আটক করা হয়েছে

আরও পড়ুনপ্রতি ২০ মিনিটে গাজায় একটি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে: জাতিসংঘ৩১ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ