কিশোরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্টের গর্তে জমে থাকা পানিতে ডুবে ওবায়দুল্লাহ্ (৪) ও ফাহাদ হোসেন (৫) নামে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সম্পর্কে তারা মামাত-ফুফাত ভাই।

রবিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার উত্তর মোল্লাপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ওবায়দুল্লাহ্ উত্তর মোল্লাপাড়া গ্রামের মমিন মিয়ার ছেলে। ফাহাদ হোসেন জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া এলাকার সৌদি প্রবাসী মকবুল হোসেনের ছেলে। 

স্বজনরা জানায়, রবিবার বিকালে বাড়ির উঠানে খেলা করছিল ওবায়দুল্লাহ্ ও ফাহাদ। কোন এক সময় স্বজনদের চোখের আড়ালে খেলতে খেলতে বাড়ির পাশে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টের গর্তে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে পড়ে যায় তারা। তারপর বিকেল থেকে কয়েক ঘণ্টা খোঁজাখুজির পর সন্ধ্যায় বেজমেন্টের গর্তে ভাসমান অবস্থায় ওবায়দুল্লাহ্ ও ফাহাদকে দেখতে পায় স্থানীয়রা। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

দুটি কোমলমতি শিশুর এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত ফাহাদের মামা নওফেল বলেন, ‘‘আমার বোন সোমা আক্তার পাকুন্দিয়া থাকে। তার স্বামী মকবুল হোসেন সৌদি প্রবাসী। ঈদ উপলক্ষ্যে আজকে কিশোরগঞ্জে শহরে ব্যাংকে টাকা তুলতে এসেছিলো। ব্যাংক থেকে টাকা তোলা শেষে পরে আমাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু এরই মধ্যে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। ওর দুটি বাচ্চা ছোট ছেলেটি ঘুমিয়ে ছিল। আর ফাহাদ আমার বড় ভাই মমিনের ছেলের সঙ্গে খেলতে খেলতে এমন দুর্ঘটনার শিকার হলো।’’  

এসময় তিনি নবনির্মিত বাড়ির মালিককে দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘‘পাকুন্দিয়ার চরকাওনার স্বপন মিয়া এই বাসাটি করাচ্ছেন। তিনি রাস্তার পাশে কোনরকম নিরাপত্তা বেষ্টনি না দিয়েই কাজ করাচ্ছেন।আর এ কারণেই আজকে আমাদের পরিবারের দুটি নাবালক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।আমরা পুলিশের কাছে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি।’’  

এদিকে শিশু ওবায়দুল্লাহ’র মা মরিয়ম আক্তার প্রিয় সন্তানের মৃত্যুতে বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন।তার আতর্নাদে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। একটু স্বাভাবিক হলে তিনি জানান, প্রায় আটবছর পর তার এই সন্তানটির জন্ম হয়। খুব আদরে লালন-পালন করেছেন। সবসময় চোখে চোখেই রাখতেন। কিন্তু আজ কেন তার চোখের আড়ালে এমন হলো, এটা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এখনও তিনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী।কিন্তু কোনভাবেই তাকে শান্ত করা যাচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ্ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দুর্ঘটনার স্থানের যাবতীয় তথ্য আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা/রুমন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ